বিতর্কের মঞ্চে স্বাগত

বিতর্কে অংশ নিতে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিনবঙ্গ থেকে এসেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: শহীদুল ইসলাম
বিতর্কে অংশ নিতে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিনবঙ্গ থেকে এসেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: শহীদুল ইসলাম

থমথমে পরিস্থিতি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে চলছে ফাইনাল রাউন্ডের বিতর্ক। যে চারটি দল লড়াই করছে, এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দল আছে দুটি। অপর দুটি দল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। সমান সমান এ লড়াইয়ে শেষতক চ্যাম্পিয়ন হলো কে? স্বাগতিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়? নাকি সুদূর চট্টগ্রাম থেকে কেউ এসে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ট্রফি? জানাচ্ছি একটু পরে। আগে পেছনের গল্পটা বলে নিই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি ডিবেটিং ফোরাম (বিএফডিএফ) আয়োজিত ‘কিউট-প্রথম আলো উন্মুক্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা ১.০’-এর মূলপর্বেই মুখোমুখি হয়েছিল রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ৩ থেকে ৫ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেছিল এই প্রতিযোগিতার আসর। সাধারণত বিতর্ক প্রতিযোগিতাগুলো জাতীয় পর্যায়ে হলেও এ আয়োজনটা ছিল একটু ভিন্ন। শর্ত ছিল, প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হলে বিতার্কিককে অবশ্যই উত্তরবঙ্গ অথবা দক্ষিণবঙ্গের কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে হবে। কেন এই নিয়ম? প্রধান নির্বাহী সদস্য ফাহমিদা আফরোজ জানালেন, ‘আমরা চেয়েছি নতুন বিতার্কিকদের সুযোগ করে দিতে। ঢাকার বিতার্কিকেরা প্রচুর সুযোগ পায়। এটাও বিবেচনায় ছিল।’

শুধু তাই নয়। আরও বেশ কিছু দিক থেকে অনন্য এ প্রতিযোগিতাটি। এখানে প্রতিযোগীদের ইংরেজি বিতর্ক করতে হয়েছে ‘ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি’ নিয়মে। সনাতনী বিতর্কের চেয়ে এটা কিছুটা আলাদা। বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুনলে সাধারণ দর্শকের চোখে ভাসে দুটো দল। এর মধ্যে এক দল পরাজিত হবে আরেক দল হবে জয়ী। কিন্তু ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি বিতর্কে লড়াই করে চারটি দল। এর মধ্য থেকে একটি দল পায় বিজয়ীর খেতাব।

৩ আগস্ট উৎসবের পর্দা ওঠার পর প্রথম আয়োজন ছিল বিতর্ক কর্মশালা। ‘উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিতার্কিকদের জন্য ইংরেজি বিতর্ক শেখার সুযোগ কম। তাই কর্মশালা আর প্রতিযোগিতা একসঙ্গে করা।’ বললেন ফাহমিদা। নির্ধারিত নিবন্ধন ফি পরিশোধের পর মিলেছে কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ। কর্মশালা নিয়ে বিতার্কিকদের আগ্রহও ছিল বেশ। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে মোট ৪০০ জন বিতার্কিকের সরব অংশগ্রহণ তারই প্রমাণ দেয়।

দ্বিতীয় দিন শুরু হয় মূল প্রতিযোগিতা। কলেজের ৬টি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি দল মিলিয়ে মোট ৪২টি দল অংশগ্রহণ করে সেখানে। এ আয়োজনের আহ্বায়ক তানভির আহমেদ জানালেন, ‘ট্যাব ফরম্যাটে বিতর্কের আয়োজন করেছি আমরা। প্রথম দিন চার রাউন্ড বিতর্কের পর ১৬টি দল ব্রেক করে। এই ১৬টি দল পরে নকআউট পর্বে অংশ নেয়।’

শেষ দিন অনুষ্ঠিত হয় চারটি কোয়ার্টার ফাইনাল, দুটি সেমিফাইনাল আর ফাইনাল। ফাইনাল বিতর্কের পর বসে ‘আমরাই বাংলাদেশ’ নামের ‘পলিসি ফোরাম’। পলিসি ফোরামের বক্তা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক দলের সাবেক দলনেতা ও বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের (বিডিএফ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ মিশু। এ ছাড়া বিতার্কিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিডিএফের উপদেষ্টা অধ্যাপক আজম শান্তনু, বিডিএফের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিরূপাক্ষ পালসহ সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। তরুণেরা বাংলাদেশকে কীভাবে দেখেন, কীভাবে দেখতে চান—আলোচনা হয় এসব বিষয়ে। এরপর বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার।

আর পুরস্কারটা কে পেল শেষ পর্যন্ত? না। স্বাগতিক দল দুটো খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিতার্কিকদের মধ্যে চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটা গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (সিইউডিএস) ‘এ’ দলের দখলে।