সুযোগ নেই মোবাইল কোম্পানির

>
  • মোবাইলে আর্থিক সেবা
  • ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে কমপক্ষে ৫১ শতাংশ শেয়ার।
  • মালিকানায় থাকবে না কোনো মুঠোফোন অপারেটর।

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মুঠোফোনে আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য অংশীদার হতে পারছে না মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও)। এমএফএস প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে শতকরা ৫১ ভাগের মালিকানা থাকবে ব্যাংকের হাতে এবং সেবাটি ব্যাংকের নেতৃত্বেই চলবে। বাকি ৪৯ শতাংশ অংশের মালিকানায় আসতে পারবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসহ অন্যরা।

এমন বিধান রেখে এমএফএস সেবার জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৫ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এ নীতিমালার অনুমোদন দেয়। শিগগির তা পরিপালনের জন্য প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নতুন নীতিমালা করার পরও এমএফএস প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আসার সুযোগ পাচ্ছে না গ্রামীণফোন ও রবির মতো মোবাইল অপারেটররা। তবে এসব অপারেটরের নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করেই চলবে সেবাটি। এর আগে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো এ-সংক্রান্ত নীতিমালা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই নীতিমালায় ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানকেও এ সেবা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। ওই নীতিমালার পর কয়েকটি অপারেটর আর্থিক সেবা চালু করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপের মুখে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এরপর থেকেই তারা এ সেবার মালিকানায় অংশগ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছিল।

দেশজুড়ে ২০১১ সালে চালু হওয়া এ সেবার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে বর্তমানে। এ সেবার আওতায় সারা দেশে দৈনিক ১ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। শুধু লেনদেন নয়, পরিষেবা বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, প্রবাসী আয় সংগ্রহসহ আরও নানা সুবিধা মিলছে এ সেবায়। এর ফলে ব্যাংকের টাকা স্থানান্তর (টিটি) সেবা প্রায় বন্ধের উপক্রম। আর মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা টাকা পাঠাতে পারছে নিমেষেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অপারেটররা এ সেবায় নেতৃত্ব দিলেও বাংলাদেশে এ মডেল চালু করা উপযুক্ত হবে না। কারণ, আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। আর মোবাইল অপারেটরদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ কমিশন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, তফসিলি ব্যাংকের নেতৃত্বে এ সেবার মালিকানার অংশীদারে ব্যাংকবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অন্যদের হাতে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার থাকতে পারবে। এ সেবায় প্রযুক্তিগত বৈচিত্র্য আনতে পারবে—এমন প্রতিষ্ঠানকে এমএফএসের অংশীদারে আনার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৮টি ব্যাংক এমএফএস সেবা প্রদান করছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’। এরপরই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সেবা ‘রকেট’। গত মে পর্যন্ত এ সেবায় নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ৬ কোটি ১৩ লাখ। এর মধ্যে সক্রিয় গ্রাহক ২ কোটি ২৯ লাখ। এসব সেবা দিতে কাজ করছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৩৫৩ জন এজেন্ট। গত মে মাসে এ সেবার আওতায় ৩২ হাজার ৮২২ কোটি টাকার লেনদেন হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, মুঠোফোন অপারেটরদের এ সেবায় অংশীদার করলে ঝুঁকি বাড়ত। কারণ, তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নয়। আর্থিক ব্যবস্থাপনা সব সময়ই ব্যাংকের হাতে থাকা উচিত।