দক্ষতা বিকাশই যেখানে লক্ষ্য

শিক্ষার্থীদের দক্ষ পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলাই নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য  ছবি: সুমন ইউসুফ
শিক্ষার্থীদের দক্ষ পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলাই নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ছবি: সুমন ইউসুফ

প্রায় বছর পাঁচেক আগে নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে স্নাতক করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। এখন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিবিএতে সর্বোচ্চ সিজিপিএর জন্য ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন তিনি। বলছিলেন, ‘দেশের বিভিন্ন করপোরেট বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে গেলে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। ভালো লাগে।’ মোস্তাফিজুর মনে করেন, নর্দান ইউনিভার্সিটিতে সব সময় ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। সে জন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেরোনো ছাত্রছাত্রীরা দ্রুত কর্মজীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বনানী ক্যাম্পাস আমরা ঘুরে দেখছিলাম গত বৃহস্পতিবার। ফাইন্যান্সের ক্লাস শেষে ক্লাসরুমের সামনেই কথা হয় হাসনাহেনা রুমীর সঙ্গে। নিজ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে রুমীর বক্তব্য, ‘আমাদের সাবেক ছাত্রছাত্রীদের নেটওয়ার্ক খুব সক্রিয়। অনেকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। অনেকে ভালো ভালো অবস্থানে আছেন, এই দিকগুলোই অনুপ্রাণিত করে।’ কথা বলতে বলতে রুমী এগিয়ে গেলেন কমনরুমের দিকে। আমরাও তাঁর সঙ্গে পা বাড়ালাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমনরুমের কাছাকাছি পৌঁছেই কানে এল একদল ছাত্রছাত্রীর কোলাহল। কেউ দল বেঁধে পড়ছেন, একদিকে চলছে টেবিল টেনিস খেলা। আমাদের আড্ডার আবহ সংগীত হিসেবে বাজতে থাকল ব্যাট আর বলের ঠোকাঠুকির শব্দ...টুক টাক টুক টাক!

ছায়া আদালত
ছায়া আদালত

আহসান রিয়াদ, তানজির ফেরদৌস, মোনায়েম হোসেন আর পবন ভূঁইয়া কথা বলছিলেন বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে আর শ্রীলঙ্কার ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজ নিয়ে। জানা গেল জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক, ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান আর জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রিয়াদ বলেন, ‘ক্রিকেটার সোহান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়েছেন আর রুমানা আহমেদ ইংরেজির শিক্ষার্থী।’

এখানে ক্যাম্পাসে পড়ালেখার পাশাপাশি সৃজনশীল কাজেও উৎসাহিত করা হয়। বিজনেস লিডারস ক্লাব আর ইনোভেটর্স ক্লাব নামের দুটি সংগঠন ক্যাম্পাস সরব রাখে বেশির ভাগ সময়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলোর উদ্যোগে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আর শিক্ষাসফরও হয় নিয়মিত। দেয়ালে সাঁটানো রঙিন দেয়ালিকাগুলোই অবশ্য শিক্ষার্থীদের এই সৃজনশীল চর্চার বিষয়টা জানান দিল।

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নিয়মিতই বিচার বসে। কিসের বিচার? শুনুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইশতিয়াক আহমেদের মুখে, ‘আমাদের আইন বিভাগে প্রতিদিনই মুট কোর্ট বা ছায়া আদালতের আদলে ক্লাস চলে।’ শুধু আইন বিষয়েই নয়, ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের ক্লাসরুমটিকে রীতিমতো করপোরেট অফিস বলা যায়! ‘করপোরেট দুনিয়ার পেশাজীবীরা অতিথি শিক্ষক হিসেবে আমাদের প্রতিটি কোর্সেই ক্লাস নিতে আসেন। ক্লাসরুম তখন আর শুধু ক্লাসরুম থাকে না, রীতিমতো অফিস হয়ে ওঠে।’ এমন দাবি করলেন শিক্ষার্থী পবন ভূঁইয়া। পাবলিক স্পিকিং, প্রেজেন্টেশন থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে-কলমে শেখান শিক্ষকেরা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধীনে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও পেশা-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেল, ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা বিকাশের জন্য ইংরেজি ভাষা শেখার দিকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া চীনা ভাষা শেখার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার জন্য আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি সহযোগিতা করা হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধ প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সরাসরি তত্ত্বাবধান করে থাকেন।

ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয় এই িবশ্ববিদ্যালয়ে
ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয় এই িবশ্ববিদ্যালয়ে

ঢাকার আশকোনার স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বসে। এই বিভাগের ছাত্র মাইনুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের ক্লাসে ব্যবহারিক শিক্ষাকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন টেক্সটাইল কারখানায় গিয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান নেওয়াটা আমাদের পাঠ্যক্রমেরই অংশ।’ মাইনুলের বন্ধু শরীফ সরকার আর ফারাজানা ফেরদৌস বললেন পড়াশোনার চাপের কথা। তাঁদের বক্তব্য, ‘ক্লাসে যতই পড়ানো হোক না কেন, ল্যাবে হাতে-কলমে ভালো করতে না পারলে ভালো সিজিপিএ পাওয়া যায় না। নিয়মিত ক্লাস করলে অবশ্য পড়ার চাপ আর ল্যাবে কাজের চাপ—দুটোই হালকা হয়ে যায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থী এস এম আরিফ বিল্লাহ জানালেন, বছরজুড়েই তাঁরা প্রোগ্রামিং আর গেমিং প্রতিযোগিতা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আর হ্যাকাথন আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস প্রকৌশলের শিক্ষার্থীদের দিনের বেশির ভাগ সময় থাকতে হয় বিভিন্ন ল্যাবে। ক্লাস আর ল্যাব নিয়ে তাঁরা এতই ব্যস্ত যে কারও সঙ্গে কথা বলার ফুসরত মিলল না।

সবশেষে হাসনাহেনা রুমী একটা মজার তথ্য দিলেন। ‘বছরে একদিন আমরা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে দোকান দিই। নিজেরাই এই দোকানে বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনা করি। এভাবে ব্যবসা করার একটা অভিজ্ঞতা হয়ে যায়।’ ক্লাব কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে এভাবেই নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা নিজেদের আগামীর বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত করছেন।

>
ড. আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ
ড. আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ

আমরা দক্ষ পেশাজীবী তৈরি করতে চাই

ড. আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ

চেয়ারম্যান, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

শিক্ষার্থীরা হচ্ছে ভবিষ্যৎ কর্মবাজারের হাতিয়ার। শিক্ষার্থীরা দক্ষ না হলে আমাদের দেশের কর্মক্ষেত্রের কাজের মান ও পরিবেশে পরিবর্তন আসবে না। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলার জন্য নর্দান ইউনিভার্সিটি প্রথম থেকেই কাজ করছে। আমরা সরাসরি কর্মবাজারে প্রভাব রাখার চেষ্টা করি বলে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা ও গবেষণাকে সব সময়ই গুরুত্ব দিই। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেভাবে কর্মবাজারে গবেষণার মাধ্যমে প্রভাব রাখে, আমাদের দেশে তেমন চর্চা নেই। সেই প্রেক্ষিতেই আমরা দেশের কর্মবাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি বিষয়ে দেশ-বিদেশের কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে ক্লাস নেন। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পেশাজীবন সম্পর্কে সরাসরি জানতে পারছেন। 

এক নজরে
স্থাপিত: ২০০২ সাল
|মোট শিক্ষার্থী: প্রায় ১০ হাজার
মোট শিক্ষক: ৩৫১ জন
অনুষদ: বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান, আইন এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞান
শিক্ষার্থীদের সংগঠন: ৮টি
ওয়েবসাইট: www.nub.ac.bd