যুক্তিতর্কের যাত্রা

ডিইউডিএসের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
ডিইউডিএসের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

‘আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল ভালো কিছু হবে। শুরু থেকেই ভালো করছিলাম। ফাইনালে উঠলাম, জিতেও গেলাম।’ বলছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য শাইয়ান সাদিক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ দলকে জিতিয়েছেন। পাশাপাশি নিজে হয়েছেন ফাইনাল ও পুরো টুর্নামেন্টের সেরা বক্তা।

বাংলাদেশের বড় বিতর্ক সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি হলো ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি বা ডিইউডিএস। তাদের বর্তমান সদস্য এক হাজারেরও বেশি। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের স্বতন্ত্র বিতর্ক সংগঠন রয়েছে। পাশাপাশি ৩০টির বেশি বিভাগেরও রয়েছে নিজস্ব বিতর্ক ক্লাব। সহযোগী সংগঠন হিসেবে সব ক্লাবের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধনের কাজটি করে ডিইউডিএস।

এত সদস্যের মধ্যে সেরা বিতার্কিকদের খুঁজে বের করতে বেশ হিমশিম খেতে হয় ডিইউডিএসকে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা একটি সদস্য সংগ্রহ সপ্তাহ পালন করে থাকি। তখন সপ্তাহজুড়ে সদস্য আহ্বান করা হয়। কখনো কখনো মাসজুড়ে আমরা সদস্য সংগ্রহ করি। আগ্রহীদের ভাইভা নিয়ে এরপর ক্লাবের সদস্যপদ দিই।’ নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে এরপর একটি কর্মশালা আর একটি বারোয়ারি বিতর্কের আয়োজন করা হয়। বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সবাইকে অংশ নিতে হয়। সেখান থেকে বাছাই করা হয় ৪৮ জনকে। তাদের নিয়ে তৈরি করা হয় ১৬টি দল। এই ১৬ দল নিয়ে শুরু হয় বিতর্কযুদ্ধ ‘ডিবেটার সার্চ’। পরে এখান থেকেই নতুন বিতার্কিকদের খুঁজে বের করা হয়।

বিতার্কিক খোঁজার পর শুরু হয় বিতর্কচর্চা। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন নিয়ম করে বিতর্ক হয় এখানে। প্রতি মঙ্গলবার ইংরেজি আর বৃহস্পতিবার বাংলা বিতর্ক অনুশীলন করেন তাঁরা।
১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত বেশ ভালোমতোই কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি। এ বছর সংগঠনটির ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বড় একটা আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত ডিইউডিএসের সদস্যরা। এ ছাড়া অন্যান্য বাৎসরিক আয়োজন তো আছেই। নোমান বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা আন্তহল, অান্তবিভাগ, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করি। সব প্রতিযোগিতায়ই বাংলা ও ইংরেজি বিতর্ক থাকে।’ এগুলো ছাড়াও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ বিতর্ক আয়োজন করেন তাঁরা। আবার বিভিন্ন বিশেষ দিবসে থাকে বিশেষ আয়োজন। বিজয় দিবসে প্ল্যানচেট বিতর্ক, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা বিতর্ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্র-শিক্ষক বিতর্ক আয়োজন করে ডিইউডিএস।

আয়োজনের মতো ট্রফিকেসটাও বেশ সমৃদ্ধ তাদের। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়াও আরও বেশ কিছু টুর্নামেন্টে ভালো করেছে তারা। শাইয়ান সাদিকের মতে, এই পুরস্কারগুলো ধারাবাহিক সাফল্যের ফল। বলছিলেন, ‘এ বছর আমরা অনেকগুলো বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। বাংলাদেশ সোসাইটি অব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতসহ বেশ কয়েকটি বড় আয়োজনে আমরা চ্যাম্পিয়ন। এর মধ্যে বাংলা ও ইংরেজি দুই বিভাগেই পুরস্কার আছে আমাদের। রানার্সআপ হয়েছি আরও অনেক টুর্নামেন্টে। আবার সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান ইংলিশ অলিম্পিকেও ব্রেক করেছে ডিইউডিএস।’

কয়েক দিন আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরল তাদের একটি দল। সেখানে আশানুরূপ ফল না পেলেও সামনের প্রতিযোগিতাগুলোয় ভালো করার লক্ষ্য তাদের। সাধারণ সম্পাদককে সামনের আয়োজন নিয়ে বেশ ব্যস্ত মনে হলো। নোমান বললেন, ‘সারা দেশের স্কুল-কলেজের বিতার্কিকদের নিয়ে আমরা একটা বড় বিতর্ক উৎসব করার চেষ্টা করি। কয়েক বছর ধরে সেটা হচ্ছে না। এ বছর আবার করতে চাই। এ ছাড়া বর্ষপূর্তি, বাৎসরিক আন্তবিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু প্রতিযোগিতা নিয়ে সবাই বেশ রোমাঞ্চিত।’