যশোরে গণিতে বিপর্যয়

যশোর শিক্ষা বোর্ডে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় গণিতে এবার ফল খারাপ হয়েছে। এ বছর গণিতে ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর যা ছিল ৯৮ শতাংশের চেয়ে বেশি। এ কারণে গত তিন বছরের তুলনায় এবার যশোর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয় ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘটেছে।

গণিত বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা এ বছর কেন খারাপ করল? জানতে চাইলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের গণিত বিষয়ের সাবেক প্রধান পরীক্ষক ও বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল যশোরের প্রধান শিক্ষক মো. আবু দাউদ বলেন, ‘সৃজনশীল প্রশ্নের নিয়মনীতি মেনে জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র করা হয়নি। যেমন ৬ দাগের ‘ক’ নম্বর প্রশ্ন সর্বোচ্চ তিন মিনিটের মধ্যে সমাধান করতে হবে। অথচ, দুই নম্বর মানের ওই প্রশ্নের সমাধান করতে সাত থেকে আট মিনিট সময় লেগেছে। তারপরও অনেকে অঙ্কটির সমাধান করতে পারেনি। এ ধরনের অনেক অসংগতি ছিল এবারের গণিতের প্রশ্নপত্রে।’

যশোর শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, এ বছর যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে ২ লাখ ৯ হাজার ৫১৫ জন জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৭৬ জন। পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ৬১২ জন। যেখানে গত বছর ২ লাখ ১৩ হাজার ৩৪০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সব বিষয়ে পাস করে ২ লাখ ৩ হাজার ৪২৮ জন। পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পায় ২২ হাজার ৩ জন। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৯৫ দশমিক ৪৪ ও ৯১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

এ বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয় কমে গেল কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। যার প্রভাব পড়েছে গোটা ফলাফলে। এ কারণে পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয় কমে গেছে। এ বছর যশোর বোর্ডে গণিত বিষয়ে পাসের হার ৮৮ শতাংশ। অন্যান্য বিষয়ে পাসের হার ৯৫ শতাংশের বেশি। ফলে সামগ্রিকভাবে ফল খারাপ হয়েছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় যশোর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা গণিত বিষয়ে ততটা ভালো না। গণিতের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বিষয়ে বেশি আন্তরিক হতে হবে। এ জন্য শিক্ষা বোর্ড থেকেও শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে।

শহরের নামী স্কুলের তুলনায় গ্রামের স্কুলের শিক্ষার্থীরা গণিতে বেশি খারাপ করেছে। যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নয়টি বিদ্যালয় থেকে এ বছর কোনো শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি। বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে মাগুরা সদর উপজেলার পোড়াগাছাই সপ্তপল্লী মাধ্যমিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কোমারভোগ রামনাথপুর মাধ্যমিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও পারফেক্ট ইংলিশ ভার্সন সেকেন্ডারি স্কুল, বাগেরহাটের কোদালিয়া এমএইচবি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নড়াইলের বালিয়াডাঙ্গা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সাতক্ষীরার নাকনা বিদ্যানিকেতন, খুলনার সোনারতরী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও যশোরের খড়িঞ্চা বালিকা বিদ্যালয়। গত বছর এ নয়টি বিদ্যালয়ের মধ্যে পাঁচটি থেকে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করে। এ বছর এসব বিদ্যালয় থেকে কেউ পাস করতে পারেনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, এই নয়টি বিদ্যালয়ের সবাই গণিত বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। যে কারণে কেউ পাস করতে পারেনি।

যশোর শহরের এমএসটিপি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘এ বছর তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৩০৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সব বিষয়ে পাস করেছে ২৮৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০ জন। পাসের হার ৯৪ শতাংশ। যেখানে গত বছর গণিতে পাসের হার ছিল ৯৮ শতাংশ। গণিত বিষয়ের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ব্যাপারে আন্তরিকতা কম। তারা কোচিংয়ে বেশি আন্তরিক। স্কুলের প্রতি নিজ থেকে আন্তরিকতা না থাকলে বলে বলে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা যায় না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে বেশি আন্তরিকতা বাড়াতে।’

যশোর পুলিশ লাইনস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজ বলেন, ‘প্রত্যেক স্কুলে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পাঠদানের জন্য যোগ্য শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সরকারিভাবে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা না করতে এ দুটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আরও খারাপ করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।