রঙিন প্রাঙ্গণ

প্রিয় ক্যাম্পাস রঙিন মনে শিক্ষার্থীদের কাছে। ছবি: খালেদর সরকার
প্রিয় ক্যাম্পাস রঙিন মনে শিক্ষার্থীদের কাছে। ছবি: খালেদর সরকার

বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন ফাহিমুল হক। একদিকে ‘স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’-এর ফিল্ম ও মিডিয়া বিষয়ের পড়াশোনা, অন্যদিকে টেলিভিশনের কাজ। তৃতীয় বর্ষে ওঠার পরই পড়াশোনায় সাময়িক বিরতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ফাহিম। সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গড়তে পুরোপুরি কাজে মনোনিবেশ করেন। শিক্ষকেরা তখন ভেবেচিন্তে পা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।

টানা ৩ বছর কাজ করে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ফাহিম। তাঁর স্নাতক শেষ হয়েছে এ বছরের জানুয়ারি মাসে। ফাহিম বলছিলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তেই অনেকের চাকরি হয়ে যায়। আমার পড়ালেখায় একটা বিরতি পড়ে গিয়েছিল। তবু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সহায়তায় পড়াশোনাটা শেষ করতে পেরেছি।’ তাঁর কণ্ঠে কৃতজ্ঞতার ছাপ। ফাহিমের দাবি, স্টামফোর্ডের ক্যাম্পাস সব সময় রঙিন। এই রঙের টানেই সাবেক শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুঁ মারেন। রঙের খোঁজে আমরাও গত বুধবার হাজির হই স্টামফোর্ডের সিদ্ধেশ্বরী ও ধানমন্ডির ক্যাম্পাসে।

ল্যাবে চলছে ক্লাস
ল্যাবে চলছে ক্লাস

এলোমেলো গলি। রিকশার যানজট, ভিড় মাড়িয়ে যেতে হয় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে। পা রাখতেই টের পাই সবুজের ঘ্রাণ। ঘাসের ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে জমেছে শিক্ষার্থীদের আড্ডা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ভবন ও ব্যবহারিক ল্যাবগুলোও চোখে পড়ল। আমাদের গাইড হিসেবে যোগ দিলেন ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী ভূঁইয়া রুসলান রেহমান। তাঁর বিভাগের এক শিক্ষার্থী সামাওন ইসলামের সঙ্গে কথা হলো। বলছিলেন, ‘আমাদের ক্লাসগুলো মজার। আজকে যেমন চিত্রনাট্যের ক্লাস হলো। ক্লাসে আমরা সত্যজিৎ রায়, ডেভিড লিঞ্চ, কুয়েন্টিন টারান্টিনোদের সম্পর্কে আলোচনা করি, তাঁদের ছবি দেখি...।’

সিদ্ধেশ্বরীর ক্যাম্পাসে পা রাখলেই দেয়াললিখন আর দেয়ালিকার ছড়াছড়ি আপনার চোখে পড়বে। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া সাবা বলছিলেন, ‘প্রতিটি বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাই সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের প্রায় ১৩টি ফোরাম আছে। তারাই ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখে। বিতর্ক ফোরাম, স্বেচ্ছাসেবী ফোরাম, অ্যান্টি ড্রাগ ফোরামের নানা আয়োজনের ছবি চোখে পড়ল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে। ‘সাংস্কৃতিক বিভিন্ন আয়োজনে ক্যাম্পাস মুখরিত থাকে। এই তো এখনো আমরা স্বাধীনতা দিবস ও পয়লা বৈশাখের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ বলছিলেন আরেক ছাত্রী নিপা নিপোবীথি। গান ও সংস্কৃতির মানুষ নিপা ক্যাম্পাসে বেশ পরিচিত মুখ।

এই শুটিং ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পড়ালেখার অংশ
এই শুটিং ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পড়ালেখার অংশ

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাল, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ১৪টি বিভাগে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন। শিক্ষক আছেন প্রায় ৫০৭ জন। আমাদের গাইড রুসলান বলছিলেন, ‘আমাদের উপাচার্য স্যার নিজেই তো গান-বাজনা ও অভিনয়ের লোক, তিনি সৃজনশীল কাজে যুক্ত হতে সব সময় উৎসাহ দেন। আমরা স্যারের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ক্রিকেট খেলি, সেই ছবি আবার ফেসবুকে ভাইরালও হয়ে যায়।’ ফোন বের করে ছবিটা দেখালেন রুসলান।

গল্প করতে করতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, বাস্কেটবল গ্রাউন্ড পেরিয়ে চলে আসি খোলা মাঠে। মাঠের একপাশে দেখা গেল ক্যামেরা-লাইট নিয়ে সিনেমার শুটিং চলছে। তবে এই সিনেমা বড় পর্দায় মুক্তি পাবে না, ক্লাস ওয়ার্কের অংশ হিসেবে ব্যবহারিক ক্লাস চলছে সেখানে। ছোট ছোট কাজের মধ্য দিয়ে বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই শিক্ষার্থীরা।

স্থাপত্য বিভাগের ক্লাস চলছে
স্থাপত্য বিভাগের ক্লাস চলছে

ধানমন্ডি ক্যাম্পাসের স্থাপত্য ভবনে যখন পা রাখলাম, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। চারদিক প্রায় সুনসান। এরই মধ্যে একটি ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের ভিড় চোখে পড়ল। স্থাপত্য বিভাগের ফারিয়া তুন ফাহমিদা ও আরাফাত সরকারের সঙ্গে কথা হলো। ফারিয়া বলেন, ‘আমাদের এখনে নিয়মিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক ও স্থপতিরা ক্লাস নিতে আসেন। আজও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাদের প্রজেক্ট দেখতে এসেছেন। আমরা আমাদের প্রজেক্টগুলো দেখাচ্ছি, তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।’ আরাফাত নিজেও একটা প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত। বললেন, ‘আমার প্রজেক্টের জন্য আমি ও আমার বন্ধুরা অনেক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছি। ছবি তুলেছি। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মিলিয়েই প্রজেক্টটা সাজিয়েছি।’ স্টামফোর্ডের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা বড় কিছুর স্বপ্ন দেখতেই পারেন। এ বিভাগেরই দুই শিক্ষার্থী নাদিয়া আফরিন ও মতিয়ার রহমান ২০১৭ সালে ‘এশিয়ান ইয়ং ডিজাইনার’ পুরস্কার পেয়েছিলেন।

স্থাপত্যের ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে দেখা হয় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিয়া ইসলাম ও এইচ এম সাঈদ উদ্দীনের সঙ্গে। থিসিস পেপার আর রিসার্চ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হচ্ছিল। আমরাও যোগ দিলাম। দুই বন্ধু জানালেন, স্টামফোর্ডের শিক্ষার্থীদের গবেষণা প্রবন্ধ নিয়মিতই বিভিন্ন জার্নালে জায়গা পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ থেকেই কোনো না কোনো জার্নাল প্রকাশিত হয়। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সবারই নিবন্ধ প্রকাশের সুযোগ আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এখানে গবেষণার জন্য বিশেষ বিভাগও আছে। এই বিভাগ থেকে গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও ব্যবহারিক সুবিধা দেওয়া হয়। প্রতিবছরই গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ থাকে বলে জানাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

>
মুহাম্মাদ আলী নকী, উপাচার্য, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
মুহাম্মাদ আলী নকী, উপাচার্য, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
কম খরচে সবার জন্য শিক্ষা

পেশাজীবনে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলার জন্য সব আয়োজনই আছে আমাদের ক্যাম্পাসে। আধুনিক পড়াশোনার পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি আমরা সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করছি। আমরা নান্দনিক গবেষণা ও কর্মমুখী শিক্ষার ওপর সব সময় জোর দিয়ে আসছি। যে কারণে দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞ শিক্ষক, শিক্ষা গবেষক ও দক্ষ পেশাজীবীরা আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়ান। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা দেশ ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে যাদের আর্থিক সচ্ছলতা কম, তাদের যেন পড়াশোনা বন্ধ না হয় সে জন্য আমরা সব সময়ই খেয়াল রাখি। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাই আমরা। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা যেন দক্ষ ও মেধাবী নেতৃত্ব তৈরি করতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।