বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার দাবি চার শিক্ষার্থীর

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ চেয়ে এবং বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার দাবিতে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত চার শিক্ষার্থী। আজ বুধবার দুপুরে তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেন এবং উচ্চ আদালত তাঁদের বহিষ্কারাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন বলে দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী হুমায়রা আজমিরা (বহিষ্কৃত)। তিনি শেখ হাসিনা হল শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

লিখিত বক্তব্যে হুমায়রা আজমিরা দাবি করেন, চলতি বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেন। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে গত ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ‘অন্যায় ও অবৈধভাবে’ তাঁদের আটজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে। ১৪ মে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বহিষ্কারাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। আদালতের দেওয়া বহিষ্কারাদেশ স্থগিতের কপিসহ আবেদন করলেও আজ বুধবার বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হারুন অর রশিদকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা ক্যাম্পাসে অবস্থান ও শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন।

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হারুন অর রশিদ, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোতাসিন বিল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের কোনো আদেশের নথি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায়নি। আদেশের নথি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে কর্তৃপক্ষ আদালতের প্রতি সম্মান দেখাবে। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বা পাঠদানে কোনো বাধা থাকবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে মোকাবিলা করবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তিন শিক্ষার্থীকে আজীবন ও পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ৫৪তম সভায় ওই আট শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আজীবন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হুমায়রা আজমিরা, একরামুল কবির দ্বীপ ও মো. রোকনুজ্জামান। এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী আসিফ আল মাহমুদ, মো. মোতাসসিন বিল্লাহ, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের মাহমুদুল হাসান শাকিব, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনীম এবং বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হারুন অর রশীদ। আজীবন ও এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলে অবস্থান করতে পারবেন না এবং তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আল মাহমুদ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনীম লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে লেখাপড়ার সুযোগ চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে তাঁদের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করে। পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ডের সভায় তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক ক্যাম্পাসে টাঙানো র‍্যাগিং বিরোধী ফেস্টুন-পোস্টার ও নোটিশ ছিঁড়ে ফেলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর প্রতি অবমাননা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় এই শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়।