প্রস্তুতি নিচ্ছেন তো?

গত বছর বিজমায়েস্ত্রোসে বিজয়ী দল, এ বছর তাঁরা যাবেন ফিউচার লিডারস লিগে
গত বছর বিজমায়েস্ত্রোসে বিজয়ী দল, এ বছর তাঁরা যাবেন ফিউচার লিডারস লিগে

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ যে ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে ভীষণ কাজে আসে, সিভিটাকে আকর্ষণীয় করে তোলে, এই সত্যটা এ সময়ের শিক্ষার্থীরা জানেন। গত বছর বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের দলগুলো ভালো ফল পেয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলোতেও ছিল ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। এ বছর সামনের দিনগুলোতে কী কী বড় প্রতিযোগিতা আসছে? কবে, কোথায় সেগুলোর আসর বসবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা হলো ‘ডব্লিউইউডিসি’ বা ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’। একেকবার একেক দেশে বসে এই প্রতিযোগিতার আসর। বাংলাদেশ ডিবেটিং কাউন্সিলের সভাপতি ফারদিন আমিন জানালেন, ‘মেক্সিকোতে ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে এ বছরের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রতিযোগিতাটি। বাংলাদেশের একটি দল কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছে। ডব্লিউইউডিসির ইতিহাসে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দলের জন্য এটি অনেক বড় অর্জন। পরবর্তী আসর ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত হবে।’ এ ছাড়া এশিয়ার আরও একটি বড় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ‘এশিয়ান ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’। এই প্রতিযোগিতায় গত বছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশের দল ‘আইবিএ ডিইউ ১’। এ বছরের দিনক্ষণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে গতবারের মতো এবারও বছরের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে এই প্রতিযোগিতা।

ব্যবসার প্রতি যাঁদের আগ্রহ আছে, সেই শিক্ষার্থীদের জন্য বড় তিনটি প্রতিযোগিতা—বিজমায়েস্ত্রোস, ব্র্যান্ডউইটজ আর ক্রিয়েডিভ। বিজমায়েস্ত্রোস আয়োজন করে ইউনিলিভার। বিজমায়েস্ত্রোসের বিজয়ী দল অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ‘ফিউচার লিডারস লিগ’-এ। গত বছরের বিজমায়েস্ত্রোসজয়ী দল ‘হোয়াই নট’ ২০১৮ সালের ‘ফিউচার লিডারস লিগ’-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) আয়োজন করে মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং প্রতিযোগিতা ‘ব্র্যান্ডউইটজ’। ‘ব্র্যান্ডউইটজ ২০১৭ ’-এর পর্দা উঠেছে ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি। অন্যদিকে ‘ক্রিয়েডিভ’ আয়োজন করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) বিজনেস ও কমিউনিকেশন ক্লাব। এটি মূলত বিপণন ও বিজ্ঞাপন নির্মাণের প্রতিযোগিতা। এ বছরের অক্টোবরের দিকে শুরু হতে পারে ক্রিয়েডিভের প্রথম পর্ব।

ভারতের ও পি জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর ‘বিশ্বমিল’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এর আগে বাংলাদেশের একাধিক দল সেখানে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই নিয়মিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নামটি হলো ‘এসিএম-আইসিপিসি’ বা ‘এসিএম ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান জানালেন, ‘এ বছর এসিএম আইসিপিসির আঞ্চলিক পর্ব গত নভেম্বর মাসে হয়ে গিয়েছে। ২০১৮ সালের “ওয়ার্ল্ড ফাইনালস” অনুষ্ঠিত হবে ১৯ এপ্রিল। এবারের ভেন্যু চীনের বেইজিং শহর।’ এ ছাড়াও ফেসবুক ও গুগল যথাক্রমে ‘হ্যাকার জ্যাম’ ও ‘কোড জ্যাম’ নামে দুটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ‘এই দুটি অনেক বড় প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা এখনো খুব একটা ভালো করতে না পারলেও খুব শিগগির এসবের পুরস্কারও হয়তো বাংলাদেশে আসতে শুরু করবে,’ বলছিলেন তিনি।

রোভার বানানোর প্রতিযোগিতার মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি নাম হলো ‘ইউআরসি’ এবং ‘ইআরসি’। প্রতিযোগীদের বানানো রোভারগুলো মঙ্গল গ্রহে কাজ করার উপযোগী কি না, তা পরখ করে দেখা হয় এখানে। ‘ইউআরসি’ বা ‘ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ’ মূলত ‘দ্য মার্স সোসাইটি’র একটি প্রকল্প। আগামী ৩১ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ-এর ‘মার্স ডেজার্ট রিসার্চ স্টেশন’ বা ‘এমডিআরএস’-এ বসবে ২০১৮ সালের আসর। অন্যদিকে ‘ইআরসি’ বা ‘ইউরোপিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জ’ আয়োজন করে ‘ইউরোপিয়ান স্পেস ফাউন্ডেশন’। সেপ্টেম্বর মাসের ১৪ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত চলবে এই প্রতিযোগিতা। নিবন্ধন করা যাবে মার্চ মাস পর্যন্ত।

কোডিং, রোবটিকস বা ইলেকট্রনিকস অর্থাৎ প্রযুক্তি নিয়ে যাঁদের কাজ, তাঁদের কাছে ‘টেককৃতি’র নামটা অজানা নয়। এশিয়ার মধ্যে বেশ নামকরা একটি উৎসব ‘টেককৃতি।’ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি কানপুর (আইআইটি কানপুর) প্রতিবছর এই উৎসব আয়োজন করে। কেবল প্রযুক্তি নিয়ে নয়, সামাজিক বা ব্যবসাক্ষেত্রের বিভিন্ন উদ্ভাবন, ডিজাইনিংসহ বেশ কিছু বিভাগে প্রতিযোগিতা হয় এখানে। এবার ‘টেককৃতি’ অনুষ্ঠিত হবে ১৫ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত।