'শঙ্খধ্বনি' থেকে 'শিকলবাহা'

>
কামার আহমাদ সাইমন
কামার আহমাদ সাইমন
কামার আহমাদ সাইমন–এর নির্মিতব্য ছবি শঙ্খধ্বনির নাম বদলে হচ্ছে শিকলবাহা। ছবির ইংরেজি নামটিও সাইলেন্স অব দ্য সিসেল থেকে বদলে আয়রন স্ট্রিম হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের (২০১৬) মর্যাদাপূর্ণ অনুদান পুরস্কার ‘ওয়ার্ল্ড সিনেমা ফান্ড’ জিতেছিল কামারের এই চিত্রনাট্য। জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানের জন্যও এ বছর এই চিত্রনাট্য নির্বাচিত হয়েছে। উল্লেখ্য, এই চিত্রনাট্যের জন্যই কান চলচ্চিত্র উৎসবের (২০১৪) লালগালিচায় উদীয়মান নির্মাতাদের আসর ‘লা ফ্যাব্রিক সিনেমা দু মুন্দে’ আমন্ত্রিত ১০ জন তরুণের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছিলেন কামার। তাঁর ছবির নাম পরিবর্তনের খবর পেয়েই আমাদের বিনোদন বিভাগ থেকে তাঁকে কিছু প্রশ্ন করা হয়। এর সব কটির জবাবই দিলেন কামার।

শুনেছি, নাম বদলে যাচ্ছে ‘শঙ্খধ্বনি’-এর। কেন?
আসলে অনেক দিন থেকেই নামটা নিয়ে ভাবছিলাম। কানে শঙ্খ চেপে ধরলে সাগরের যে গর্জন শোনা যায়, সেই রকম এক বন্ধুর দীর্ঘশ্বাস থেকে গল্পটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু লিখতে লিখতে গল্পটা কেমন যেন নিজের হয়ে উঠল, সেই থেকেই একটা দ্বিধা ছিল মনে। শুরু করতে গিয়ে লক্ষ করলাম, চারপাশে সিনেমায় ‘শঙ্খ’ নামের ছড়াছড়ি—শঙ্খধ্বনি, শঙ্খচিল, শঙ্খনাদ! তাই কাজ শুরুর প্রথমেই নামটা বদলে নিলাম।
‘শিকলবাহা’ কেন?
জ্য পল সাের্ত্র–এর উপন্যাস আয়রন ইন দ্য সোল-এর বাংলা অনুবাদ করেছিলেন সরদার ফজলুল করিম শিকল অন্তরে। ‘শিকলবাহা’ নামের একটা নদীর খোঁজে অনেক দিন আগে হারিয়ে যাওয়া দুই বন্ধুর অনিশ্চিত যাত্রাই আমার ছবি। লিখতে গিয়ে টের পেলাম, আমাদের সবার মনের গহিনে বহমান যে নদী, তার ভেতরেও একটা শিকল পরে আছে, সাের্ত্র–এর সেই শিকল! নিজে ছাড়া আর কেউ যার শব্দ শুনতে পায় না। তাই নাম বদলে দিলাম শিকলবাহা।
ছবির কাজ কবে শুরু হচ্ছে?
শুরুতেই আটকে আছি। ৩০ বছর বয়সী দুই তরুণ, আর এক তরুণী খুঁজছি অনেক দিন থেকে। গত মাসে শিল্পকলায় প্রায় ১৫টা থিয়েটার প্রযোজনা দেখেছেন আমার সহকর্মীরা! প্রযোজক সারা আফরীন দেখেছেন নাম না–জানা শত শত ফেসবুকের পাতা। কিন্তু যে চেহারাটা চাইছি, ঠিক সেই চেহারাটা পাচ্ছি না। অথচ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকেই চরিত্রগুলো লেখা। মাত্র ১০ বছর আগের একটা সময়, কিন্তু চেহারাগুলো আর দেখতে পাচ্ছি না! এত তাড়াতাড়ি সবাই কত বদলে গেলাম আমরা! অদ্ভুত লাগে!
পরিচিত কোন চেহারা...
সমস্যা হলো আমাদের এখানে পরিচিত চেহারার শিল্পী পাওয়া দুষ্কর। সবারই কমবেশি একটা স্টার লেবেল আছে। আমি স্টারের বিপক্ষে নই। বাণিজ্যের প্রয়োজনেই স্টার। উদ্দেশ্য বাণিজ্য হলে স্টারডামের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আমার ছবিটা একান্তই ব্যক্তিগত। ফার্মগেটে হাজারো মানুষের ভিড়ে একা একা সিএনজি খুঁজছে যেই মেয়েটা, শিকলবাহা সেই মেয়েটার গল্প! আত্মপরিচয়ের খোঁজে এই শহরে মাথা খুঁটছে যে ছেলেটা, এটা সেই ছেলেটার গল্প।
তাহলে কি সেই চেহারা পেলেই কাজ শুরু হবে?
নতুন বছরেই শুরু হবে ছবির কাজ। আমি এমনিতেই শম্বুকগতির মানুষ। শুনতে কি পাও বানিয়েছিলাম সাড়ে তিন বছর ধরে, ছবিই তুলেছিলাম প্রায় দুই বছর। একটা জীবন খুব ছোট, মাঝেমধ্যে খুব আফসোস হয়! প্রশান্ত মহাসাগরে ৪০০ বছর বেঁচে থাকে যে কচ্ছপ, তাদের খুব হিংসা হয়। ২০০৫ সালে এক বন্ধুর ফোন থেকে শুরু হয়েছিল গল্পটা, সেই থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছি ছবিটা মাথায় নিয়ে। ২০১১ সালে প্রথম স্ক্রিপ্ট ড্রাফট করি। তা ছাড়া শিকলবাহা ছবিটা চার দেশের কলাকুশলীর যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হবে। বাংলাদেশ ছাড়া জার্মানি, ফ্রান্স ও ভারত থেকে আমার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সিনেমা-প্রফেশনাল কাজ করবেন। যেমন কিরোস্তামির বেশির ভাগ ছবির প্রযোজক-পরিবেশক যে এমকেটু, তার সাবেক একুইজিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন ডিরেক্টর আমার একজন অনেক পুরোনো শুভাকাঙ্ক্ষী। মাটির ময়নায় তিনিই ছিলেন এমকেটু থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত, যদিও তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় তারেক মাসুদের চলে যাওয়ার অনেক পরে। তিনি কাজ করছেন আমার ফরাসি সহযোগী হিসেবে। এসব গোছাতে একটু সময় তো লাগেই। তাড়াহুড়ো করে ভুলভাল ছবি বানানোর চেয়ে আমি একটু সময় নিয়েই বানাতে চাই।