'টাকার ব্যবসা'য় মাসে লেনদেন ৪২ কোটি টাকা

ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় সারা বছরই নতুন টাকার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার তোলা l হাসান রাজা
ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় সারা বছরই নতুন টাকার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার তোলা l হাসান রাজা

মতিঝিল, গুলিস্তান এলাকায় রাস্তার পাশে ছোট একটি টুল পেতে নতুন টাকা সাজিয়ে বসে থাকেন বিক্রেতারা। পুরোনো টাকার বদলে নতুন টাকা দেন তাঁরা। বিনিময়ে কমিশন হিসেবে কিছু টাকা দিতে হয়। আবার কেউ কেউ ২ ও ৫ টাকার নোটের বান্ডিল নিয়ে বসেন। কমিশন নিয়ে বড় নোটের ভাংতি করে দেন। এ ব্যবসার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। পুরোপুরি অনানুষ্ঠানিকভাবেই চলে।
রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে চলে এ রকম জমজমাট টাকার ব্যবসা। প্রতি মাসে এ ব্যবসায় ৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। আর প্রতি মাসে মুনাফা সাড়ে ২৫ লাখ টাকা। এর পাশাপাশি বিমানবন্দর এলাকাসহ বড় শহরগুলোতে অনানুষ্ঠানিকভাবে ডলার, রিয়াল, রুপিসহ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসাও হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নির্বাচিত খাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর এক সমীক্ষায় এ চিত্র উঠে এসেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, খুলনা, সিলেট ও বরিশালে সমীক্ষা চালিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় মুদ্রার লেনদেন হয় এমন ১০২টি স্থান, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে বিবিএস। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ২৮টি।
সমীক্ষা অনুযায়ী, অনানুষ্ঠানিকভাবে চলা এ ব্যবসা করতে গেলে প্রতি মাসে একজন ব্যবসায়ীকে গড়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এর মধ্যে নতুন টাকা কেনায় খরচ আট হাজার টাকা। রাস্তার পাশে বসতে চাঁদা হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় মাস্তানদের দিতে হয় প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা। আর জায়গা ভাড়া, পরিবহন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য আরও দুই হাজার টাকা খরচ করতে হয়।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকায় ২৮ স্থানে এ ধরনের ‘টাকার ব্যবসা’ রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ১৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়। চট্টগ্রামের ১৫টি স্থানে প্রতি মাসে সাড়ে সাত কোটি টাকা লেনদেন হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে সারা দেশে এ ব্যবসার মাধ্যমে ৫০৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগের বছরে এর পরিমাণ ছিল সাড়ে ৪৯৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিবিএসের যুগ্ম পরিচালক ও সমীক্ষা কর্মসূচির পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যবসাটি দাঁড়িয়ে গেছে। পুরোনো টাকা বদল কিংবা ভাংতি করতে অনেকেই ব্যাংকে যেতে চান না। আবার পরিবহন খাতের শ্রমিকদের বিশাল অংশ এই অনানুষ্ঠানিক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বড় নোটের ‘ভাংতি’ করেন। ফলে এ ব্যবসাটি অনেকের জীবিকার একটি উৎস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের অনানুষ্ঠানিক লেনদেন ঠেকাতে কোনো আইন নেই। আবার এভাবে মুদ্রা লেনদেনে নিষেধাজ্ঞাও নেই। কেউ যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলেন, আমাকে ১০০ টাকার নোট দেন, আমি আপনাকে ৯৮ টাকার সমপরিমাণ খুচরা টাকা দেব। তাহলে এটা কোনো আইনে ঠেকানো যাবে?’
বিবিএসের সমীক্ষায় অনানুষ্ঠানিক এ ব্যবসার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক মানি এক্সচেঞ্জগুলোর বিবরণও উঠে এসেছে। সারা দেশে ২৩০টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৬৭টি।
সমীক্ষা অনুযায়ী, একটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান বছরে গড়ে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকার বৈদেশিক মুদ্রা কেনে। আর বিক্রি করে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭৭ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। মানি এক্সচেঞ্জের প্রতি শাখা থেকে বছরে গড়ে ৫ লাখ ৮ হাজার টাকা আয় হয়।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি মানি এক্সচেঞ্জগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে এ দেশে মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা শুরু হয়।