ফিরে দেখা কালরাত

২৫ মার্চ স্মরণে শিক্ষার্থীদের আয়োজন। ছবি: রজত পাল
২৫ মার্চ স্মরণে শিক্ষার্থীদের আয়োজন। ছবি: রজত পাল

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নারকীয় গণহত্যার বড় শিকার হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও ইকবাল হল (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল)। সেই কালরাতের স্মরণে সম্প্রতি জগন্নাথ হল আয়োজন করে একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান। আয়োজনের অংশ হিসেবে হলের রাস্তায় আঁকা হয়েছে রাজাকার ও পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্যঙ্গচিত্র। জগন্নাথ হলের ভেতরে যেভাবে পড়ে ছিল নিরীহ ছাত্রদের লাশ, তেমনিভাবে হলের রাস্তায় ফেলে রাখা হয় কিছু কাপড়ের পুতুল।

এই ব্যঙ্গচিত্র ও পুতুলের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অপূর্ব কুমার সাহা। তিনি বলেন, ‘সেই রাতের ভয়াবহতার একটা চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা ছিল আমাদের।’

অনুষ্ঠানের নানা দিক নিয়ে কথা হয় হল প্রাধ্যক্ষ অসীম সরকারের সঙ্গে। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কালরাত স্মরণে প্রথম অনুষ্ঠান শুরু হয় ২০১১ সালে। শহীদ মিনার ও গণকবর থাকায় অনুষ্ঠানস্থল হয় জগন্নাথ হল।

শিশুদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানানোর উদ্দেশ্যে ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন। অধ্যাপক অসীম সরকার বলছিলেন, ‘একটি শিশু যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি আঁকবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আগ্রহ জাগবে। সে বঙ্গবন্ধুকে জানবে। মুক্তিযুদ্ধকে জানবে। সর্বোপরি, দেশের প্রতি মমত্ববোধ তৈরি হবে।’ কথা হলো বেগম আয়েশা নামের একজন অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ও এমনিতে বাসায় ছবি আঁকে। কিন্তু এখানে এত বাচ্চাকাচ্চার সঙ্গে ছবি আঁকার অভিজ্ঞতা অন্য রকম। এসবের মধ্য দিয়েই সে দেশের ইতিহাস সম্পর্কে সজাগ হচ্ছে।’

প্রাধ্যক্ষের পাশেই ছিলেন হলের আবাসিক শিক্ষক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক সন্তোষ কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে আমার সহকর্মীরা সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে আসে। দেখা যায় বাচ্চারা মাকে বা বাবাকে জিজ্ঞেস করছে—এটা কী, ওটা কেন এভাবে পড়ে আছে? তখন কিন্তু গল্পে গল্পে বাচ্চাটি দেশের ইতিহাস জানতে পারে।’

হলের নতুন সদস্য, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য এটা রোমাঞ্চকর আয়োজন। ‘আমি যে রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করি, সেই রাস্তাতেই পাকিস্তানি হায়েনারা দেশের সূর্যসন্তানদের হত্যা করে ফেলে রেখেছিল। ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়।’ বলছিলেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সৌমেন রায়। কথা হলো দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নিলয় দেবনাথের সঙ্গে। হলের শহীদ মিনারে মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছিলেন। নিলয় বলেন, ‘গত বছর ২৫ মার্চ রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে পুরো হলে বিদ্যুৎ চলে গেল। চারদিকে অন্ধকার। এক মিনিট পরেই বিদ্যুৎ এল। পরে বুঝলাম, এটা “ব্ল্যাক আউট” ছিল। হঠাৎই অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করল...।’