কৃষিশিক্ষা

সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর 
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ দেওয়া হলো কৃষিশিক্ষা বিষয় থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর।

# জনাব আমজাদ একজন অভিজ্ঞ কৃষক। তিনি লক্ষ করে আসছেন কৃষিতে তাঁর সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ে দূর হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তিনি বিজ্ঞানীদের অবদান উপলব্ধি করতে পারেন। তাই তিনি তাঁর ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তুলছেন। তবে তিনি কৃষি কর্মকর্তার কাছে শুনেছেন—তাঁর মতো অভিজ্ঞ কৃষকেরাও কৃষিতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে অবদান রাখতে পারেন।
ক. জিএম ফসল কী? ১
খ. ভিয়েতনামের জনগণের কাছে এ দেশের জনগণের অনেক কিছু শেখার আছে কেন? ২
গ. আমজাদ সাহেবের মতো লোকদের সমস্যা কীভাবে ক্রমান্বয়ে দূর হচ্ছে? বর্ণনা করো। ৩
ঘ. আমজাদ সাহেব তাঁর সমস্যা সমাধানে নিজে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন? ব্যাখ্যা করো। ৪
উত্তর: ক. জীব কৌশলের মাধ্যমে ফসলের জিনগত বিন্যাস পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রাপ্ত কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যের ফসলকে জিএম ফসল বা জেনিটিক্যালি মডিফাইড ক্রপ বলে।
উত্তর: খ. ভিয়েতনাম একটি কৃষিপ্রধান দেশ। বাংলাদেশের মতোই যুদ্ধে দেশটির ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু দেশটি তা কাটিয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের কৃষকসমাজ ও কৃষির অবদান বিরাট। বিশেষ করে বিশ্বের অন্যতম প্রধান চাল রপ্তানিকারক দেশ আজ ভিয়েতনাম। কৃষি প্রযুক্তি বিকাশে গত কয়েক বছরে এদের সাফল্য বিস্ময়কর। ভিয়েতনামের জনগণের কাছে এ দেশের জনগণের অনেক কিছু শেখার আছে।
উত্তর: গ. উদ্দীপকে আমজাদ সাহেব বাংলাদেশের কৃষকসমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন। এ দেশের কৃষকসমাজ নানা প্রাকৃতিক কারণে ও তাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতার কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত। তবে ক্রমান্বয়ে তাদের এসব সমস্যা সমাধান হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছেন।
i) সারা দেশে পুষ্টি সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা দেশকে ৩০টি অঞ্চলে ভাগ করেছেন। কোন অঞ্চলের মাটি কী রকম এসব বিষয় উদ্ভাবন কৃষিবিজ্ঞানীদের একটি চাঞ্চাল্যকর অবদান। পরিবেশ অঞ্চলের মাটির ধরন বিবেচনা করে ফসল ফলানোর জন্য কোন ফসলে কী মাত্রায় সার প্রয়োগ করা হবে তা কৃষকদের অনুমোদন দেওয়া হয়।
ii) সার ব্যবস্থাপনায় সুন্দর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী ফসলে যে মাত্রায় সার দেওয়া হয়েছে, কোন কোন সার নিঃশেষ হয়ে যায় না—এ অবস্থা বিবেচনা করে পরবর্তী ফসলের জন্য সারের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
iii) বন্যা, খরা, লবণাক্ততা বাংলাদেশের কৃষি সমস্যা। এ সমস্যা দূরীকরণের জন্য বিজ্ঞানীরা বেশ অগ্রসর হয়েছেন। যেমন বন্যার শেষে ধান চাষের জন্য বিলম্ব জাত হিসেবে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কিরন ও দিশারি নামে দুটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। সম্প্রতি বন্যাকবলিত এলাকার জন্য ব্রি ধান-৫১ ও জি ধান-৫২ নামে আরও দুটি জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। এ জাতের ধান দুটি পানির নিচে ১০-১৫ দিন টিকে থাকতে পারে।
iv) বন্যা যেমন কৃষকদের একটি বড় সমস্যা, খরা ও লবণাক্ততা আরও বড় সমস্যা। এ জন্য বিজ্ঞানীরা ব্রি-৫৬ নামের ধান উদ্ভাবন করেছেন। উপকূল অঞ্চলের লবণাক্ততার সমস্যা দূর করার জন্য জি ধান-৪৫ ও ব্রি ধান-৪৭ উদ্ভাবন করা হয়েছে।
এভাবে আমজাদ সাহেবের মতো লোকদের সমস্যা ক্রমান্বয়ে দূর হচ্ছে।
উত্তর: ঘ. আমজাদ সাহেব একজন কৃষক। তাঁর কৃষি ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে। বিজ্ঞানীদের অবদানে তিনি উপকৃত হয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ে দূর হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁরও যথেষ্ট করণীয় রয়েছে।
প্রথমত, তাঁকে সচেতন হতে হবে এবং চারপাশে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনের ভালো দিকগুলো তাঁকে গ্রহণ করতে হবে। তাহলে তিনি নতুন নতুন উদ্ভাবনের সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন না।
দ্বিতীয়ত, তিনি নিজেও উদ্ভাবনী ক্ষমতার পরিচয় দিতে পারেন। যেমন—অভিজ্ঞ কৃষকদের পর্যবেক্ষণ চয়ন ও নিরীক্ষণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও মৌসুম নির্ভরতা এড়াতে সক্ষম লাইন শনাক্ত ও উন্নয়ন করা যেতে পারে। এগুলো মাঠ পর্যায়ে টিকে গেলে নতুন জাত হিসেবে স্বীকৃতিও পেতে পারে। কৃষক পর্যায়ে আবিষ্কৃত এসব আগাম জাত, নাবি জাত মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফলে জনপ্রিয় কোনো কৃষিপণ্যের বাজারে দীর্ঘকাল লক্ষ করা যায়। এসব কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যয় খুব বেশি না হওয়ায় কৃষকদের মুনাফা বাড়ার ক্ষেত্রে বেশ অবদান রাখতে পারে।
অতএব আমজাদ সাহেব তাঁর সমস্যা সমাধানে নিজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

সিনিয়র শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ