নতুন কিছু পড়ি

গতানুগতিক বিষয়গুলোর বাইরেও শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের বিষয় পড়ছেন, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন। দেশ-বিদেশে তৈরি হচ্ছে কাজের আরও নানা ক্ষেত্র। প্রিয় পাঠক, আপনিও যদি আপনার পড়ার বিষয় সম্পর্কে জানাতে চান, লিখতে পারেন স্বপ্ন নিয়ের ঠিকানায়: স্বপ্ন নিয়ে, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। ফেসবুক: facebook.com/swapno.nie। ই–মেইল: [email protected]। লেখার সঙ্গে আপনার পুরো নাম, ঠিকানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও ফোন নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
মো. নাজমুল হাসান
মো. নাজমুল হাসান

ইতিহাস ও নিজেকে জানার সুযোগ
মো. নাজমুল হাসান
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, চতুর্থ বর্ষ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

ছোটবেলায় কখনো ভাবিনি প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়ব। গণিত ভালো লাগত। গণিত অলিম্পিয়াডে স্থানীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছিলাম, তাই ঝোঁকটা বেড়েছিল আরও। কিন্তু যত বড় হয়েছি, একাডেমিক জগতের বাইরে পড়াশোনার পরিধিটা বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতিকে জানার আগ্রহ।

উচ্চমাধ্যমিকের পর দুটি বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাই—পরিসংখ্যান ও প্রত্নতত্ত্ব। শেষ পর্যন্ত আমি প্রত্নতত্ত্বই বেছে নিই। প্রথম দিকে ঠিকমতো বুঝতাম না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন প্রত্নতত্ত্ব একটা পুরোনো বিষয়, আবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন এটি একদম নতুন। আমিই প্রথম ব্যাচের ছাত্র। প্রত্নতত্ত্ব পড়ে আমার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ কী হবে, আদৌ কোনো কাজ পাব কি না, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা হতো। কোনো তথ্যের জন্য ভরসা ছিল গুগল আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্বে পড়া বড় ভাইয়া ও আপুরা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় ক্রমে ভালোবাসতে থাকি এই বিষয়টি।

প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কে এখনো মানুষের খুব একটা ধারণা নেই। ‘আর্কিওলজি’ বললে অনেকে ‘আর্কিটেকচার’ কিংবা এ ধরনের একটা কিছু ভেবে বসেন। অনেকে আবার মনে করেন, আমাদের পড়ালেখা বোধ হয় শুধু মাটি খোঁড়াখুঁড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অথচ তুলনামূলক অপরিচিত এই বিষয়ে কাজের ক্ষেত্র অনেক বিশাল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বিভিন্ন জাদুঘর, গবেষণা কিংবা সামাজিক সংগঠনে কাজ করার সুযোগের পাশাপাশি বাইরের দেশে, বিশেষ করে ভারত ও ইউরোপের দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পৃথিবীর ইতিহাস জেনে নিজেকে মেলে ধরার এক অপূর্ব সুযোগ আছে এই বিষয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কৃত ওয়ারী বটেশ্বর ও মুন্সিগঞ্জের প্রত্নস্থান আরও বাড়িয়েছে গবেষণার পরিধি। যাঁরা গবেষণা করতে চান কিংবা ইতিহাস নিয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে তাঁদের স্বাগত। ।

রনিতা দাশ
রনিতা দাশ

খাদ্যের চাহিদা শেষ হবে না
রনিতা দাশ
প্রথম বর্ষ, ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি বিভাগ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়

ভেবেছিলাম চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হব। কোথাও চান্স না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। শেষ ভরসা ছিল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তি পরীক্ষা হলো যেদিন, সেদিন বিকেলেই আমাদের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়। ভাবিনি পছন্দক্রমে দেওয়া প্রথম বিষয়ে (ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি) ২৫ তম হব। ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও হাজি মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জি. পি. এ-৫ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম একটা বিষয় নিয়ে পড়তে পারা আমার জন্য একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমাদের এখানে হাতে-কলমে কাজের সুযোগ অনেক। তাই পাঠ্যবই থেকে অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা দক্ষ হয়ে উঠতে পারি। আর এই বিষয় পড়ে সাধারণত বেকার থাকতে হয় না। খাদ্য অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক খাদ্য বিষয়ক সংস্থা, খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ নানা ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ আছে।

সেশন জট নেই। ৪ বছরে বিএফএসটি সম্পূর্ণ করে এক বছরের ইন্টার্নি শেষে এমএস করা যায়। বাইরের দেশগুলোতেও এর প্রচুর চাহিদা। সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশেও আরও কাজের সুযোগ তৈরি হবে, বাংলাদেশে আর অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে মানুষের জীবন বিপন্ন হবে না।

পৃথিবীতে খাদ্যের চাহিদা কখনো শেষ হবে না। প্রতিটি মানুষ একটা সুস্থ্য-সুন্দর জীবন চায়। দিনে দিনে মানুষ আরও স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে। তাই আমি মনে করি, আমাদের দেশের তরুণদের এমন বিষয়গুলো পড়তে আরও আগ্রহী হওয়া উচিত।