প্রবাসী-আয়ে নতুন রেকর্ড

প্রবাসী–আয়ের ১০ বছরের চিত্র
প্রবাসী–আয়ের ১০ বছরের চিত্র

দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-আয়ে নতুন রেকর্ড হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত ২০১৪-১৫ (জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৫) অর্থবছরে দেশে ১ হাজার ৫৩০ কোটি মার্কিন ডলার প্রবাসী-আয় এসেছে। এই আয় বাংলাদেশের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭০ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ৭৯ টাকা ধরে)।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো এক বছরে এটিই হলো সর্বোচ্চ প্রবাসী-আয়ের রেকর্ড। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশি থাকেন, তাঁরাই এই অর্থ পাঠিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, আগের ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ১ হাজার ৪২৩ কোটি ডলার প্রবাসী-আয় এসেছিল। সেই হিসাবে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছর শেষে প্রবাসী-আয় বেড়েছে ১০৭ কোটি ডলার বা ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। দেশের প্রবৃদ্ধিতেও এর ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে। বিপুল এই অর্থের বড় একটি অংশ হয় ভোগে, নয়তো বিনিয়োগে ব্যবহৃত হবে। যেটিই হোক, সেটি প্রবৃদ্ধিতে কাজে লাগবে।
মির্জ্জা আজিজের মতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের চেয়ে সদ্যবিদায়ী বছরে প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি হলেও ২০১২-১৩ সালের তুলনায় এটি খুব বেশি নয়। এবার প্রবৃদ্ধি বেশি চোখে পড়ার কারণ হলো, ২০১৩-১৪ সালে তার আগের বছরের তুলনায় কম ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবাসী-আয় এসেছিল প্রায় ১ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। ওই বছরই প্রবাসী-আয় প্রবাহে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল আগের ২০১১-১২ অর্থবছরের চেয়ে। ওই বছর প্রবাসী-আয় এসেছিল প্রায় ১ হাজার ২৮৪ কোটি ডলার।
মির্জ্জা আজিজ মনে করেন, প্রবাসী-আয় বৃদ্ধির আরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সচেষ্ট হতে হবে।
শ্রমবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, কাজের প্রয়োজনে বাংলাদেশের যেসব লোক বিদেশে যাচ্ছেন এবং অর্থ পাঠাচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক। এসব বিদেশগামী শ্রমিককে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তারপর বিদেশ পাঠানো গেলে তাঁদের আয় অনেক বেড়ে যাবে। আর সেটি করা গেলে প্রবাসী-আয়ের প্রবাহ আরও বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী-আয় এসেছে প্রথম মাস (গত বছরের) জুলাইয়ে। ওই মাসে প্রায় ১৪৯ কোটি ডলার প্রবাসী-আয় এসেছিল। মাসওয়ারি হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী-আয় এসেছে গত মাসে (জুন ২০১৫)। এ মাসে ১৪৩ কোটি ডলার প্রবাসী-আয় দেশে এসেছে।
প্রবাসী-আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি এর ব্যবহারের দিকটিও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষক ও অর্থনীতিবিদেরা।
গত কয়েক বছরের প্রবাসী-আয়ের প্রবাহের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিশ্বের যেসব দেশ থেকে প্রবাসী-আয় আসে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। এ দেশটি থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) এসেছে প্রায় ৩০৩ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরে এসেছিল ৩১২ কোটি ডলার। সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এ দেশটি থেকে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের ১১ মাসে এসেছে প্রায় ২৫৮ কোটি ডলার। আগের ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসেছিল ২৬৮ কোটি ডলার।
এর বাইরে ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী-আয় এসেছে এমন দেশের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকা। এ দেশটি থেকে বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে এসেছে ২১৪ কোটি ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশটি থেকে প্রবাসী-আয় এসেছিল প্রায় ২৩২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশ থেকে যে প্রবাসী-আয় আসে, তার সিংহভাগই আসে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। গত জুন মাসের হিসাবে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংক মিলে প্রবাসী-আয় এনেছে প্রায় ৪৫ কোটি ডলার। এর বিপরীতে বেসরকারি ৪৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯৫ কোটি ডলার। এর বাইরে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও বিদেশি মালিকানাধীন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) ও কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের মাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবসী-আয় দেশে এসেছে।