সুনন্দার সন্ধান

সুনন্দা সরকার। ছবি: সংগৃহীত
সুনন্দা সরকার। ছবি: সংগৃহীত

সুনন্দা সরকার যখন রংপুর মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে উঠেছিলেন, কাপড়চোপড়, বইখাতার পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে ছিল একটা হারমোনিয়াম। পাঠক, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, পড়ালেখার পাশাপাশি সুনন্দা গানের চর্চা করেন। আর? ‘আমাদের কলেজে যে মেডিসিন ক্লাব ইউনিটটা আছে, সেখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করি। কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের অনুষ্ঠানগুলো উপস্থাপনা করি। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে গড়ে তোলা শহীদ রফিক স্মৃতি পাঠাগারটার খোঁজখবর রাখি...।’ তালিকা লম্বা হতেই থাকে।

সুনন্দার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে, তাঁর কণ্ঠে তখন রাজ্যের ক্লান্তি। কারণটা কী? ‘আজ গিয়েছিলাম শীতের কাপড় কিনতে।’ বললেন তিনি। জানা গেল, এই কাপড় নিজের জন্য নয়। উত্তরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষকে উষ্ণতা দেওয়ার জন্য। কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে কেনা হয়েছে শীতের কাপড়। এই ক্লান্তি কাটলেই বের হবেন শীতবস্ত্র বিতরণ করতে। ফলে তাঁর কাছ থেকে বেশি সময় নেওয়া যাচ্ছে না।

চট করে কিছু তথ্য জেনে নিলাম, সেগুলোই বলি। সুনন্দা সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন যথাক্রমে মানিকগঞ্জের সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে। দুটো জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) আছে তাঁর ঝুলিতে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। অষ্টম শ্রেণিতে জেলায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন।

২০১১ সালে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো আয়োজিত ইন্টারনেট উৎসবে অংশ নিয়ে সেরা সাতে জায়গা পেয়েছিলেন। সুনন্দা বলেন, ‘এই অর্জন আমার কাছে আলাদা। কারণ, এরপর থেকে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আমি যে চাইলে পারি, সেটার প্রথম প্রমাণ পেয়েছিলাম এখানে। আমার চোখে এখনো ভাসে—জিপি হাউসের মঞ্চের বড় পর্দায় আমার ছবি, নেপথ্যে আমার সম্পর্কে বলা হচ্ছে...ভাবলে এখনো পুলকিত হই। আমি প্রথম হতে পারিনি, কিন্তু আত্মবিশ্বাস পেয়েছি।’ সে সময় প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সুনন্দা বলেছিলেন, তিনি ডাক্তার হতে চান। ছয় বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে তিনি সত্যিই ডাক্তার হতে যাচ্ছেন। তখন প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছিল, ‘ইফ ইউ ট্রাই, ইউ মাইট। ইফ ইউ ডোন্ট, ইউ ওন্ট।’ (তুমি যদি চেষ্টা করো, হয়তো পারবে। যদি না করো, নিশ্চয়ই পারবে না।) এটা তাঁর পছন্দের উক্তি। জানা গেল এখনো তা-ই আছে। তিনি এখনো চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন। কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসেন।

এবার গানের কথায় ফেরা যাক। সুনন্দার মতে, গানের কারণেই ক্যাম্পাসে তাঁর পরিচিতি। জানালেন, গান শেখার শুরু বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্পী বাবা সুজিৎ সরকারের কাছ থেকে। ‘আমার বয়স যখন সাত বছর, তখন থেকেই বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যে গানের চর্চা করতাম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু ক্লাস থ্রিতে। আমার বাবা এবং আমার আরেক সংগীত গুরু মাহমুদ হাসান একটা গানের স্কুল পরিচালনা করতেন—সূচনা সংগীত বিদ্যানিকেতন। সেখানে আমি উচ্চাঙ্গসংগীত ও রবীন্দ্রসংগীতে তালিম নিয়েছি।’ সেই গান এখনো তাঁর নিত্যসঙ্গী। সঙ্গে আছে মেডিসিন ক্লাবের ফিন্যান্স সেক্রেটারির দায়িত্ব। জানা গেল, ক্লাবের ফোনটা তাঁর কাছেই থাকে। কোনো অসহায় রোগীর রক্ত কিংবা ওষুধের প্রয়োজন হলে প্রথম ফোনটা তাঁর কাছে আসে। রাত-বিরাতে ছুটতে হয় হাসপাতালে। ক্যাম্পাসে পরিচিতির এটাও একটা কারণ। জানালেন, পয়লা বৈশাখ, জন্মাষ্টমী বা ব্যাচের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে ডেন্টাল ইউনিটের সব আয়োজনে গান গাইতে হয় তাঁকে। কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (কলেজ ডে) উপলক্ষে বানানো থিম সংয়ে কণ্ঠ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেই রেকর্ডিং এখনো প্রতিবছর কলেজ ডেতে বাজানো হয়।

খুব শিগগিরই সুনন্দার নামের সঙ্গে ‘ডাক্তার’ যোগ হতে যাচ্ছে। এখন পড়ছেন শেষ বর্ষে। তবে কি গান ছেড়ে পুরোপুরি ডাক্তারিতে মনোনিবেশ করবেন? ‘যখন স্নাতকোত্তর করব ঢাকা থেকে, তখন গানটা আবার শেখা শুরু করব। গান হয়তো পেশা হিসেবে নেব না। কিন্তু ছাড়বও না।’ সুনন্দার উত্তর।