সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র

অধ্যায়-৪ 
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্রের ৪র্থ অধ্যায় থেকে সমাজবিজ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মৌল প্রত্যয় আলোচনা করা হলো। প্রত্যয়গুলো জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক ও উদ্দীপকের বিষয় হিসেবে বুঝে পড়তে হবে।

সমাজ
সহজ কথায় সমাজ বলতে সংঘবদ্ধ মানুষকে বুঝায় যাদের বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। অর্থাৎ কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পরস্পর নির্ভরশীল ও সংগঠিত জনসমষ্টিই হলো সমাজ। এ জনসমষ্টি একে অপরের সঙ্গে নানা সম্পর্কে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকে এবং এ সম্পর্কের ভিত্তিতে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করে। ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, যেসব সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে আমরা জীবন যাপন করি, তাদের সংগঠিত রূপই সমাজ। সমাজ গঠনের মূলেই রয়েছে পারস্পারিক সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা।
সম্প্রদায়
সম্প্রদায় বলতে এমন একটি জনগোষ্ঠীকে বুঝানো হয়, যারা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বাস করে এবং তাদের মধ্যে সম্প্রদায়গত মানসিকতা রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের পেশা ও জীবনযাপন পদ্ধতির মধ্যে মিল লক্ষণীয়। যেমন বেদে সম্প্রদায়, কুমোর সম্প্রদায়, হরিজন সম্প্রদায় ইত্যাদি। একইভাবে আমরা গ্রামীণ ও শহরের মানুষদের গ্রামীণ সম্প্রদায় ও শহুরে সম্প্রদায় হিসেবে বলতে পারি। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার সম্প্রদায়কে এমন একটি জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেন যারা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বাস করে এবং যারা একই ধরনের জীবনযাত্রা নির্বাহ করে। সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সংহতি দৃঢ়। সম্প্রদায়ের ভিত্তি হলো এলাকা ও সম্প্রদায়গত মানসিকতা।
সমাজকাঠামো
সমাজকাঠামো বলতে সমাজের গঠন প্রণালিকে বোঝায়। সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক, ব্যক্তির সঙ্গে বিভিন্ন দল ও অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানে সম্পর্কসহ সব ধরনের সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই সমাজকাঠামো গড়ে ওঠে। রাডক্লিপ ব্রাউন ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সব ধরনের সামাজিক সম্পর্ককেই সমাজকাঠামো বলে অভিহিত করেন। অন্যদিকে জিন্সবার্গ বলেন, সমাজকাঠামো হলো সমাজকে রূপায়ণ করে এমন প্রধান প্রধান সামাজিক গোষ্ঠী অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের যৌগিক সমন্বয়। মূলত সমাজকাঠামো হলো সামাজিক সম্পর্কের সমন্বিত রূপ।
মূল্যবোধ
প্রতিটি সমাজেই নিজস্ব কিছু মতাদর্শ ও ধ্যানধারণা থাকে যা ওই সমাজকে প্রভাবিত করে। আর সমাজে বিদ্যমান এসব ধ্যানধারণা ও মতাদর্শকে মূল্যবোধ বলা হয়। আর. টি. শেফার বলেন, ভালো বা মন্দ, কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং ঠিক বা বেঠিক সম্পর্কে সমাজে বিদ্যমান ধারণার নামই মূল্যবোধ। কোন কাজটি সমাজের জন্য কাঙ্ক্ষিত কোনটি অনাকাঙ্ক্ষিত তা সম্পর্কে সমাজের বিদ্যমান ধারণা। সমাজ ভেদে মূল্যবোধ ভিন্ন হতে পারে।
সংস্কৃতি
সহজ অর্থে সংস্কৃতি বলতে মানুষের সৃষ্টিকর্মকে বুঝায়। ব্যাপক অর্থে সংস্কৃতি হলো মানুষের জীবন প্রণালি (life style)। সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের অর্জিত আচরণ। আর. টি. শেফারের মতে সমাজ থেকে অর্জিত এবং সামাজিকভাবে উত্তরসূরিদের মধ্যে বর্তায় এমন আচরণসমূহের সামগ্রিক রূপই সংস্কৃতি। টেইলর সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের অর্জিত জ্ঞান, শিল্পকলা, রুচিবোধ, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আদর্শ প্রভৃতির জটিল সমন্বয়কে সংস্কৃতি বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং সংস্কৃতি হলো মানুষের সৃষ্ট আচার-আচরণের সামগ্রিক রূপ এবং তা সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জন করতে হয়।
মোহাম্মদ হেদায়েত উল্যাহ, প্রভাষক
এনায়েতবাজার মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম