ব্যবসায় টিকে থাকতে পাল্টাতে হবে কৌশল

প্রথম আলো ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স আয়োজিত ‘এসএমই ব্যবসায় প্রযুক্তির ব্যবহার
প্রথম আলো ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স আয়োজিত ‘এসএমই ব্যবসায় প্রযুক্তির ব্যবহার

করোনার কারণে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে হবে। আবার বাস্তব অবস্থার বিবেচনায় নীতিকৌশলও পাল্টাতে হবে। এসএমই খাতের জন্য যতটা না ঋণ প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি দরকার নীতি ছাড়। কারণ, ৯০ শতাংশ এসএমই ব্যাংকঋণ সুবিধা পায় না। আবার টিকে থাকতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কমিয়ে আনতে হবে পরিচালন ব্যয়। তবে কর্মীর মনোবল ভেঙে দেওয়া যাবে না।

প্রথম আলো ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স আয়োজিত ‘এসএমই ব্যবসায় প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠানে তিন উদ্যোক্তা এভাবেই নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। এসএমই ব্যবসার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক তিন পর্বের অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অংশ নেন বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর, চালডাল ডটকমের প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম আলীম, প্রফেসর’স প্রকাশনের প্রকাশক জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টেন মিনিট স্কুলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আয়মান সাদিক।

গত রোববার রাত ১০টায় প্রথম আলো অনলাইন এবং প্রথম আলো ও আইডিএলসির ফেসবুক পেজে অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয়। ২৭ জুন ছিল বিশ্ব এসএমই দিবস। দিবসটিকে কেন্দ্র করেই তিন দিনের এ অনলাইন আলোচনার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আয়মান সাদিক বলেন, এখন ফেসবুকে যত লাইভ আলোচনা হয়, তার সারমর্ম হলো মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন। আর যাঁরা চাকরিতে আছেন তাঁদেরও বেতন কমানো হচ্ছে। এর সমাধান কী? পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? জবাবে বিডিজবসের ফাহিম মাশরুর বলেন, পরিস্থিতির খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, সহজে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। গত তিন মাসে সব খাতেই বড় আঘাত এসেছে। সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে এসএমই খাতে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের অনেকের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

ফাহিম মাশরুর বলেন, করোনার আগে ও পরে ব্যবসার ধরন পুরো পাল্টে যাবে। অনলাইন ব্যবহার করে এখন গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ নিতে হবে। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। তাহলেই টিকে থেকে ভালো করা যাবে।

>আলোচকেরা বলেন, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ৯০ শতাংশই ব্যাংকঋণ পান না। তাই ঋণের পরিবর্তে নীতি ছাড়কে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

করোনায় চালডালের পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম আলীম বলেন, ‘করোনা শুরুর সময় আমাদের ৩০-৪০ শতাংশ কর্মী গ্রামে চলে যান। ঘুরে দাঁড়াতে দুই মাস সময় লেগেছে। পরে সাড়ে সাত শ জনবল নিয়োগ করেছি। নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে আগের মডেল থেকে সরে এসেছি। ফোনে সাক্ষাৎকার নিয়েই কাজ শুরু করানো হচ্ছে।’

প্রফেসর’স প্রকাশনের প্রকাশক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রকাশনা শিল্প একটা অন্ধকারের মধ্যে আছে। এরপরও আমরা কাউকে বাদ বা বিনা বেতনে ছুটি দিইনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক কৌশল দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে, তা না হলে টিকে থাকা যাবে না।’

কোন খাতে চাকরি বাড়ছে আর কোন খাতে কমছে আয়মান সাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহিম মাশরুর বলেন, স্বাস্থ্য, লজিস্টিক, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের চাকরির চাহিদা বাড়ছে। আর ব্যাংক, বিমা, পোশাক খাত, দোকানপাটে চাকরির চাহিদা কমবে।

করোনা পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করেছেন, এ প্রশ্নের জবাবে চালডালের ওয়াসিম আলীম বলেন, ‘করোনা শুরুর সময় আমরা বুঝেছিলাম বড় চাপ আসবে। পুরো ১ হাজার ২০০ কর্মীর সবাইকে সব সময় সক্রিয় রাখতে হবে। এ জন্য শুরুর ৬ সপ্তাহ বাসায় না গিয়ে হোটেলে থেকেছি। করোনার কারণে আমাদের ক্রয়াদেশ আড়াই গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। নতুন গুদাম করতে হয়েছে। নানা ধরনের সমস্যা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সেগুলোর সমাধান করেছি।’

এসএমই খাত কীভাবে চাপ মোকাবিলা করবে, এ প্রশ্নের জবাবে ফাহিম মাশরুর বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার খরচ কমিয়ে আনতে হবে। খরচ কমাতে অফিসের প্রায় অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। বেশির ভাগ এসএমই উদ্যোক্তার সঙ্গে ব্যাংকের যোগাযোগ নেই। তাই ঋণের বদলে নীতিসহায়তা দিলে এ খাতের সবাই উপকৃত হবে।

প্রফেসর’স প্রকাশনের প্রকাশক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কাগজের আমদানি বন্ধ থাকায় বই ছাপতে সমস্যা হবে। ভারতে আমাদের অনেক বই রপ্তানি হয়, সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।’ মানুষ কি আরও বইবিমুখ হবে? জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, বাচ্চারা আগে সময় কাটানোর জন্য খেলতে। এখন আবার টেবিলে ফিরেছে। বই পড়ার দিকে ঝোঁক আবার আসবে, তবে বইকে লবণ–চিনির বিজ্ঞাপনের মতো তুলে ধরতে হবে। তাহলে এ খাতটি উঠে দাঁড়াতে পারবে। এ জন্য তিনি বইয়ের বিজ্ঞাপনের খরচ কমিয়ে আনার আহ্বান জানান।