টোয়েফল কী, কেন করব?

উত্তর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে হলে টোয়েফলের ভালো স্কোর থাকতে হয়। মডেল: রনক ও রিমু। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে
উত্তর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে হলে টোয়েফলের ভালো স্কোর থাকতে হয়। মডেল: রনক ও রিমু। ছবি: স্বপ্ন নিয়ে

টোয়েফল (TOEFL) বা Test of English as a Foreign Language হলো ইংরেজি ভাষাভাষী নয় এমন শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষতা যাচাই করার পরীক্ষা। স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা কিংবা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য এই পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টোয়েফলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (www.ets.org/toefl) রেজিস্ট্রেশন করে অনলাইনে নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হয়, যা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ১৭০ ইউএস ডলার বা ১৩ হাজার ২৬০ টাকা। ঢাকায় একাধিক টেস্ট সেন্টার রয়েছে, যেগুলোর ঠিকানাও পাওয়া যাবে এই ওয়েবসাইটে।
Reading, Listening, Speaking ও Writing এই চারটি সেকশনের প্রতিটিতে ৩০ নম্বর করে মোট ১২০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। Reading সেকশনের জন্য পরীক্ষার্থীর হাতে ৬০ থেকে ১০০ মিনিট পর্যন্ত সময় থাকে। এর মধ্যে ৪-৬টি passage পড়ে শেষ করতে হয় এবং প্রতিটিতে ১২ থেকে ১৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। Listening সেশনের জন্য বরাদ্দ থাকে ৬০ থেকে ৯০ মিনিট, যার মধ্যে ৬-৯টি passage শুনতে হয় এবং প্রতিটি passage শোনার পর সে সম্পর্কিত ৫-৬টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। Speaking সেকশনটি সে তুলনায় একটু ভিন্ন ধরনের। এখানে মোট ছয়টি বিষয়ে পরীক্ষার্থীকে কিছু নির্দেশাবলি শোনানো হয়, যার ওপর ভিত্তি করে তাঁকে নিজের মতামত প্রকাশ করতে বলা হয়। ২০ মিনিটের এই সেকশনে পরীক্ষার্থী কতটুকু গুছিয়ে, সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন, তা যাচাই করা হয়। সবশেষ Writing সেকশনে দুটি বিষয়ের ওপর লিখতে দেওয়া হয় এবং এর জন্য সময় থাকে ৫০ মিনিট।
পরীক্ষার্থী ইংরেজিতে কতটুকু দক্ষ, তার ওপর নির্ভর করে প্রস্তুতি নিতে কত সময় প্রয়োজন, যা কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস হতে পারে। টোয়েফল পরীক্ষা সারা বছরই দেওয়া যায় এবং একজন পরীক্ষার্থী চাইলে যতবার ইচ্ছা পরীক্ষা দিতে পারেন। উল্লেখ্য, একবার পরীক্ষা দেওয়ার ১২ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায় না এবং দুই বছর পর্যন্ত টোয়েফল স্কোরের মেয়াদ থাকে।
উল্লেখ্য, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য টোয়েফল অথবা আইএলটিএসের যেকোনো একটি পরীক্ষা দেওয়াই যথেষ্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। তাই প্রস্তুতি শুরু করার আগে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে Language reuirement এর সেকশনটি খুব ভালোভাবে পড়ে দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়টি টোয়েফল স্কোর গ্রহণ করে কি না এবং আবেদন করার জন্য সর্বনিম্ন স্কোর কত থাকতে হবে।
যেমন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় টোয়েফল ও আইএলটিএস স্কোর দুটোই গ্রহণ করে থাকে এবং টোয়েফলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১১০ স্কোর থাকতে হয়। এ ছাড়া প্রতিটি সেকশনের জন্য তাঁদের ন্যূনতম স্কোর হলো Reading সেকশনে ২৪, Listening সেকশনে ২২, Writing সেকশনে ২৪, Speaking সেকশনে ২৫। আবার কখনো একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যূনতম স্কোর ভিন্ন হয়, তাই পরীক্ষা প্রস্তুতির একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবেই এসব ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে এবং সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে।
ইংরেজিতে বেশ দক্ষ হওয়ার পরও অনেকে পরীক্ষার খুঁটিনাটি না জানার কারণে প্রত্যাশিত স্কোর পেতে ব্যর্থ হন। তাই টোয়েফলের প্রস্তুতি সম্পর্কিত বিভিন্ন বই পড়া এবং প্র্যাকটিস টেস্ট দেওয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেটে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন পরামর্শ ও টিপসে চোখ বুলিয়ে নেওয়া ভালো।
যেমন Reading সেকশনে একটি প্রশ্নে ঠেকে গেলে বা কোনো একটি passage এ সমস্যা হলে সেটি বাদ রেখে পরের প্রশ্নে চলে যাওয়া ভালো, কারণ আগের প্রশ্নে আবার ফেরত আসার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সময়ের দিকে খেয়াল না রেখে একটি সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে পরের সহজ প্রশ্নগুলোও সময়ের অভাবে ভুল হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো Listening সেকশনে মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং দ্রুত মূল বিষয়গুলো নোট করে ফেলা, যাতে একটু পরেই উত্তর দেওয়ার সময় দরকারি কথাগুলো মনে করতে সমস্যা না হয়। টেস্ট সেন্টারে পাশের পরীক্ষার্থী যদি একই সময় Speaking সেকশনের পরীক্ষা দিতে থাকেন এবং শব্দের কারণে সমস্যা হয়, তবে উপস্থিত পরিদর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁকে অবহিত করতে হবে।
সূত্র: টোয়েফলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট www.ets.org/toefl