দুই হাজার কোটি ডলার ছাড়াল রিজার্ভ

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে (রিজার্ভ) নতুন রেকর্ড হয়েছে। রিজার্ভ প্রথমবারের মতো দুই হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের পরিমাণ বেড়ে দুই হাজার তিন কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণে উন্নীত হয়। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে দেশের ছয় মাসেরও অধিক সময়ের আমদানি দায় মেটানো যাবে।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত এক হাজার ৯০০ কোটি ডলার অতিক্রম করে।
ঠিক এক বছর আগে অর্থাত্ ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল রিজার্ভ ছিল এক হাজার ৪২২ কোটি ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৪১ শতাংশ।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়তে। প্রথম অবস্থানে রয়েছে ভারত। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে ভারতের রিজার্ভ ৩০ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলার। তার পরই বাংলাদেশ। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তথ্য অনুসারে পাকিস্তানের রিজার্ভ হচ্ছে ৯৮৬ কোটি ডলার।
মূলত, আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি ও প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রিজার্ভ বৃদ্ধির আরেক অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশে বিনিয়োগ মন্দা রয়েছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে বেসরকারি খাত ২০০ কোটি ডলারে যে ঋণ এনেছে, এতেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর থেকে চাপ কমেছে।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত পরিস্থিতি এখন এমন হয়েছে যে, এখন অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছেই পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে। কারও কারও সংরক্ষণ সীমাও অতিক্রম করছে। তারা ডলার বিক্রি করছে। কিন্তু ক্রেতা কম। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ম অনুসারে ডলার কিনতে হয়েছে ব্যাংকের কাছ থেকে।
তবে বছর কয়েক আগে এ পরিস্থিতি ছিল না। তখন ডলারের জন্য হাহাকার ছিল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করতে ডলার জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশ ব্যাংকও নানা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে আসছিল। আইডিবির কাছ থেকে শেষমেশ একটা বড় সহায়তা মেলে। যে পরিমাণ অর্থ জ্বালানি কিনতে ব্যয় হবে আইডিবি তা পরিশোধ করবে। আর ছয় থেকে নয় মাস পর তা পরিশোধ করা হবে। তবে সম্প্রতি এ খাতে সহায়তা কম নেওয়া হচ্ছে।
আবার সমসাময়িক সময়ে সার্বিক বৈদেশিক বিনিময় পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকেও সরকার ১০০ কোটি ডলার ঋণ নেয়। যার চারটি কিস্তির অর্থ ইতিমধ্যেই রিজার্ভে এসে জমা হয়েছে।
কিন্তু, এখন কেউ আর ডলার চায় না। যে সময়টা ডলারের জন্য হাহাকার ছিল, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছিল হই হই করে। একই সঙ্গে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত্ প্রকল্প চালুর একটা তোড়জোড় পড়ে যায়। যার চাপ গিয়ে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এই বিদ্যুত্ প্রকল্পের জন্য হঠাত্ করে জ্বালানি তেলের চাহিদাও বাড়ে, যার জোগান দিতেও বেশি আমদানি করতে হয় বিপিসিকে। এখন তার পরিমাণ না কমলেও বৃদ্ধির হার নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেকটা কমেছেও।
সব মিলে সার্বিক আমদানি ব্যয় কমেছে। ব্যয় কমেছে দুইভাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমে যাওয়ায় আমদানি কমেছে, আবার পরিমাণেও কমেছে আমদানি। আবার দেশে খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যপণ্য আমদানি কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাজী ছাইদুর রহমান রিজার্ভ বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিতে একটা ভালো প্রবৃদ্ধি আছে। অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমেছে। খাদ্যপণ্য আমদানিও নেই। এখন যা আমদানি হচ্ছে তা প্রকৃত চাহিদা। এতে রিজার্ভ বাড়ছে।

বিভিন্ন সময়ে রিজার্ভ
এক হাজার কোটি ডলার, ১০ নভেম্বর ২০০৯
এক হাজার ১০০ কোটি ডলার, ৮ জুলাই ২০১০
এক হাজার ২০০ কোটি ডলার, ১৮ অক্টোবর ২০১২
এক হাজার ৩০০ কোটি ডলার, ৭ জানুয়ারি ২০১৩
এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার, ৫ মার্চ ২০১৩
এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার, ৭ মে ২০১৩
এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার, ১৩ আগস্ট ২০১৩
এক হাজার ৭০০ কোটি ডলার, ২২ অক্টোবর ২০১৩
এক হাজার ৮০০ কোটি ডলার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩
এক হাজার ৯০০ কোটি ডলার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪