গ্রাহকের খরচ বাড়বে চালকের আয় কমবে

>আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উবার, পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করেছে সরকার। এতে এ ধরনের সেবা নিতে সাধারণ মানুষের খরচ বেড়েছে। এ সেবার সমস্যা-সম্ভাবনা ও অন্যান্য দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন দেশীয় রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হুসেইন এম ইলিয়াস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশরাফুল ইসলাম
হুসেইন এম ইলিয়াস
হুসেইন এম ইলিয়াস

প্রথম আলো: পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সেবা ঢাকায় খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ সেবার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?

হুসেইন ইলিয়াস: পাঠাওয়ের মতো সেবা বাংলাদেশে চালু হয়েছে দেড় বছরের কিছু বেশি সময়। সেবা খাত হিসেবে এটি খুবই নতুন। ঢাকা শহরে গণপরিবহনব্যবস্থা শক্তিশালী নয়। পাবলিক বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো গণপরিবহন অতটা সহজলভ্য নয়। এ কারণেই পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সেবা খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে। একেবারে নতুন এ সেবার ওপর এ বছর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আমরা বলছি না যে ভ্যাট ও কর দেব না। কিন্তু সব দেশেই একটি নতুন খাত গড়ে ওঠার জন্য কিছুটা সময় দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও ই-কমার্স সেবার ওপর ভ্যাট নেই। এ হিসেবে পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সেবাকে আরেকটু সময় দেওয়া যেত।
প্রথম আলো: ভ্যাট আরোপের ফলে এ সেবার ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে?
হুসেইন ইলিয়াস: ভ্যাট আরোপের ফলে সেবা নেওয়ার খরচ বাড়বে। কারণ, গ্রাহককেই এই অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হবে। এর ফলে আমাদের মাধ্যমে যাঁরা সেবা দেন তাঁদের আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, রাইড শেয়ারিং সেবার বাজারটি খুবই মূল্য সংবেদনশীল। যাঁরা পাবলিক বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো যানবাহনে চলাফেরা করেন, তাঁরাই মূলত রাইড শেয়ারিং সেবা নেন। তাই মূল্য সামান্য বাড়লেও এর নেতিবাচক প্রভাব গ্রাহকের ওপর পড়বে। গ্রাহকেরা যদি সেবা কম নেন তার প্রভাব পড়বে পাঠাও চালকদের ওপর। এতে তাঁদের আয়ও কমে যাবে। 

প্রথম আলো: পাঠাওয়ে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চালিয়ে কেমন আয় করা সম্ভব?
হুসেইন ইলিয়াস: পাঠাওয়ের মাধ্যমে একজন চালক মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। বাংলাদেশের অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও অনেকে এত বেতন পান না। তবে একজন চালক কতটা সময় চালাবেন তার ওপর আয় ওঠা-নামা করে। বর্তমানে পাঠাওয়ের নিবন্ধিত চালকের সংখ্যা ৪০ হাজার। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বর্তমানে পাঠাও সেবা চালু আছে। দেশের আরও কয়েকটি শহরে এ সেবা চালুর ইচ্ছা আমাদের আছে।
প্রথম আলো: রাইড শেয়ারিং সেবার মূল্য ও মান নিয়ে গ্রাহকদের বেশ কিছু অভিযোগ শোনা যায়। এ বিষয়ে কী বলবেন?
হুসেইন ইলিয়াস: সমস্যা হচ্ছে, এ সেবায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। ঢাকার মতো একটি বিশাল শহরে সেবা দেওয়ার জন্য যত চালক প্রয়োজন তা নেই। আবার এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় ঢাকায় মোটরসাইকেল ও গাড়ির সংখ্যাও কম। তাই সেবা দিতে গিয়ে কিছু সমস্যা যে হয় না সেটি আমি বলব না। আমরা এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি।
প্রথম আলো: রাইড শেয়ারিং সেবা পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানির অভিযোগ শোনা যায়। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
হুসেইন ইলিয়াস: শুরুতে এ বিষয়ে কিছুটা সমস্যায় আমাদের পড়তে হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আমরা এখন যৌথভাবে কাজ করছি। তাই হয়রানি করার মতো বিষয় এখন নেই বললেই চলে। সম্প্রতি রাইড শেয়ারিং সেবার জন্য বিআরটিএ একটি নীতিমালাও চূড়ান্ত করেছে।
প্রথম আলো: পাঠাওয়ে বিদেশি বিনিয়োগের কী অবস্থা?
হুসেইন ইলিয়াস: পাঠাওয়ে চলতি বছর ইন্দোনেশিয়ার রাইড শেয়ারিং কোম্পানি গো-জেক ১ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। গো-জেক ইন্দোনেশিয়ায় একই ধরনের সেবা দেয়, তাদের ৯ লাখ চালক আছে। নতুন এ বিনিয়োগ পাঠাওয়ের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে।
প্রথম আলো: পাঠাও নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
হুসেইন ইলিয়াস: চালকদের আয় কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, এ বিষয়ে আমরা এখন কাজ করছি। সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যার সময় পাঠাও সেবার চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। দিনের অন্য সময়ে বিভিন্ন সেবা দিয়ে যাতে চালকেরা আয় করতে পারেন সে জন্য চেষ্টা চলছে।