নতুন আলোয় রাঙা

আড্ডায় গানে এই শিক্ষার্থীরা মাতিয়ে রাখেন ক্যাম্পাস। ছবি: খালেদ সরকার
আড্ডায় গানে এই শিক্ষার্থীরা মাতিয়ে রাখেন ক্যাম্পাস। ছবি: খালেদ সরকার

খন্দকার প্রাপ্তি বড় হয়ে শিক্ষক হতে চান। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই তাঁর অনুপ্রেরণা। নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমাদের কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসে। তাঁর কথা শুনে বোঝা যায়, এখানে ভালো শিক্ষকেরাই প্রাপ্তির বড় প্রাপ্তি। বলছিলেন, ‘আমাদের অনেক শিক্ষকেরই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে। তাঁরা ক্লাসে এমনভাবে পড়ান যে বিষয়টার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।’ আড্ডার রং গাঢ় হওয়ার আগেই কথা শেষ করে প্রাপ্তি তাঁর বন্ধু তাসনিম তিয়ান আর সমিকা চাকলাদারকে নিয়ে পা বাড়ান ক্লাসরুমের দিকে। আমরাও পিছু নিই তাঁদের। শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে ক্লাসরুমে পা রাখতেই দেখা যায় অন্য এক ভুবন।

প্রাপ্তিরা ক্লাসরুমে মার্চেন্ট অব ভেনিস কিংবা সিন্দাবাদের দেখা পান প্রতিদিন। ইংরেজি সাহিত্যে পড়েন বলেই ক্লাসরুমে চলে নাটক-সংলাপের চর্চা। শুধু পাঠ্যবইয়ে ডুবে থাকা নয়, বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম নিয়েও সারা বছর ব্যস্ত থাকেন নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সেই সকালবেলা ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন সাদ বিন মঈন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাস ঢাকার মতিঝিলের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। দেখার মতো একটা মাঠ আছে এই ক্যাম্পাসে। সেই মাঠে খেলার সুযোগ মিস করতে চাই না বলেই প্রতিদিন ক্লাসের আগে এসে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলি আমরা।’ ক্যানটিনটা ঘুরে দেখার আমন্ত্রণও এল সাদের কাছ থেকে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, টেবিল টেনিস আর দাবা নিয়ে মজে আছেন সাব্বির আহমেদ, রেদওয়ান রাদ, খালেদ, ইশতিয়াকসহ অনেকে।

টেবিল টেনিস খেলা চলছে যেখানে, সেখানে পাশেই বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন ইশরাক মেহরাব। জটিল সব প্রোগ্রামিংয়ের ভাষা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলেন তিনি। বললেন, ‘কম্পিউটার প্রকৌশল ও বিজ্ঞানে আমাদের ব্যবহারিক পড়াশোনার ওপর   জোর দেওয়া হয়। টিচাররা প্রোগ্রামিংয়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আর হ্যাকাথনে অংশ নিতে উৎসাহ দেন। সামনে একটি প্রতিযোগিতা আছে, তাই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

এখানে চারটি অনুষদে প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন ৬৫ জন শিক্ষক। দুই শিক্ষার্থী অ্যালেক্স রোমারিও ও আজহার শোভন জানান, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টা বয়সে নবীন। কিন্তু কারিকুলাম আর পড়াশোনার ধরনটা পশ্চিমা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ফাদার আদম এস পেরেরা, সিএসসি বলেন, ‘ইতিবাচক মননের শিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলার জন্য হলিক্রসের ফাদাররা বাংলাদেশে কয়েক শ প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল, কলেজ ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছে নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তুলনামূলক কম খরচেই ব্যাচেলর ও মাস্টার্স বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাবৃত্তি ও আর্থিক প্রণোদনার সুযোগ আছে।

ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীরা আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী ভর্তি ফি জমা দিতে পারেন এখানে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ করে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিবিএ পড়ুয়া দীপা রায় ও ফারহানা আফরোজ যেমন ক্লাসের ফাঁকে কাজও করেন। দীপা বলেন, ‘আমাদের এখানে পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মত ক্যাম্পাস জবের সুযোগ আছে। একদিকে পড়াশোনা আবার অন্য দিকে হাতে কলমে কাজ শেখার দারুণ সুযোগ পাচ্ছি আমরা।’

ক্যাম্পাস ঘুরে বেশ কয়েকটা দেয়ালিকা চোখে পড়ল। দেয়ালিকায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চিত্রকর্ম আর গল্প-সাহিত্য দেখে বোঝা যায়, মনন বিকাশের চর্চা এখানে আছে। কথা হয় বিজনেস ক্লাবের সদস্য মেহেদী হাসান মুশফিকের সঙ্গে। বললেন, ‘আমাদের ক্লাসরুমে মাঝেমধ্যেই অতিথি হিসেবে সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা আসেন। এ ছাড়া আমাদের ক্লাবে প্রতি সপ্তাহেই ক্যারিয়ারমুখী বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।’ মেহেদীর বন্ধু ইদাফ, আবির, বৈশাখী, অনন্যা...সবাই বেশ ব্যস্ত। জানা গেল, ক্লাব ফেয়ারের প্রস্তুতি চলছে। বৈশাখী বলেন, ‘সারা বছরই ক্লাবের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি আমরা। শিক্ষকেরা আমাদের মনন বিকাশ ও সৃজনশীলতা প্রকাশে সব ধরনের সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়ে থাকেন।’

আমরা নতুন, আমরা দারুণ
ড. ফাদার প্যাট্রিক ড্যানিয়েল গ্যাফনি, সিএসসি
উপাচার্য, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় একেবারেই নতুন একটি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে আমরা প্রতিদিনই নিত্যনতুন অনেক কিছু শিখছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্ব মননের হয় তার জন্য আমরা শিক্ষকেরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও দক্ষ করে তোলার ওপর জোর দিচ্ছি। ভালো শিক্ষক সব সময়ই ভালো শিক্ষার্থী তৈরি করে। যে কারণে আমাদের শিক্ষকেরা গবেষণা ও হাতে-কলমে শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ আছে, যে কারণে আমাদের কারিকুলাম ও পড়াশোনার ধরন বিশ্বজনীন। আমরা দারুণ কিছু মানুষ তৈরির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি।