ধন্যবাদ ফেরদৌস ও পূর্ণিমা

ফেরদৌস ও পূর্ণিমা
ফেরদৌস ও পূর্ণিমা

প্রতিবছর ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয় বেশ আগে থেকেই। তারকা জরিপ কুপন ছাপানো, সমালোচক পুরস্কারের বিচারক কারা হবেন, কোথায় হবে এই অনুষ্ঠান—এ সবই ঠিকমতো হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যায় পড়তে হয় তখনই, যখন অনুষ্ঠানের মূল কান্ডারি বা উপস্থাপকের বিষয়টি সামনে আসে।
কে বা কারা হবেন উপস্থাপক, এই নিয়ে ভাবনাচিন্তার শেষ থাকে না অনুষ্ঠানসংশ্লিষ্ট প্রথম আলোর সবার। কারণ, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত দর্শকের বিশাল সমুদ্রে ভাসমান ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’-এর জাহাজটি ডুবে যেতে পারে, যদি এর নাবিক দক্ষ না হন। এ বছরও যখন উপস্থাপকের বিষয়টি নিয়ে বসা হয়, তখন অনেক নামের প্রস্তাব আসে। কোনোটাই জুতসই মনে হয় না। আমার দেওয়া দুটো প্রস্তাবের একটি ছিল ফেরদৌস ও পূর্ণিমা। ফেরদৌসের বিষয়ে সবার ধারণা থাকলেও পূর্ণিমার নামটি নিয়ে সবার প্রশ্ন, পূর্ণিমা কেন? তিনি কি কোনো দিন উপস্থাপনা করেছেন! তিনি কি ভালো কথা বলতে পারবেন? আমি বলি, উপস্থাপনা করেননি। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে পূর্ণিমা আর ফেরদৌস উপস্থাপনা করলে অনুষ্ঠান উতরে যাবে।
দুজনের বিষয়ে প্রথমে আনিসুল হক, পরে সম্পাদক মতিউর রহমানের সম্মতি পেয়ে ফেরদৌসকে প্রথম জানাই প্রস্তাবটি। পূর্ণিমার কথা শুনে ফেরদৌস বললেন, ‘বাহ্, ভালো চিন্তা করেছেন।’ তাঁর সম্মতিও পাই। এর পর ফোনে উপস্থাপনার বিষয়টি পূর্ণিমাকে জানাতেই তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বললেন, ‘কী বলেন, আমি তো কোনো দিন উপস্থাপনাই করিনি। আমাকে মাফ করেন। আমি পারব না।’ আমিও নাছোড়বান্দা। ছাই দিয়ে ধরার মতো। নানাভাবে তাঁকে বোঝালাম, ‘ফেরদৌসের সঙ্গে আপনার রসায়নটা ভালো। দুজন মঞ্চে দাঁড়ালে অনুষ্ঠান জমে যাবে।’ পূর্ণিমা বললেন, ‘আজ রাতটা ভাবতে দিন। কাল জানাই।’ বললাম, ‘ঠিক আছে।’ পরদিন আবার ফোন করি। ফেরদৌসও পূর্ণিমাকে ফোনে বোঝান। সিদ্ধান্ত হয় একসঙ্গে বসার। এক বিকেলে একটি পাঁচতারকা হোটেলের রুফটপে বসে চূড়ান্ত হয়ে যায় সবকিছু। এরপর বদলে যায় দৃশ্যপট।
পূর্ণিমাই প্রতিদিন ফোন করে নানা রকম পরিকল্পনার কথা বলেন। এটা করলে কেমন হয়, ওটা থাকলে ভালো হবে। আমিও তাঁর পরিকল্পনা শুনে মুগ্ধ। ফেরদৌসও কম যান না। তাঁর কাছ থেকেও আইডিয়া পাই। প্রায়ই মুঠোফোনে আমরা তিনজন কনফারেন্স করে উপস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে আইডিয়া চালাচালি করি। উপস্থাপনার একটি অংশে পূর্ণিমার শুটিং করা জরুরি। শুনে তিনি বললেন, ‘কোনো সমস্যা নেই, কবে করতে হবে, বলেন।’ তাঁকে নিয়ে যাই মাছরাঙা টেলিভিশনে। চারবার পোশাকবদল, সঙ্গে রূপসজ্জা। পাঁচ ঘণ্টা শুটিং। কোনো ক্লান্তি নেই। তাঁরা দুজন কী পোশাক পরবেন, কে হবেন ড্রেস ডিজাইনার—দুজনই একসঙ্গে বসে ঠিক করে নেন। একসঙ্গে পোশাক কিনতেও চলে যান। এরপর প্রায়ই ফোন করে দুজনই তাড়া দেন স্ক্রিপ্ট আগে দেওয়ার জন্য। বেশ কবার আমরা স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসি। সেখানেও তাঁদের হস্তক্ষেপে চলে পরিবর্তন, পরিবর্ধন। কারণ, অনুষ্ঠানটি ভালো করার জন্য দুজনই ভীষণ আন্তরিক।
সব পরিকল্পনা সম্পন্ন হলেও ভাবনায় আসে, উপস্থাপকের আগমনটা একটু জাঁকজমকপূর্ণ না হলে কি চলে। অনেক রকম পরিকল্পনা করি। কিন্তু কোনোটাই নতুন লাগে না। শেষে কোরিওগ্রাফার তানজিলের সঙ্গে বসে ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশনের পরিকল্পনা করি। ফেরদৌস আসবেন প্রথম, এরপর পূর্ণিমা। দুজনকে জানাই মিউজিকের সঙ্গে নাচের মহড়া করতে হবে। তাঁরা জানান, ‘কোনো সমস্যা নেই।’
অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা। হল অব ফেমে আসা দর্শক মঞ্চে আবিষ্কার করেন ফেরদৌসের সঙ্গে নতুন এক পূর্ণিমাকে। তাঁর রসবোধ আর ফেরদৌসের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা—দুজনের চমৎকার রসায়ন ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৬ অনুষ্ঠানটিকে নিয়ে যায় নতুন উচ্চতায়। নতুন সাফল্যে। অভিনন্দন ফেরদৌস-পূর্ণিমা। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা এ রকম একটি কঠিন কাজ সহজে সম্পন্ন করার জন্য।