তেলের দামের প্রভাব নিয়ে দুই মত দুই নীতিনির্ধারকের

.
.

জ্বালানি তেলের দাম কমালে বিনিয়োগ বাড়বে নাকি কোনো প্রভাব পড়বে না, তা নিয়ে দেশের দুই নীতিনির্ধারকের মধ্যেই রয়েছে মতের ভিন্নতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল মনে করেন, জ্বালানি তেলের দাম কমালে তাতে বিনিয়োগ বাড়বে। আর প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ-বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর মতে, তেলের দাম কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় না।
দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত এক সেমিনারে ভিন্ন ভিন্ন এ মত তুলে ধরেন তাঁরা। রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিরূপাক্ষ পাল। আর এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা।
নিজের মতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিরূপাক্ষ পাল বলেন, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম। তার সঙ্গে সমন্বয় করে দেশেও যদি দাম কমানো হয়, তাতে বিনিয়োগ বাড়বে। কারণ তেলের দাম কমলে মূল্যস্ফীতি কমবে। তাতে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কমে আসবে। আর আমানতের সুদ কমলে ঋণের সুদও কমবে। ঋণের সুদ কমলে আসলে তাতে বিনিয়োগ বাড়বে। এর বাইরে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় বৃদ্ধি ও বৈদেশিক বিনিয়োগের নিয়মকানুন সহজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
কিন্তু তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘তেলের দাম কমালেই বিনিয়োগ বাড়বে এমন মতকে আমি সমর্থন করি না। কারণ এ নিয়ে আমি অনেক অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা কেউ সেটি প্রমাণ করতে পারেননি।’ এ সময় নিজের মতের পক্ষে যুক্তি তুলে তিনি বলেন, ‘যখন তেলের দাম ১ টাকা বাড়ানো হয় তাতে বাস ভাড়া বেড়ে যায় ১০ টাকা। কিন্তু তেলের দাম কমানো হলে তখন আর বাস ভাড়া কমে না।’ তাই বিনিয়োগ বাড়াতে দেশের বিভিন্ন কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এ ছাড়া মূল প্রবন্ধে বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি বিশাল কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকেও বাংলাদেশ বেশ সুবিধাজনক এক অবস্থানে রয়েছে। এখন এসব সুবিধা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হলে দরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সঠিক পরিকল্পনা।’ বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘অবকাঠামোর চাহিদা কোনো সময়ই শেষ হবে না। তাই অবকাঠামোর শক্ত ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
দেশের আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনার জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদের মতে, শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামকে যানজটমুক্ত করে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।
সেমিনারে এস এ সামাদ বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে সহজ। তারপরও ‘ডুয়িং বিজনেস’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচের দিকে। অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ‘এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ঘুরতে হয়, ফাইল সহজে নড়ে না। ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হলেও ব্যবসায়ীরা উপকার পান না। তবে এটাও বুঝতে হবে, আমরা কী ব্যবস্থার মধ্যে থেকে কাজ করি। আমাদের অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান মোকাম্মেল হক।