তেলের দাম হঠাৎ কমতে শুরু করেছে

তেলের দাম বাড়তে বাড়তে হঠাৎ করেই কমতে শুরু করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন জরুরি ব্যবস্থা নিচ্ছে, বাজারে এই গুজব ছড়িয়ে পড়লে মার্কিন অপরিশোধিত তেলের দাম সোমবার ৫ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ৫৮ ডলারে নেমে আসে। ১০ জুলাই মার্কিন অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৭৪ দশমিক ১১ ডলার। দাম কমতে শুরু করায় এক সপ্তাহেরও কম সময়ে তেলের দাম ৯ শতাংশ পড়ে যায়।  

তেলবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সোসাইট জেনারেলের প্রধান মাইকেল উইটনার বলেছেন, ‘মানুষের মনোভাব কত দ্রুত বদলায় বা এই বাজার কতটা অস্থির, এ ঘটনায় তা বোঝা গেল।’ অন্যদিকে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বাজারে যাতে তেলের ঘাটতি তৈরি না হয়, সে জন্য সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাল্লা দিয়ে তেলের উৎপাদন বাড়াচ্ছে, এই খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় তেলের দাম                  পড়ে গেছে।

গত শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন এক বিরল পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। সেটা হলো, তিনি নাকি আপৎকালীন তেলের মজুত ছেড়ে দেওয়ার জন্য অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সঙ্গে জোট বাঁধছেন। তারা আরও জানায়, এক্ষুনি যে সে রকম কিছু ঘটবে, তা নয়। ওপেককে দিয়ে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর যে চেষ্টা করা হচ্ছে, তা ব্যর্থ হলেই কেবল ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আলোর মুখ দেখবে।

হারিকেন হারভের পর যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয় কৌশলগত তেলের মজুত ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে মন্তব্য করেনি। এমনকি হোয়াইট হাউসও এ নিয়ে কিছু বলেনি।

তেলের উচ্চমূল্যের জন্য ট্রাম্প সব সময় ওপেকের সমালোচনা করেছেন। বিশ্বের পঞ্চম সর্বোচ্চ তেল উৎপাদক ইরানের ব্যাপারে তাঁর কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও তিনি ওপেককে ছাড়ার পাত্র নন। বিপি ক্যাপিটালের পোর্টফোলিও ম্যানেজার বেন কুক বলেন, ট্রাম্প অপরিশোধিত তেলের দাম জোর করে কমানোর চেষ্টা করছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি এমনটা করছেন। আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটের পরিচালক মাইকেল ট্র্যানের সন্দেহ, আপৎকালীন মজুতে হাত দেওয়া প্রয়োজনীয়, এতে কাজও হতে পারে। তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিশোধনাগারগুলো ইতিমধ্যে ‘অনেক বেশি’ উৎপাদন করছে। ফলে বেশি পরিমাণ তেলকে গ্যাসোলিনে রূপান্তরিত করার সুযোগ কম। তিনি মনে করেন, এটা অতটা কার্যকর নয়।

এদিকে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন ওপেক ও রাশিয়া গত মাসে তেলের উৎপাদন বাড়াতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু তাতে তেলের দাম কমেনি। বস্তুত, তেলের মহাজনেরা যুক্তি দিচ্ছেন যে এখন বাজারে অতিরিক্ত তেল ছাড়া হলে ভবিষ্যতে তেলের স্বল্পতা মোকাবিলায় সৌদি আরবের তেমন কিছু করার থাকবে না।

সোমবার তেলের দাম কমার আরেকটি কারণ হচ্ছে ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন। তারা বলেছে, সৌদি আরব চুক্তির বাইরেও এশিয়ার কিছু ক্রেতার কাছে অপরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বোঝা যায়, তেলের দাম বাড়তে না দিতে সৌদি আরব আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছে।  উইটনার বলেন, তারা ক্রেতাদের জানাচ্ছে, অপরিশোধিত তেল লাগলে তারা সেটার জোগান দিতে পারে।