সিএসআরে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হলে সব পক্ষেরই লাভ

‘সিএসআরের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের মর্যাদাসম্পন্ন কাজের সুযোগ সৃষ্টি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অতিথিরা। আজ প্রথম আলো কার্যালয়ে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়। ছবি: সাইফুল ইসলাম
‘সিএসআরের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের মর্যাদাসম্পন্ন কাজের সুযোগ সৃষ্টি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অতিথিরা। আজ প্রথম আলো কার্যালয়ে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়। ছবি: সাইফুল ইসলাম

সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের (সিএসআর) সুফল উদ্যোক্তারাই পাবেন। সিএসআরের অর্থ ব্যয় করে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার পাশাপাশি তরুণদের ঝুঁকিমুক্ত কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির ভিত্তিতে সিএসআর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। সিএসআরের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হলে সব পক্ষই লাভবান হবে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘সিএসআরের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের মর্যাদাসম্পন্ন কাজের সুযোগ সৃষ্টি’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন। তাঁরা জানান, শিশু-কিশোর শ্রম নিয়ে জাতীয় সিএসআর নীতিমালা তৈরি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভা আয়োজনে সহায়তা করেছে বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমের সঞ্চালনায় সভায় সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সিএসআরের মাধ্যমে কীভাবে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা যায়, এর উদাহরণ দিয়ে সভায় শ্রমসচিব মিকাইল শিপার বলেন, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মান্ধাতার আমলের মেশিন দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তৈরি পোশাক মালিকেরা তাঁদের কারখানার ৮/১০ টি আধুনিক মেশিন দিতে পারেন। সেই আধুনিক মেশিনে প্রশিক্ষণ নিয়ে তরুণ-তরুণীরা যুগোপযোগী করে নিজেদের গড়ে তুলতে পারেন। এতে তৈরি পোশাক খাতের উপকার হবে। আবার একই এলাকার পাঁচ-দশটি কারখানার মালিক মিলে একটি শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র তৈরি করতে পারেন। এতে দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে কর্মীরা শিশু সন্তানদের সেই কেন্দ্রে রাখতে পারবেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, যাঁদের (করপোরেট প্রতিষ্ঠান মালিক) কাছ থেকে সিএসআরের অর্থ দাবি করছি, তাঁরা হয়তো সেভাবে দেখছেন না। বিনিয়োগ করে তাঁরা লাভবান হতে চাইবেন। তাঁরা তা পাবেনও। তাঁর মতে, সিএসআরের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হলে সব পক্ষই লাভবান হবে। সিএসআরকে অ্যাডহক ভিত্তিতে দেখলে হবে না, অংশীদারির ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের ইওয়াইই কর্মসূচি পরিচালক শাহিদা বেগম আলোচনার মূল বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে সিএসআর। মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় আনতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল, সেক্রেটারিয়েটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম খোরশেদ আলম মনে করেন, সিএসআর সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক ধারণা হয়নি। সিএসআর করলে উৎপাদনশীলতায় প্রভাব পড়ে, তাঁদের তা বুঝানো হয়নি। তাঁর মতে, কারখানার মালিকেরা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁদের আন্তরিকতা বাড়ে।

ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (বিএমইটি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক শহীদুল ইসলাম জানান, সরকারের ৪৮টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ নেন। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের কর্মীদের এসব সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠাতে পারেন।

উৎপাদন ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই করতে সিএসআরকে প্রাধান্য দিতে হবে বলে মনে করেন সিএসআর সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহামিন এস জামান। এ ছাড়া শিশুদের জন্য সিএসআর নীতিমালায় সরকার ও বেসরকারি খাতের কী ভূমিকা হবে, তা নির্দিষ্ট করার সুপারিশ করেন তিনি।
কানাডা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আসাদ খান মনে করেন, সিএসআর পরোপকার নয়, সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ববোধ—করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে সেটা বুঝতে হবে।

অন্যদিকে সিএসআরকে শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। তিনি জানান, ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমে সিএসআর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি মো. ইমরানুল হক চৌধুরী বলেন, বিদেশি টাকায় সিএসআর না করে এখন নিজেদের টাকায় সিএসআর করার সময় এসেছে।
ইউসেপের আন্ডারপ্রিভিলেজড চিলড্রেন প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক জাকি হাসান প্রশ্ন তোলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার সক্ষমতা সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর রয়েছে কি না?
সিএসআর পলিসি ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য ও আইএনসিআইডিআইএনের নির্বাহী পরিচালক রতন সরকারের মতে, সিএসআর কোনো দয়াদাক্ষিণ্যের বিষয় নয়। সিএসআর কার্যক্রম বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে।