ভারত এখন ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুসারে ভারত এখন পৃথিবীর ষষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তি। এই স্থানে উঠে আসতে দেশটি ইউরোপের একাধিক দেশকে পেছনে ফেলেছে। সম্প্রতি আইএমএফের প্রকাশিত তালিকা অনুসারে ভারতের জিডিপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫৯৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, চলতি বছরের প্রথমার্ধে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
এক দশকের মধ্যে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি দ্বিগুণ হয়েছে। আইএমএফের তথ্যানুসারে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, ভারত চলতি অর্থবছরে বিশ্বের দ্রুততম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজের স্থান ধরে রাখবে। ফেব্রুয়ারিতে ভারত এ ক্ষেত্রে চীনকেও অতিক্রম করে গেছে। চীনের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেলেও ভারতের প্রবৃদ্ধির চাকা দ্রুত ছুটতে থাকবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। তাঁরা আশা করছেন, খুব দ্রুতই ভারত যুক্তরাজ্যকে ছাপিয়ে বিশ্বের পঞ্চম অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠবে। আর ভারতের এই উল্লম্ফনের মূল চালিকাশক্তি হলো উৎপাদন ও ভোক্তাব্যয়।
ভারতের জনসংখ্যা ১৩৪ কোটি। একসময় ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হবে। যেখানে বিশ্বব্যাংকের তালিকায় সপ্তম স্থানে থাকা ফ্রান্সের জনসংখ্যা মাত্র ৬ কোটি ৭০ লাখ। অর্থাৎ ভারতের জনসংখ্যা ফ্রান্সের প্রায় ১৯ গুণ বেশি। সে কারণে ভারতের মানুষের জীবনমান ওই সব দেশের মানুষের মতো নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, ডলার ও স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারের ভিত্তিতে জিডিপির যে হিসাব করা হয় তাতে নিম্ন আয়ের দেশের অর্থনীতির মূল চিত্র পাওয়া যায় না, যেখানে আবার মুদ্রার মানও কম। বাস্তবতা হলো, বিনিময় হারের বিবেচনায় ভারত এখনো নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। দেশটির বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারের কিছু কম। এটি ৪ হাজার ৫০০ ডলার অতিক্রম করলেই কেবল ভারত মধ্যম আয়ের দেশ হতে পারবে, তার আগে নয়। ওখানে যেতে গেলে তাকে অনেকটা পথ পেরোতে হবে। আর উচ্চ আয়ের দেশ হতে গেলে মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি হতে হবে।
অর্থনীতিবিদেরা হিসাব করে দেখিয়েছেন, মধ্য আয়ের দেশ হতে গেলে আগামী এক দশক বা অন্তত ২০২০-এর দশকের শেষভাগ পর্যন্ত ভারতের মাথাপিছু আয় প্রতিবছর ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তে হবে। কিন্তু ব্রাজিল, মেক্সিকো ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে মধ্য আয়ের শ্রেণিতে আছে। আবার এমনও হতে পারে যে তারা আদৌ উচ্চ আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হতে পারবে না।
এদিকে মোদি সরকারের আমলে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর অনেকেই ভারতীয় অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে ভারতীয় অর্থনীতি অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে। তারপর জিএসটি নিয়েও অনেক জল ঘোলা হয়েছে। কিন্তু সেই আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে ভারতীয় অর্থনীতির গতি বেড়েছে। আইএমএফের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিজেপি সেই তত্ত্ব অস্বীকার করার সুযোগ পেয়ে গেল।
এই তালিকায় সবার ওপরে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যার সম্পদের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার। তার পরে ১২ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন ডলার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে চীন। আর ৪ দশমিক ৮৭ ট্রিলিয়ন ডলার নিয়ে তৃতীয় স্থানে জাপান। ভারতের আগে রয়েছে আরও দুটি দেশ, জার্মানি ও ইংল্যান্ড। তালিকায় পাকিস্তানের অবস্থান ৪০ নম্বরে।