পৌরনীতি ও নাগরিকতা

নমুনা প্রশ্নোত্তর 
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয় থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
‘ক’ দেশ
১। রাষ্ট্রপতি আইন সভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত
২। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগদান করেন।
৩। রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রীরা তাঁদের কাজের জন্য আইন সভার নিকট দায়ী থাকেন।
‘খ’ দেশ
১। রাষ্ট্রপতি জনগণের ভোটে নির্বাচিত।
২। তিনি নিজের পছন্দমতো মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগদান করেন।
৩। রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীরা তাঁদের কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী নন।

সরকারের বৈশিষ্ট্য
ক. অ্যারিস্টটলের মতে রাষ্ট্র কী? ১
খ. সার্বভৌমত্বকে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলা হয় কেন? ২
গ. ‘ক’ দেশে কোন শ্রেণির সরকার প্রচলিত আছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কোন দেশটির সরকারব্যবস্থাকে তুমি অধিক উপযোগী মনে করো? উত্তরের সপক্ষে মতামত দাও। ৪
নমুনা উত্তর:
ক: অ্যারিস্টটলের মতে, ‘কতিপয় গ্রাম ও পরিবারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সংগঠনই রাষ্ট্র।’
খ: সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের চরম ও চূড়ান্ত ক্ষমতা। এ ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র এর অভ্যন্তরে সকল ব্যক্তি, সংগঠন ও সংস্থার ওপর খবরদারি করতে পারে, আদেশ-নিষেধ জারি করতে পারে। এই ক্ষমতা বলেই রাষ্ট্র বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে নিজকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখে। আর সে জন্যই এই সার্বভৌমত্বকে একটি রাষ্ট্রের অপরাপর উপাদান অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলা হয়।
গ: ‘ক’ দেশে কোন শ্রেণির সরকার প্রচলিত আছে, এর উত্তর খুঁজে পেতে হলে প্রথমে ওই দেশের সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলোর দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। আমরা দেখেছি ক দেশের রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়ে সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত। এই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ মন্ত্রীরা রাষ্ট্রপতির আজ্ঞাবাহী নন। মন্ত্রী পরিষদের সব সদস্যের আইন বিভাগের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। তাতে বোঝা যায় এই দেশের মন্ত্রীরা আইন সভার সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। অর্থাৎ এ দেশে আইন সভার সঙ্গে শাসন বিভাগের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বা সম্পর্ক আছে। এখানে ক্ষমতা পৃথক্করণের কোনো নীতি কাজ করছে না। সর্বোপরি রাষ্ট্রপতি আইন সভার সদস্যদের ছাড়া নির্বাচিত হন বিধায় আইন সভার সদস্যরা অনাস্থা জ্ঞাপন করলে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগে বাধ্য হন।
সুতরাং ক দেশের রাষ্ট্রপতি নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। এ দেশের সব নির্বাহী ক্ষমতার মালিক মন্ত্রিসভা। ওই মন্ত্রিসভাকে আইন সভার কাছে জবাবদিহি করতে হয় এবং এখানে শাসন ও আইন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় থাকে বিধায় ‘ক’ দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রচলিত আছে বলা যায়।
ঘ: আমরা জেনেছি ‘ক’ দেশে সংসদীয় সরকার প্রচলিত আছে। এর বিপরীতে ‘খ’ দেশে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার কাজ করছে। এই দুই শ্রেণির সরকারব্যবস্থার মধ্যে কোনটি রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অধিক উপযোগী? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় সংসদীয় সরকার। সংসদীয় সরকার মূলত দলীয় সরকার। এই সরকারব্যবস্থায় অনেক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। যে রাজনৈতিক দল বা জোট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠসংখ্যক আসন পায় ওই দল বা জোট সরকার গঠন করে। যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় না সে দল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। এই ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল সংসদে বসে নানা জাতীয় ইস্যুতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ক্ষমতাসীন দলের কোনো সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ ক্ষতি করার আশঙ্কা থাকলে বিরোধী দল সংসদের বাইরেও আলোচনা করে মতামত দিয়ে থাকে। ক্ষমতাসীন দল এর বিপরীতে সরকারের অবস্থান এবং জনস্বার্থের কথা জনগণকে অবহিত করে। এরই মাধ্যমে জনসাধারণ তাদের করণীয় খুঁজে নেয়।
রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি ও তার মন্ত্রীরা আইন সভার কাছে জবাবদিহি করেন না। ফলে রাষ্ট্রপতি বা শাসন বিভাগ জনমত উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিত পারে। তা ছাড়া এই সরকারপদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির হাতে দেশের সর্বময় কর্তৃত্ব থাকায় তিনি কারও সঙ্গে পরামর্শ না করেও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
সুতরাং রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের তুলনায় সংসদীয় সরকার জনমতের দ্বারা অধিক প্রভাবিত হয়। ক দেশের সরকারব্যবস্থা রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে অধিক সহায়ক।
মো. শাহজাহান, ডাইরেক্টর অব পাবলিকেশন
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা