মুড়ি উৎসব!

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও চেখে দেখেছেন ঝালমুড়ির স্বাদ। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও চেখে দেখেছেন ঝালমুড়ির স্বাদ। ছবি: সংগৃহীত

ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় সাড়ে পাঁচটা। বিকেলের আলতো আলো এসে পড়েছে ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসে। সন্ধ্যা হতে তখনো বেশ খানিকটা বাকি। এরই মধ্যে খেলার মাঠের এক কোণে জড়ো হয়েছেন প্রায় এক শ শিক্ষার্থী। তাঁদের সবার হাতেই মুড়ির ঠোঙা।

ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশসহ প্রায় ১২টি দেশের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সবাইকে নিয়ে ১৬ আগস্ট এই ‘মুড়ি উৎসবের’ আয়োজন করেছিলেন সেখানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশিরা।

উদ্দেশ্য একটাই, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও খাবারের সঙ্গে ভিনদেশিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। চার বছর ধরে চলছে এই ‘মুড়ি উৎসব’। অনেক দিন পর সবাই বেশ মজা করে খাচ্ছিলেন চানাচুর, পেঁয়াজ আর মরিচ মাখানো মুড়ি। সরষের তেলও মিলে গিয়েছিল কোথা থেকে যেন।

অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে ঝালমুড়ি একদম অচেনা। শ্রীলঙ্কার সাকুনা গোমেজ তেমনই একজন। তাঁদের দেশে এমন মুড়ির প্রচলন আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘একবার বাংলাদেশ নিয়ে তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্রে খাবারটি দেখেছিলাম। এবারই প্রথম চেখে দেখার সৌভাগ্য হলো।’ আফগান শিক্ষার্থী এহসান রেজা ঝালে কাবু হলেও বেশ মজা করে খাচ্ছিলেন মুড়ি। খাবারটা নাকি তাঁর বেশ পছন্দ হয়েছে!

উদ্যোক্তাদের একজন পিএইচডি গবেষক মো. বাবু মিয়া জানান, প্রথম বছর কেবল বাংলাদেশিরা নিজেদের মধ্যে এমন পার্টির আয়োজন করলেও পরের বছর থেকে সব দেশের শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। অন্য দেশের শিক্ষার্থী বন্ধুদের কাছেও ঝালমুড়ি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু দিল্লির সবখানে মুড়ি তেমনটা পাওয়া যায় না। তাই সংগ্রহ করতে বেশ বেগ পেতে হয়।

আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ এটিকে একটি মিলনমেলা হিসেবেই দেখতে চান। এই উৎসবকে বাংলাদেশকে চেনার একটি প্রতীকী আয়োজন মনে করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে অন্যদের সঙ্গে সম্প্রীতি ও সংস্কৃতি বিনিময়টাও হয়ে ওঠে।

দিল্লি এসে অনেক দিন ধরেই দেশের ক্যাম্পাসের ঝালমুড়িটা খুব মিস করছিলেন মাহমুদুল হাসান। এই আয়োজনের মাধ্যমে মুড়ি ভোজনের পাশাপাশি বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে পারায় খুশি তিনি।

ধীরে ধীরে সন্ধ্যা গড়াতে থাকে। চায়ে চুমুক দেওয়ার পাশাপাশি জমতে থাকে আড্ডাও। বিদেশি শিক্ষার্থীরা ততক্ষণে ‘ঝালমুড়ি’ শব্দটি বলতে শিখে গেছেন। বিদায় নেওয়ার আগে আরেকবার সবাই মিলে ঝালমুড়ির পাশাপাশি একযোগে বলে ওঠেন ‘বাংলাদেশ’।