জুনে এডিপির ৫৮ হাজার কোটি টাকা খরচ!

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে গতানুগতিক ধারাবাহিকতাই চলছে। অন্যবারের মতো এবারও বছরের শেষ দিকে এসে মূল এডিপির আকার কাটছাঁট করা হয়েছে। আবার সেই সংশোধিত এডিপিও কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) খরচ হয়েছে ৯৮ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। আর শেষ এক মাসে কিনা খরচ করতে হবে ৫৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা।
শুধু চলতি জুন মাসে যে টাকা খরচ করতে হবে, তা দিয়ে দুটি পদ্মা সেতু তৈরির খরচ মেটানো যাবে।
সংশোধিত এডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিদিন ১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা খরচ করতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হিসাবমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সংশোধিত এডিপির ৬২ দশমিক ৮১ শতাংশ বা ৯৮ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গতবার একই সময়ে এই হার ছিল ৬৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।

আইএমইডি শুধু এডিপির কত টাকা খরচ হলো, সেই হিসাব ধরেই এডিপি বাস্তবায়নের চিত্রটি তুলে ধরে। বাস্তবে অনেক সময় প্রকল্পের কাজ খরচের তুলনায় বেশি হয়। কিন্তু ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয় না বলেই খরচের হিসাবে আসে না।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শুরুতে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়। পরে তা সংশোধন করে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
এদিকে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এই বিষয়ে সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই দেখা যায়, প্রথম নয় মাসে ৪০-৪৫ শতাংশের মতো এডিপি বাস্তবায়িত হয়। আর শেষের দুই মাসে ৩০-৩৫ শতাংশ টাকা খরচ হয়। এতে কাজের গুণগত মান থাকে না।
এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, বড় আকারের এডিপিতে অগ্রাধিকার বিবেচনা না করেই অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়। এর ফলে সব প্রকল্পের বাস্তবায়নের সময় বাড়ে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে খরচের মাত্রা।

চলতি অর্থবছরের ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের সংশোধিত বরাদ্দের অর্ধেক খরচ করতে পারেনি। এই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর খরচ বরাদ্দের আড়াই থেকে পঞ্চাশ শতাংশের মধ্যে। এই তালিকায় শীর্ষে থাকা জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ২টি প্রকল্পে সংশোধিত এডিপিতে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। ১১ মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ৪১ লাখ টাকা।

এ তালিকার অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো রেলপথ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, অর্থ বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।