সর্বোচ্চ প্রবাস-আয়ের জন্য ৩৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা

গভর্নর আতিউর রহমানসহ অতিথিদের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’–এর সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা l প্রথম আলো
গভর্নর আতিউর রহমানসহ অতিথিদের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’–এর সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা l প্রথম আলো

দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাস-আয় পাঠানোর স্বীকৃতিস্বরূপ ৩১ জনকে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের মালিকানাধীন দুটি অনাবাসী এক্সচেঞ্জ হাউসকেও ‘বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’ শীর্ষক এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় মিরপুরের বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির এ কে এন আহমেদ মিলনায়তনে গতকাল শনিবার এক অনুষ্ঠানে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মাননা পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননা সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
এবারে ব্যক্তিশ্রেণির ক্যাটাগরি বা শ্রেণিতে সর্বোচ্চ প্রবাস-আয় পাঠানো ২৬ জন এবং বন্ডে বিনিয়োগকারী পাঁচজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৭ জন, সৌদি আরবে চারজন, যুক্তরাষ্ট্রে তিনজন, কুয়েতে দুজন এবং চীন, রাশিয়া, কানাডা, জার্মানি ও পাপুয়া নিউ গিনিতে একজন করে বসবাস করেন।
সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকেন আবুল হাশেম, এ এইচ এম তাজুল ইসলাম, আবদুল করিম, আবু নাঈম মো. তৌহিদুল আলম চৌধুরী, এ টি এম জাহেদ, আইয়ুব আলী, জাকির হোসেন চৌধুরী, মাহতাবুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, অলিউর রহমান, মোহাম্মদ শফি, মোহাম্মদ সেলিম, ওমর ফারুক, আবদুল কুদ্দুস, আইয়ুব মিয়া, আবদুল গনি চৌধুরী ও ফখরুল ইসলাম। সৌদি আরবে আছেন এনামুল হক, আমিনুল ইসলাম, বাবুল আহমেদ আলী ও ফোরকান আহমেদ।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীরা হলেন রেজাউল হাসান, ফারিনা ডব্লিউ রুনু ও মাহমুদুল হক। কুয়েতে থাকেন জাকির হোসেন ও মজিবুর রহমান। এ ছাড়া পাপুয়া নিউ গিনিতে প্রবাসী আমিন রহমান, রাশিয়ার রফিকুল ইসলাম মিয়া, চীনের সালিম মিয়া, কানাডার শাহ জহির আহমেদ ও জার্মানির সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম সম্মাননা পান।
এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রবাস-আয় পাঠানো প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্লাসিড এন কে করপোরেশন ও ইতালির ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ প্রবাস-আয় পাঠানো ব্যক্তিদের সম্মাননা দিল। গত বছর মোট ২৫ জনকে এ সম্মাননা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) আওতায় অর্থ ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রবাসী দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সিএসআরের অর্থ খরচের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
গভর্নর আরও বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে দৈনিক ৪৩০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। আমার বিশ্বাস, এর বিশাল অংশই লেনদেন হয় প্রবাসীদের টাকা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পাঠানোর ক্ষেত্রে।’
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো প্রবাসীদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ এবং বিদেশি মুদ্রার মজুতের ৬০ শতাংশের বেশি। প্রবাস-আয় প্রতিবছরই ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। সিংহভাগ আয় আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।
আতিউর রহমান প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যথাসময়ে প্রেরিত অর্থ কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে না পৌঁছালে কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে অনলাইনেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেসবুক পেজেও অভিযোগ জানানো যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, প্রবাসীদের দাবি অনুযায়ী, যাঁরা সর্বোচ্চ প্রবাস-আয় পাঠান তাঁদের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সিআইপি হিসেবে ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো আপত্তি নেই। এ ছাড়া বিমানবন্দরে তাঁদের জন্য আলাদা চ্যানেলও করা যেতে পারে।
আরেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান মনে করেন, জনসংখ্যা এখন সম্পদ, তাঁরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি মজবুত করেন।
বৈধপথে অর্থ প্রেরণের জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান আরেক ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা।
অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বেশ কয়েকজন তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। আমিনুল ইসলাম নামে একজন বলেন, প্রবাসীদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব এফসি অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম মাহফুজুর রহমান।