২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) আরও এক বিলিয়ন ডলারের ধাপ অতিক্রম করেছে। গতকাল সোমবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন বা দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার।
বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে দেশের ছয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো যাবে। এখন প্রতি মাসে আমদানির গড় ব্যয় ৩৫০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মূলত রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভ বেড়েছে। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে পণ্য রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছে।
আবার একই সময়ে প্রবাসী-আয়প্রবাহ প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ কমেছে। প্রবাসী-আয় বাড়লে রিজার্ভ আরও বাড়ত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চার মাসের মধ্যে রিজার্ভ দুই দফা শত কোটি ডলার করে বেড়েছে। এর আগে গত ১০ এপ্রিল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত দুই হাজার কোটি ডলারের ধাপ অতিক্রম করে। তার আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভের পরিমাণ এক হাজার ৯০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী এক বছর আগে, অর্থাৎ গত বছরের জুনে রিজার্ভ ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ বৃদ্ধির পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
ছাইদুর রহমান আরও বলেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির আরেক অন্যতম কারণ হলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশ থেকে ঋণ আনয়ন।
বিদেশ থেকে বেসরকারি খাত গত এক বছরে ২০০ কোটি ডলারের যে ঋণ এনেছে, তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর থেকে চাপ কমিয়েছে।
ছাইদুর রহমান জানান, সার্কভুক্ত দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। প্রথম অবস্থানে রয়েছে ভারত।
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে ৬ জুন ভারতের রিজার্ভ ছিল ৩১ হাজার ২৫৮ কোটি (৩১২ বিলিয়ন) ডলার। তার পরই বাংলাদেশ। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তথ্য অনুসারে ৬ জুন পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল এক হাজার ৩৪৫ কোটি (১৩ বিলিয়ন) ডলার।
যোগাযোগ করা হলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন,‘সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো লক্ষ্যমাত্রা ধরে নিয়ে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে না; বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নীতির প্রভাবে রিজার্ভ বাড়ছে।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, আমদানি ব্যয় কম থাকায় চাহিদা কম ছিল। তাই রিজার্ভ বাড়ছে। তবে এখন আমদানি ব্যয় বাড়ছে৷ ফলে আগামী দিনে রিজার্ভ আর এভাবে বাড়বে না, বরং কিছুটা কমে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য আমদানি ব্যয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে।
আহসান মনসুরের মতে, বিনিয়োগ বাড়লে এই বড় অঙ্কের রিজার্ভ ব্যবহার করতে হবে, যা রিজার্ভ কমিয়ে দেবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ বা এ ধরনের বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হলে আমদানি চাহিদা বেড়ে যাবে। আর আমদানি ব্যয় মেটাতে তখন রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়তে হবে।