চাকরির প্রথম পরীক্ষাতেই বাজিমাত!

৩৬ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইসমাইল হোসেন। ছবি: আবদুস সালাম
৩৬ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইসমাইল হোসেন। ছবি: আবদুস সালাম

ইসমাইল হোসেনের জন্য ৩৬তম বিসিএস ছিল জীবনের প্রথম ‘চাকরির পরীক্ষা’। আর প্রথম পরীক্ষাতেই বাজিমাত করে প্রশাসন ক্যাডারে হলেন দেশসেরা! ইসমাইল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন।

যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি আর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। ফলাফলও ভালো। দুটোতেই জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম বছর পরীক্ষা দিয়ে কোথাও ভর্তির সুযোগ পেলেন না। পরের বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন রসায়নে ভর্তির সুযোগ হলো, তখন বন্ধুদের অনেকেই ভালো ভালো বিষয়ে পড়ছেন। এসব নিয়ে মন খারাপ ছিল ইসমাইলের। তবে মনে মনে ঠিক করেছিলেন, এমন একটা কিছু করবেন যা অন্যদের চমকে দেবে।

ইসমাইল বলেন, ‘রসায়ন পড়তে ভালো লাগত না। বাধ্য হয়েই পড়তাম। তবু প্রথম কয়েকটি সেমিস্টারে ফলাফল ভালোই হয়েছিল।’ কিন্তু পরে তিনি আর ভালো ফলাফল ধরে রাখতে পারেননি। এরই মধ্যে স্নাতকোত্তর শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছেন। বড় বোন বিসিএসের জন্য পড়ছিলেন তখন। তিনিই বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিলেন ইসমাইলকে। শুরুতে তেমন ‘সিরিয়াস’ না থাকলেও পরে একধরনের সংকল্প পেয়ে বসে তাঁকে। বলছিলেন, ‘প্রথমবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছি শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বড় ভাই ভালো করে পড়াশোনা করার কথা বললেন। আমিও ভাবলাম, পরীক্ষা যেহেতু দিচ্ছি, একবারই দেব। আর যেন দিতে না হয়। একধরনের জেদ কাজ করল আমার মধ্যে। স্নাতক শেষ সেমিস্টারে এসে বিসিএসের জন্য টুকটাক পড়াশোনা করতে থাকলাম। কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে পড়া চালিয়ে গেলাম। মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারের পর ৩৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকেই নিজেকে তৈরি করতে লাগলাম। ফলাফল বের হওয়ার পর দেখলাম লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়েছি। এ সময় আবার মাস্টার্স শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা। দুটো পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন হলেও হাল ছাড়িনি। শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হলো।’

পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত টিউশনি করতেন বলে ভালো পারতেন ইংরেজি আর বিজ্ঞান। এ ছাড়া বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছেন বলে গণিতেও বেশ ভালো দখল ছিল। ইসমাইল লিখতে ভালোবাসতেন। কোনো কিছু গুছিয়ে লেখা তাঁর পুরোনো অভ্যাস। লিখিত পরীক্ষায় এই দক্ষতাই কাজে লাগালেন তিনি। পরীক্ষা ভালো হলো। অনেকটা নিশ্চিত ছিলেন, লিখিততে নির্বাচিত হবেন। এই ধাপও শেষ করলেন। সময় এল মৌখিক পরীক্ষার। পরীক্ষা দিলেন। খুব ভালো বা খারাপ কোনোটাই নয়, পরীক্ষা হলো মাঝামাঝি রকমের। প্রথম পছন্দ প্রশাসনে হলেও তিনি আশা করছিলেন, অন্তত শিক্ষা ক্যাডার পাবেন।

ফলাফলের দিনটার কথা বলছিলেন ইসমাইল। ‘যেদিন চূড়ান্ত ফলাফল দেবে, সেদিন আমি ফোনের রিংটোন অফ করে রেখেছিলাম। সন্ধ্যা গড়াতেই ফোন হাতে নিয়ে দেখি অনেক নম্বর থেকে ফোন এসেছে। এরই মধ্যে এক বন্ধু ফোন দিয়ে বলল, “তুই প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছিস।” আমার বিশ্বাস হলো না। পরে রেজাল্ট নিজেই দেখলাম। তখনো যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। আনন্দে কেঁদে ফেললাম। আমার ফলাফল শুনে বাবা-মা, ভাইবোন সবার চোখেই পানি চলে এসেছে।’

ইসমাইলের বাবা এ এফ এম কবির আহমেদ ঢাকাতেই ব্যবসা করেন। মা ফয়জুন্নেসা গৃহিণী। ছোট ভাই এইচএসসি পাস করে বাবার সঙ্গে ব্যবসার কাজ করছেন। বড় বোন আইনজীবী। আরেক বোন ৩৫তম বিসিএসে নন ক্যাডারে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হয়েছেন।

চাকরির আর কোনো পরীক্ষা দেবেন না ইসমাইল। তিনি বলেন, ‘প্রথম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছি। এখানে থেকেই দেশের সেবা করতে চাই।’

ইসমাইলের ৫ পরামর্শ

বিসিএসে সফলতার রহস্য জানতে চেয়েছিলাম ইসমাইল হোসেনের কাছে। কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি? কোন বৈশিষ্ট্য তাঁকে দেশের লাখো বিসিএস পরীক্ষার্থীর তুলনায় এগিয়ে রাখল? তাঁর অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আগামী দিনগুলোতে যাঁরা বিসিএস পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের জন্য পরামর্শ হিসেবে কাজ করবে। ইসমাইল যা বললেন:

১.    আমি মনে করি যেকোনো কাজ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য খুব ভালো পরিকল্পনা দরকার। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পরিকল্পনা আমি আগেই সাজিয়ে নিয়েছিলাম।

২.    এলোমেলোভাবে পরিশ্রম করলে সেটা কোনো কাজে আসে না। পরিশ্রম করতে হলে সেটা সঠিক পদ্ধতিতে করতে হবে। বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে কৌশলী হতে পারলে সেটা ভালো ফলাফলে সহায়ক হয়।

৩.    পড়াশোনায় মন দেওয়ার জন্য আমি বন্ধুদের সঙ্গে অহেতুক আড্ডা বাদ দিয়েছিলাম। এটা হয়তো অন্যদেরও কাজে আসতে পারে।

৪.    নিজেকে নিজে পুরস্কৃত করেছি। বড় কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেলেছি। তারপর ছোট ছোট কাজগুলোতে সফল হলে নিজেকে ছোট ছোট পুরস্কার দিয়েছি।

৫.    অনেক বেশি মডেল টেস্ট দিয়েছি। এতে করে আমার দুর্বলতাগুলো জানতে পেরেছি। আত্মবিশ্বাসও একটু একটু করে বেড়েছে।