জাহাজ থেকে পণ্য সরাসরি গুদামে

>
  • অতীতে যারা আমদানি-রপ্তানি স্বচ্ছতার সঙ্গে করেছে তারা পাবে এই সুযোগ
  • সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরেও মিলবে একই সুবিধা

আমদানি করা পণ্য আর বন্দরে পড়ে থাকবে না। জাহাজ থেকে খালাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পণ্য সরাসরি আমদানিকারকের নিজস্ব গুদামে চলে যাবে। শুল্ক কর্মকর্তারা সেখানেই পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। আমদানিকারককে পণ্য খালাস করতে কাগজপত্র নিয়ে শুল্ক দপ্তরের টেবিলে টেবিলে দৌড়াতে হবে না। দুই পক্ষের সব যোগাযোগ হবে ই-মেইলে। স্বল্পতম সময়ে পণ্য খালাস করা হবে।
নতুন ধরনের এই ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এটির নাম অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে সম্প্রতি একটি বিধিমালাও জারি করা হয়েছে। অতীতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে করেছে, এমন প্রতিষ্ঠানকেই এইও সনদ দেবে এনবিআর। শিগগিরই এইও সনদের বিষয়ে আবেদন আহ্বান করা হবে। ডিসেম্বরে ব্যবস্থাটি চালু করতে চায় এনবিআর। শুধু চট্টগ্রাম কিংবা মোংলা সমুদ্রবন্দর নয়; সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরেও একই সুবিধা দেওয়া হবে। আবার এইও সনদধারীরা বিদেশেও একই সুবিধা পাবেন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সমঝোতা হতে হবে।
২০১২ সালে এনবিআর এইও ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। এরপর বিধিমালা হতেই ছয় বছর লাগল। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিওসিও) শর্ত হিসেবে এই ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।
এনবিআরের সাবেক প্রথম সচিব (আন্তর্জাতিক চুক্তি) এহতেশামুল হক বর্তমানে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের অ্যাক্রেডিটেড টেকনিক্যাল ও অপারেশনাল অ্যাডভাইজার হিসেবে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে কাজ করছেন। গত বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছয় বছর পরে হলেও এই বিধিমালা হয়েছে। এটি ভালো খবর।
এহতেশামুল হক আরও বলেন, বিধিমালায় ভুলত্রুটিগুলো খুঁজে বের করে আগামী ১-২ বছরের মধ্যে একটি কার্যকর এইও ব্যবস্থা করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
এইও সনদধারীরা দশ ধরনের সুবিধা পাবেন। যেমন, শুল্ক স্টেশনের পরিবর্তে তারা নিজস্ব আঙিনায় পণ্যের চালানের কায়িক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাবে। জাহাজ বা উড়োজাহাজ থেকে কিংবা সীমান্তের অন্য প্রান্তে পণ্য খালাস হয়ে সরাসরি যাবে আমদানিকারকের গুদামে। এইও ব্যবস্থা তদারকিতে শুল্ক বিভাগের বিশেষ দল কাজ করবে। বন্দরে পণ্য আসার আগেই বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ শুল্কায়নের কাজ শেষ করা যাবে।

সনদ পাওয়ার যোগ্য
এইও সনদ পেতে সাতটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কমপক্ষে পাঁচ বছর ব্যবসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে; নিয়মিত শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও আয়কর দিতে হবে; রাজস্বসংক্রান্ত মামলায় জরিমানার পরিমাণ মোট পণ্য বা সেবামূল্যের ১ শতাংশের বেশি হবে না; আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিককে আগের তিন বছর অপরাধমুক্ত থাকতে হবে; সব বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে; প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত মূলধন কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন অন্তত ৫ কোটি টাকা হতে হবে। বার্ষিক আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ন্যূনতম হতে হবে ৫ কোটি টাকা।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘নাইন-ইলেভেন’ ট্র্যাজেডির পর পণ্যের নিরাপদ চলাচলের উদ্যোগ নেয় বড় দেশগুলো। পরে ২০০৫ সালে পণ্যের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেফ ফ্রেমওয়ার্ক চালু করে ডব্লিউসিও। সেখানে এইও ব্যবস্থা চালুর সুযোগ রাখা হয়।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নতুন এইও বিধিমালায় পণ্যের নিরাপদ চলাচলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। এতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিই প্রাধান্য পেয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক ভালো রাজস্ব দেয়, তারাই এ সনদ পাবে। তবে এইও সনদধারী প্রতিষ্ঠানের অন্য দেশে একই সুবিধা পাওয়া কঠিন হবে।