ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে প্রশ্ন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ‘আই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। এমন প্রশ্নের প্রতিবাদ ও জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

গত বুধবার অনুষ্ঠিত ‘আই’ ইউনিটের দুই নম্বর সেট কোডের প্রশ্নপত্রের ৪১ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘মুসলমান রোহিঙ্গাদের উপর মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে?’ ৭৬ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম কি?’ এর চারটি বিকল্প উত্তর হিসেবে লেখা রয়েছে পবিত্র কোরআন শরিফ, পবিত্র বাইবেল, পবিত্র ইঞ্জিল ও গীতা। গীতার আগে ‘পবিত্র’ লেখা নেই।

এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট। মানববন্ধনে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি প্রদীপ মার্ডী বলেন, উত্তরের বিকল্পগুলোর মধ্যে যদি চারটি ধর্মগ্রন্থের নাম দেওয়া থাকে, তাহলে পরীক্ষার্থীরা এর সঠিক উত্তর কী দেবেন? চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় এমন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র ফেডারেশনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের অধিকর্তা (ডিন) মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একদিক দিয়ে এটাকে ভুল বলা যাবে না। কারণ, শিল্পকলার ধারণা আসলে তৈরি হয়েছিল ধর্মীয় চেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে, সে কারণেই হয়তো এ ধরনের প্রশ্ন চলে এসেছে। প্রাচীন গুহাবাসী এ কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ জন্য পরীক্ষার সময় তিনি প্রতিটি হলের নিয়ন্ত্রণকক্ষে জানিয়ে দিয়েছেন, এই প্রশ্নের সব উত্তরই সঠিক। তার পরও ব্যাপারটা কীভাবে ঘটল, বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বসে তা খতিয়ে দেখা হবে। এ জন্য কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবস্থা গ্রহণের তো কিছু নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁরা ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছেন। জানার পরই তাঁরা চারুকলা অনুষদের ডিনকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ডিনকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে। এই প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে কোন কোন শিক্ষক জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। তাঁরা এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে কোনোমতেই এটা ভুলক্রমে হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী এই প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।