বিশ্বের সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয় কোনগুলো

উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন জরিপে যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বস্থানীয় প্রকাশনা টাইমস হায়ার এডুকেশন। সাপ্তাহিক এ সাময়িকীটি প্রতি বছর বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা প্রকাশ করে থাকে। পাঁচটি বিভাগে মোট ১৩টি আলাদা সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে আবিষ্কার কিংবা গবেষণা থেকে আয়, আন্তর্জাতিক বৈচিত্র্য, শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা এবং গবেষণার প্রভাব।

২০১৬-১৭ মেয়াদে টাইমস হায়ার এডুকেশনের জরিপে বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উঠে এসেছে অক্সফোর্ড। আগের মেয়াদে (২০১৫-১৬) দুইয়ে ছিল ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো এ বিশ্ববিদ্যালয়।

দ্বিতীয় ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ক্যালটেক নামেই যেটি সুবিখ্যাত। আগেরবার শীর্ষে থাকলেও এবার একধাপ পতন ঘটেছে বেসরকারি মালিকানাধীন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। নাসার স্বায়ত্তশাসিত জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরিও রয়েছে এখানে। র‍্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি আগেরবারও র‍্যাঙ্কিংয়ে তিনে ছিল।

গতবারের র‍্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় থেকে দশম স্থান পর্যন্ত সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানে এবার কোনো নড়চড় ঘটেনি। চতুর্থ থেকে দশম স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যথাক্রমে—কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডন, সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

এ তালিকায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে তেমন কোনো সুখবর নেই। তালিকার এক হাজারের এ পাশে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জায়গা করে নিতে পারেনি। বিশ্বে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নিয়ে আরেকটি ফিচার প্রকাশিত হবে। এর আগে আসুন জেনে নিই বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ বিদ্যাপীঠের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি—

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এখনো সেরা বিদ্যাপীঠ।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এখনো সেরা বিদ্যাপীঠ।

১. অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার সঠিক দিন-তারিখ কারও জানা নেই। তবে ১০৯৬ সাল থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের প্রমাণ পেয়েছেন ঐতিহাসিকেরা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যালামনাইদের ‘অক্সনিয়ান’ বলা হয়। বহু বিখ্যাত ব্যক্তির শিক্ষাজীবন কেটেছে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪ জন ইংরেজ রাজা, ৮ জন বিদেশি রাজা, ৪৭ জন নোবেল পুরস্কারজয়ী, ২৫ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ২৮ জন বিদেশি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী, ৭ জন ‘সেইন্ট’ বা ধর্মযাজক, ১৮ জন ‘কার্ডিনাল’ এবং একজন পোপ পড়েছেন অক্সফোর্ডে। অস্কার ওয়াইল্ড, স্টিফেন হকিং, মার্গারেট থ্যাচার, রুপার্ট মারডকরা উঠে এসেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।

২. ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি
ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডোনায় অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন ৩৪ জন নোবেল বিজয়ী। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নানা জাতীয় ক্ষেত্রে বড় রকমের অবদান রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির। এখানে নাসার বেশির ভাগ মহাশূন্যযানের ডিজাইন ও কার্যকারিতা দেখাশোনা করা হয়।

গবেষণার জন্য সুনাম রয়েছে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের।
গবেষণার জন্য সুনাম রয়েছে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের।

৩. স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
গবেষণার জন্য বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিলিকন ভ্যালি’র সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত এ বিদ্যাপীঠ থেকে বেরিয়ে এসেছেন দারুণ সফল কিছু মানুষ। গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন পড়েছেন এখানে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিও একসময় ছাত্র ছিলেন স্ট্যানফোর্ডের। এ ছাড়া গলফ তারকা টাইগার উডস, অভিনেত্রী রিজ উইদারস্পুন, চেলসি ক্লিনটনের মতো ব্যক্তিত্বরা পড়েছেন জেন ও লেল্যান্ড স্ট্যানফোর্ডের প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।

৪. কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
ইংরেজি ভাষাভাষী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। ১২০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কেমব্রিজে পড়েছেন ৯০ জন নোবেল বিজয়ী। এখানে লেখাপড়া করা বিখ্যাত মানুষের অভাব নেই। যেমন ধরুন: আইজ্যাক নিউটন, স্টিফেন হকিং, চার্লস ডারউইন, জগদীশ চন্দ্র বসু, শ্রীনিবাস রামানুজন।

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমআইটি এখনো স্বনামধন্য।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমআইটি এখনো স্বনামধন্য।

৫. ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি
ভৌত বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য এমআইটির জুড়ি মেলা ভার। ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২৮ সালে বানানো হয় পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন কম্পিউটার ‘হুইয়ার্লউইন্ড ১’। এমআইটির জাদুঘরে এখনো তা সংরক্ষিত আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা ২৫ হাজার ৮০০ প্রতিষ্ঠান চলছে গোটা পৃথিবীতে। নভোচারী বাজ অলড্রিন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান, খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষাবিদ সালমান খানের মতো মানুষেরা পড়েছেন এমআইটিতে।