চলচ্চিত্রের কারখানা

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটির সদস্যদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটির সদস্যদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

‘সমাজ ও দেশের বিভিন্ন অসংগতি, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামা ছাড়াও আন্দোলনের অনেক বড় একটা মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এসব অসংগতি, অন্যায়-অবিচার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব,’ বলছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আওসাফুল ইসলাম। ‘আমরা মূলত ক্লাবটা শুরু করেছি এসব লক্ষ্য নিয়ে এবং অবশ্যই চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে।’

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি বা ‘মাভাবিপ্রবি ফিল্ম সোসাইটি’র পথচলা শুরু হয় ২০০৭ সালে। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকে ক্লাবটি। এরপর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আবার জোরেশোরে মাঠে নামেন এক ঝাঁক চলচ্চিত্রপ্রেমী। তাঁদের হাত ধরেই বর্তমানে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে সংগঠনটি।

‘বর্তমানে আমাদের মোট সদস্য ৬০ জনের বেশি,’ বললেন সভাপতি মীম নূর হোসেন। ‘প্রতিবছর নতুন সেশন শুরু হলে সদস্য সংগ্রহ সপ্তাহ চলে। তখন ফরম সংগ্রহ করে সদস্য হতে হয়। ফরম সংগ্রহের পর কার্যকরী মিটিং থেকে শুরু করে এক মাস তাদের কার্যক্রমের ভিত্তিতে সদস্যপদ দেওয়া হয়।’

প্রতি মাসে দুটি সভা হয় সদস্যদের। প্রথম সভায় একটি চলচ্চিত্র দেখানো হয়। এই প্রদর্শনী থাকে সবার জন্য উন্মুক্ত। পরবর্তী সভায় আলোচনা করা হয় সেই চলচ্চিত্র নিয়ে। কখনো সভার দিন ছবি দেখানো সম্ভব না হলে সেটি সদস্যরা যাঁর যাঁর মতো করেই দেখে নেন এবং পরে আলোচনায় বসেন।

এ ছাড়া সারা বছর চলচ্চিত্র-সম্পর্কিত নানা আয়োজন থাকে মাভাবিপ্রবি ফিল্ম সোসাইটির। ক্লাবের সভাপতি বললেন, ‘সিনেমা জগতের বরেণ্য ব্যক্তিদের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে আমরা কিছু না কিছু আয়োজনের চেষ্টা করি। আর প্রতিবছর জহির রায়হান, তারেক মাসুদ ও সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে বিশেষ আয়োজন করি। কোনোবার হয়তো তাঁদের ছবি দেখানো হয়। কোনো কোনোবার প্রবন্ধ পাঠ, আলোচনা সভারও আয়োজন থাকে।’

শুধু এসবই নয়। সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রও তৈরি করে তারা। গত দেড় বছরে একটি তথ্যচিত্র ও দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি তৈরি করেছে মাভাবিপ্রবি ফিল্ম সোসাইটি। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে তারা।

নামে ফিল্ম সোসাইটি হলেও সংগঠনটির কার্যক্রম শুধু চলচ্চিত্র নিয়েই থাকে না। বরং সিনেমার বাইরে আরও বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়মিত সরব অংশগ্রহণ রয়েছে সদস্যদের। এ বছর স্বাধীনতা দিবসে বিশাল এক সাদা কাপড়ে হাতের ছাপ দিয়ে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁরা। নববর্ষে পুরো ক্যাম্পাসে আলপনা ও মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্ব পায় যে দুটি সংগঠন, তাদের মধ্যে ফিল্ম সোসাইটি একটি।

প্রিয় লেখক ও পরিচালক হ‌ুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনটিতে ক্যাম্পাসে ‘হিমু দিবস’ পালন করেন এই ক্লাবের সদস্যরা। এদিন ক্লাবের সব সদস্য হ‌ুমায়ূন আহমেদের তৈরি বিভিন্ন চরিত্র সেজে একটি র‍্যালি বের করেন। কেউ মিসির আলী, কেউ শুভ্র, কেউবা বাকের ভাই সেজে বের হন। হলুদ পাঞ্জাবি-নীল শাড়িতে হিমু আর রুপারও দেখা মেলে।

এত সব আয়োজনের ফলে ক্লাবের সদস্যরা শিখতে পারছেন অনেক কিছু। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মীর মাইনুল বললেন, ‘২০১৫ সাল থেকে ক্লাবের সঙ্গে কাজ করছি। চলচ্চিত্র বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছি ক্লাব থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তৈরি করা ডকুমেন্টারিটাতে কাজের সুযোগ পেয়েছি।’

কথা হলো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানালেন মীম নূর। ‘এই সেমিস্টারের পরই একটা আন্তবিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে চাই। এটা প্রতিবছর চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমাদের। পাশাপাশি একটা চলচ্চিত্র-সম্পর্কিত অলিম্পিয়াডও রাখতে চাই।’