লিখিত পরীক্ষার লড়াই

হিয়া পাল: ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় নিরীক্ষা ও হিসাব (অডিট) ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী
হিয়া পাল: ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় নিরীক্ষা ও হিসাব (অডিট) ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল। যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন তাঁদের এবার মুখোমুখি হতে হবে লিখিত পরীক্ষার। হাতে সময় নেই খুব বেশি। এই সময়ের মধ্যে একজন পরীক্ষার্থী নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করবেন, সে পরামর্শ দিয়েছেন ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় নিরীক্ষা ও হিসাব (অডিট) ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী হিয়া পাল

বিসিএস লিখিত পরীক্ষা হয় সাধারণত গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে।
যাহোক, লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আপনাকে প্রথমেই শনাক্ত করতে হবে কোন বিষয়ে আপনার ধারণা কম। সেই বিষয়ে আসলে জোর দিতে হবে এখন থেকেই। তবে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়ের ব্যাপারটা আলাদা। এ বিষয়টি প্রতিদিন চর্চার বিষয়। এক দিন চর্চা করেননি তো ভুগেছেন। আমি হলফ করে বলতে পারি, এক দিন গণিতচর্চায় বিরতি দিলে আপনি গণিতের অনেক কিছুই ভুলে যাবেন। তাই প্রতিদিন গণিতচর্চা করুন, গণিতের প্রতি দক্ষতা ধরে রাখুন। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতিমধ্যে প্রিলিমিনারি ভর্তি প্রস্তুতির জন্য আপনি অনেক গণিত চর্চা করেছেন। এখন সেসবই ঝালিয়ে নিন বারবার।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে বলব, নবম-দশম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান বইটি ভালো করে পড়ুন। এটি ভালোভাবে আয়ত্তে এলে বিজ্ঞান বিষয়ে অন্য বই পড়তে পারেন। এবার আসা যাক আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ব্যাপারে। এ বিষয়ে ভালো করতে হলে বিশ্বজুড়ে সমসাময়িক যেসব ঘটনা ঘটছে সেসবের ব্যাপারে আপনার পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। তাই বেশি বেশি সংবাদপত্র পড়ুন, টেলিভিশন ও রেডিওর খবর শুনুন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক আইন ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা নিন। আর বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য দেশীয় অঙ্গনে ঘটে যাওয়া সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, এ দেশের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, ইতিহাস, অর্থনীতি, সরকারব্যবস্থা, আর্থসামাজিক অবস্থা, শিক্ষানীতি ইত্যাদি বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা নিন। চাইলে নবম-দশম শ্রেণীর ইতিহাস বই পড়তে পারেন। আর বাংলাদেশ বিষয়াবলি দ্বিতীয় পত্রের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানের ওপর বিশেষভাবে জোর দিন।
বাংলা বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য সাহায্য নিন বিগত সালের পরীক্ষায় আসা ব্যাকরণ, শুদ্ধীকরণ ইত্যাদির আনুষঙ্গিক নিয়ম, প্রবাদ-প্রবচন ও বাগ্ধারা, বিভিন্ন ধরনের পত্র লেখার নিয়ম ইত্যাদির। আপনি যদি অন্তত বিভিন্ন দরখাস্ত, মানপত্র বা চিঠি ইত্যাদি লেখার নিয়ম আয়ত্ত করতে পারেন, তাহলে যেকোনো ধরনের পত্র পরীক্ষায় আসুক না কেন, আপনি তার উত্তর লিখে আসতে পারবেন। নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে বিগত সালে পরীক্ষায় আসা সারমর্ম বা সারাংশ ও ভাবসম্প্র্রসারণের উত্তর নিজে নিজে বানিয়ে অভ্যাস করুন; এতে পরীক্ষায় পড়ার বাইরে থেকে প্রশ্ন এলেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজে থেকে উত্তর দিয়ে আসতে পারবেন। বাংলা বিষয়ে আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টপিক হলো, বাংলা সাহিত্য ও এর ইতিহাস। এ বিষয়ে এখন থেকেই পূর্ণ ধারণা অর্জন করুন।

সবশেষে বলি ইংরেজি বিষয়ে। ইংরেজি ব্যাকরণের বেসিক নিয়ম, ভয়েস, ন্যারেশন ইত্যাদি নিয়মিত চর্চা করুন। অনুবাদের জন্য বিগত সালের পরীক্ষায় আসা অনুবাদগুলো নিজে নিজে চর্চা করুন, এতে পরীক্ষায় পড়ার বাইরে থেকে প্রশ্ন এলেও উত্তর দিতে পারবেন সহজেই। ইংরেজি বিষয়ে ‘ফ্রি-হ্যান্ড’ লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন, এ জন্য যেকোনো বিষয়ের ওপর ফ্রি-হ্যান্ড লেখার চেষ্টা করুন।

সব সময় মনে রাখবেন, বিসিএস নামক স্বপ্নের সিঁড়ির একটি ধাপ আপনি ইতিমধ্যেই অতিক্রম করে ফেলেছেন। সামনে আর মাত্র দুটি ধাপ। সুতরাং সাবধানে পা ফেলুন। মনোবল ধরে রেখে পড়াশোনা করুন নিয়মিত। আর অবসর সময়ে ভালো লাগার বিষয় নিয়ে মগ্ন থাকুন। দেখবেন, সাফল্য কোনো ফাঁকে এসে ধরা দিয়েছে আপনার হাতে, আপনি টেরই পাননি। (অনুলিখিত)