১৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদে অবস্থান বদলেছে ইউজিসি

উপাচার্যবিহীন ১৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না মর্মে দেওয়া ঘোষণা থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সমালোচনার মুখে ইউজিসি এখন বলছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত ডিগ্রি বৈধ হবে এবং শিক্ষার্থীরা সাময়িক সনদ দিয়ে কাজ চালাতে পারবেন।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে এই অবস্থানের কথা জানান। নিজ কার্যালয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সাময়িক সনদে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সই থাকে, সেখানে উপাচার্যের সই থাকে না। সুতরাং, যখন রাষ্ট্রপতি উপাচার্য নিয়োগ করবেন, তখন তিনি মূল সনদে সই করবেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

কয়েক দিন আগে ইউজিসি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলে যে ১৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্যের সই ছাড়া সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ উপাচার্যের সই করা সনদও অবৈধ হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নামের তালিকা দিয়ে ইউজিসি বলেছে, রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের হালনাগাদ তালিকা ইউজিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের জেনে-শুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।

ইউজিসির এই বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিনটি পদ হলো উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ—যাঁদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এসব পদে বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি না থাকা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। কিন্তু এর দায় কেবল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একার নয়, সরকারেরও আছে। কারণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পদে নিয়োগের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে। মন্ত্রণালয়ে ফাইল যাওয়ার পর অনেক সময় বিলম্ব হওয়ার অভিযোগ আছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আজ্ঞাবহ উপাচার্য নিয়োগের চেষ্টা করে। কিন্তু ইউজিসি সেদিকে জোর না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, যা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন অনেকেই।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাঁরা বৈধ জেনেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এখন ইউজিসির এই বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা শুধু চাকরি নয়, সামাজিকভাবেও হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন। আবার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় পাল্টা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দাবি করেছে, তারা উপাচার্য নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু সরকারই নিয়োগ দিতে দেরি করছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, তাদের সনদ দেওয়ার সময়ই হয়নি। এমন অবস্থায় এই বিজ্ঞপ্তি তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে।

ইউজিসি-ঘোষিত এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নটর ডেম ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য’ ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম দুই বছরও পূর্ণ হয়নি। সুতরাং, এখনো সনদ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এ অবস্থায় সনদ অবৈধ ঘোষণার সুযোগ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, উপাচার্য নিয়োগে রাষ্ট্রপতির কাছে তিন সদস্যের একটি প্যানেল প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ফাদার যোসেফ এস পিশোতোকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই, সেগুলোতে তা নিয়োগের জন্য চাপ দেওয়া। কিন্তু বিজ্ঞপ্তির ভাষাগত ভুলের কারণে ইউজিসি সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও ক্ষুব্ধ। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বৈধ না অবৈধ—এটা বলার এখতিয়ার বর্তমান আইনে ইউজিসির নেই। আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারে।