প্রায় ৩১ লাখ খুদে পরীক্ষার্থীর সমাপনী পরীক্ষা আজ শুরু

প্রায় ৩১ লাখ খুদে পরীক্ষার্থী নিয়ে আজ রোববার শুরু হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় জাতীয়ভাবে এটি দেশের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। তবে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ঘোষণা করার পরও তা বাস্তবায়ন না করে পঞ্চম শ্রেণি শেষে এই পরীক্ষা বহাল রাখা নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে সমালোচনা আছে। এই পরীক্ষাকে শিশুদের ওপর একধরনের ‘বোঝা’ বলেও অনেক অভিভাবক অভিযোগ করে আসছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এবারে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পরীক্ষার্থী ২৮ লাখ ৪ হাজার ৫০৯ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১৫ লাখ ৪ হাজার ৫২৪ জন এবং ছাত্র ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৫ জন। মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৬৬ জন। মোট ৭ হাজার ২৭৯টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা।

আজ শুরু হয়ে এই পরীক্ষা শেষ হবে ২৬ নভেম্বর। সময়সূচি অনুযায়ী, বেলা ১১টায় শুরু হয়ে পরীক্ষা শেষ হবে দেড়টায়। তবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীরা বাড়তি ২০ মিনিট পাবে। ছয়টি বিষয়ে এই পরীক্ষা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। দুর্গম এলাকায় ২০৪টি কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতি জেলায় পরীক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য ‘ভিজিল্যান্স টিম’ গঠন করা হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, পঞ্চম শ্রেণি শেষে উপজেলা বা পৌরসভা বা থানা পর্যায়ে সবার জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সরকার ২০০৯ সালে অনেকটা হঠাৎ করেই জাতীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে। এটা এখন স্থায়ী হয়ে গেছে।

কিন্তু এই পরীক্ষা নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে। ২০১৫ সালে বেসরকারি সংস্থার মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দেশের ৮৬ দশমিক ৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে হয়েছে। আর ৭৮ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে কোচিং ছিল বাধ্যতামূলক। পাসের হার বাড়াতে খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়ম হচ্ছে। পরীক্ষার হলে দেখাদেখি করে লেখা এবং উত্তরপত্র মেলানোর জন্য শেষের ৪০ থেকে ৬০ মিনিট অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই পরীক্ষার জন্য প্রাইভেট পড়ার নির্ভরশীলতা বাড়ছে, পাঠ্যবইকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে গাইডবই। শিশুরা শেখার আনন্দ পেতে এবং সৃজনশীল হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে অভিভাবকেরা মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান গত বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথম আলোর এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকার যত দিন না সিদ্ধান্ত বদল করছে, তত দিন পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলবে।