বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হয়নি

কোরবানির পশুর চামড়া। প্রথম আলো ফাইল ছবি
কোরবানির পশুর চামড়া। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ট্যানারিমালিকেরা ঢাকার আড়তদারদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করেছেন। তবে ঢাকার বাইরে বেচাবিক্রি সেভাবে শুরু হয়নি। দু-এক দিনের মধ্যে পুরোদমে চামড়া বেচাবিক্রি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ট্যানারিমালিক ও আড়তদারেরা।

এ বছর কোরবানির পশুর চামড়ার দামে ভয়াবহ ধস নামে। এ কারণে ঈদের পরদিন কাঁচা চামড়া এবং ওয়েট ব্লু রপ্তানির সিদ্ধান্ত দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারপর বকেয়া পাওনার কথা বলে লেনদেন ভালো নয়—এমন ট্যানারির মালিকদের কাছে বাকিতে চামড়া বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেন আড়তদারেরা। পরে গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে শিল্পমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বাণিজ্যসচিব আড়তদার ও ট্যানারিমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে গতকাল সোমবার থেকে চামড়া বেচাবিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। আর ট্যানারিমালিকদের কাছে আড়তদারদের ৪০০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনার বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে আগামী বৃহস্পতিবার সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর গতকাল থেকে ট্যানারিমালিক ও আড়তদারদের মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। তাতে নগদের পাশাপাশি বাকিতেও চামড়া বেচাকেনা শুরু হয়। সে ক্ষেত্রে ভালো মানের চামড়া সরকার–নির্ধারিত দরেই বিক্রি হচ্ছে। তবে নিম্নমানের চামড়ার দাম তুলনামূলক কম।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় চামড়া বিক্রি কিছুটা শুরু হয়েছে। সামান্য কিছু চামড়া ডেলিভারিও নিয়েছেন ট্যানারিমালিকেরা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পোস্তার সব চামড়া ট্যানারিমালিকদের হাতে যাবে। তারপর ঢাকার বাইরের চামড়া আড়তে আসতে শুরু করবে। তিনি আরও বলেন, ‘ভালো লেনদেন আছে—এমন ট্যানারির পক্ষে সব চামড়া কেনা সম্ভব নয়। তারপরও আমাদের চেষ্টা থাকবে যতটা সম্ভব নগদে চামড়া বিক্রির।’

ঢাকায় শুরু হলেও চট্টগ্রামে কাঁচা চামড়া বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। তবে ট্যানারিমালিকেরা আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দামদর নিয়ে আলোচনা করছেন। চট্টগ্রাম থেকে প্রায় পাঁচ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি অর্জন সম্ভব হবে না। কোরবানির পরপর দাম না পাওয়ায় অনেক চামড়া রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। তাতে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে বলে সেখানকার আড়তদারেরা জানান।

জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে কাঁচা চামড়া বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। তবে আশা করছি, কাল-পরশু থেকে শুরু হবে। ’

চট্টগ্রামের মতো একই অবস্থা যশোরে। সেখানেও কাঁচা চামড়া বেচাবিক্রি খুব একটা হয়নি। এমন তথ্য দিয়ে বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ‘ট্যানারিমালিকদের সঙ্গে চামড়া বিক্রির বিষয়ে আমাদের আড়তদারদের কথাবার্তা হচ্ছে। আগামী শনিবার থেকে হয়তো রাজারহাটে চামড়া বেচাবিক্রি পুরোদমে শুরু হবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তের পর বাজারে প্রাণচাঞ্চল্য ছিল। তবে বর্তমানে সেটি নেই। তবে কাঁচা চামড়া রপ্তানি ও ট্যানারিমালিকদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ের আশায় অনেকেই চামড়া অল্প অল্প ছাড়ছেন।

সিলেট থেকে সাধারণত এজেন্টদের মাধ্যমে চামড়া কিনে থাকেন ট্যানারিমালিকেরা। তবে সেখানেও গতকাল বেচাবিক্রি শুরু হয়নি। শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, পাওনার বিষয়টি সুরাহা হলে বেচাবিক্রি শুরু হবে।

 জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সারা দেশের সব চামড়া এক দিনে কেনা যাবে না। তাই ধীরে ধীরে চামড়া কিনবেন ট্যানারিমালিকেরা। সেটি শুরু হয়েছে।