নারীর জয়, গণিতের জয়

নারী গণিত অলিম্পিয়াডে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। ছবি: সংগৃহীত
নারী গণিত অলিম্পিয়াডে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। ছবি: সংগৃহীত

গণিত ভবনে ঢুকতেই দেখা গেল, পোস্টারের ভেতর থেকে আগতদের স্বাগত জানাচ্ছেন সহাস্য শকুন্তলা দেবী। তিনি একজন ভারতীয় গণিতবিদ, অসাধারণ গণনক্ষমতার জন্য তাঁকে বলা হয় ‘মানব কম্পিউটার’। পাশেই আছেন এমি নোয়েথার; আলবার্ট আইনস্টাইন যাঁকে গণিতের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নারী বলে অভিহিত করেছিলেন। তারপর মিসরের গণিতবিদ হাইপেশিয়া এবং সব শেষে গণিতে সর্বোচ্চ সম্মানজনক ফিল্ডস পদকপ্রাপ্ত প্রথম নারী এবং প্রথম ইরানি গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখানির ছবি।

মিলনায়তনের সামনে অসংখ্য বেলুন। ঝকমকে রঙিন কাগজে ঘেরা দরজা স্বাগত জানাল ‘দ্বিতীয় নারী গণিত অলিম্পিয়াড ২০১৮’তে। ৮ মার্চ, বিশ্ব নারী দিবসকে উপলক্ষ করে ‘নারীরাই সমাজের প্রকৃত স্থপতি’ স্লোগানে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হলো নারী গণিত অলিম্পিয়াড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগের সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের আয়োজক নারী গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এবং এ এফ মুজিবর রহমান ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিসহ প্রায় পঁচিশটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় মূল পর্ব গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতা।

সেদিন গণিতপ্রেমী নারীরা যেন তাঁদের প্রিয় বিষয় গণিতের মধ্য দিয়েই নারী দিবসকে বরণ করে নিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সুজানা আজমি অল্প কথায় বুঝিয়ে গেলেন, আমাদের চারপাশে কীভাবে ছড়িয়ে আছে গণিত, গণিতের সৌন্দর্য। তাঁর মতে, চারপাশের সবকিছুর গভীরতা গণিত দিয়েই উপলব্ধি করা যায়। সাদিয়া আফরিন ও সাদিয়া মাসুদ সবাইকে ক্যাথেরিন জনসন্স, ম্যারি উইন্সটন জ্যাকসনসহ আরও অনেক মহীয়সী নারী গণিতবিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। অনুষ্ঠানের মূল বিষয় গণিত হলেও প্রতিযোগী ও অতিথিদের মুগ্ধ করেছে চন্দ্রিমা পোদ্দারের কত্থক নাচ এবং সাজিয়া আফরিন ও তাসমিয়া হকের গান। গণিত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিনা পারভীন বলেন, ‘একটু আগে ডিজিটাল স্ক্রিনে যেসব মহান নারীকে আমরা দেখলাম, আমি জানি একদিন তোমরা—আমার ছাত্রীরাও ঠিক ততটা বড় হবে।’

‘আমাকে এখানে ডেকে আনা হয়েছিল যেন তোমরা আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হও। তবে সত্যি বলতে, আমিই প্রতি মুহূর্তে অনুপ্রাণিত হই তোমাদের দেখে। আমাদের সময় কেউ চিন্তাও করত না, গণিতের মতো একটা কঠিন বিষয় নিয়ে নারীরা প্রতিযোগিতা করবে, গণিতের শিক্ষকতা করবে নারীরা। কিন্তু বহু নারী এখন গণিতের শিক্ষক, গণিতের সর্বোচ্চ পুরস্কারও ছোঁয়া হয়ে গেছে নারীদের।’ অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ এবং এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি এম নুরুল আলম।

২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৮০ জন ছাত্রীর মধ্য থেকে ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন এবং ব্র্যাক ও বুয়েট থেকে একজন করে প্রতিযোগী পুরস্কার লাভ করেন। প্রতিযোগিতায় প্রথম হন বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আয়েশা মোস্তাক। তিনি বলেন, ‘গণিত আমার খুব প্রিয়, গণিত নিয়ে অনেক পড়ালেখা করার, অনেক শেখার ইচ্ছা আছে। গণিত নিয়ে কাজ করেই দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে চাই।’