রাজ্জাককে কেন্দ্র করে পরিচালক সমিতিতে হট্টগোল

রাজ্জাক
রাজ্জাক

দেশের সিনেমার গুণী অভিনয়শিল্পী নায়করাজ রাজ্জাককে কেন্দ্র করে এফডিসির পরিচালক সমিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। দুই পরিচালকের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও এফডিসিতে উপস্থিত অনেকে তেমনটাই বলেছেন।

দেশের চলচ্চিত্রে রাজ্জাকের কোনো অবদান নেই—পরিচালকদের আড্ডায় এমন মন্তব্য করে বিপাকে পড়ে যান চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। আজ দুপুরে এফডিসির পরিচালক সমিতি কার্যালয়ে রাজ্জাককে নিয়ে এমন মন্তব্য করায় ‘প্রেমের তাজমহল’খ্যাত নির্মাতা গাজী মাহবুব প্রতিবাদ করে বসেন।
খবরটি জানার পর যোগাযোগ করা হয় বদিউল আলম খোকন ও গাজী মাহবুবের সঙ্গে। প্রথম পর্যায়ে খোকনের কথা বলা সম্ভব হয়নি। গাজী মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আজও মহাসচিব সাহেবের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একটা সময় পর নায়করাজের ছেলেদের প্রসঙ্গ ওঠে। হঠাৎ করেই ওদের বাদ দিয়ে নায়করাজ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করে বসেন মহাসচিব। আমি প্রতিবাদ করি। বললাম, তিনি তো বাংলা সিনেমার জন্য কম করেননি। সাম্প্রতিক ইস্যুতে তিনি তো কোনো বিতর্কিত মন্তব্যও করেননি। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মহাসচিব সাহেব আমার ওপর চড়াও হন।’
কিছুক্ষণ পর বদিউল আলমের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা সম্ভব হয়। এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ফোনটা আকবর ভাইকে (মনতাজুর রহমান আকবর) দিচ্ছি, তিনি আপনাকে বুঝিয়ে বলবেন।’
আকবর বলেন, ‘এটা তেমন কিছুই নয়। এটা নিয়ে এমন কোনো কিছুই লেখার দরকারও নেই। পরে আমরা বিষয়টা ঠিকঠাক করে নেব।’
বিকেলে এফডিসি গেলে বদিউল আলমের সঙ্গে দেখা হয়। পরিচালক সমিতির সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করা হয়। দুপুরের প্রসঙ্গ তিনি এড়িয়ে যান। বোঝা গেল, এই বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন তিনি। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর খোকন বলেন, ‘এটা আমাদের নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করে ফেলব।’
শোনা গেছে, দুপুরের ঘটনা নিয়ে পরিচালক সমিতিতে গাজী মাহবুবকে ঢোকার ব্যাপারে নাকি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এমন প্রশ্নে বদিউল আলম বলেন, ‘উনি হয়তো ধারণা করছেন। এ রকম কিছু হলে তো আমাদের নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দিতাম।’
পুরো ব্যাপারটি নিয়ে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের সঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ‘গন্ডগোলের খবর শুনে আমি দ্রুত এফডিসিতে যাই। ঘটনার সময় উপস্থিত সব পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁরা জানিয়েছেন, চলচ্চিত্রে রাজ্জাক সাহেবের অবদান নেই—কথাটা সিরিয়াসলি বলেন নাই। এগুলো কথার পিঠে কথা। তাই এটাকে বড় করে দেখতে চাই না। আমি তাঁদের সবাইকে বলে দিয়েছি, রাজ্জাক সাহেবকে অসম্মান করার অধিকার কারও নেই। দেশের চলচ্চিত্রে তাঁর অবদানের কথা বলে কখনোই শেষ করা যাবে না।’
এদিকে খোকন ও গাজী মাহবুবের মধ্যে এ ঘটনার কারণে দ্রুত একটি সভা ডেকে উপস্থিত সবাইকে সতর্ক করে দেন গুলজার। স্পষ্টভাবে সবাইকে জানিয়ে দেন, রাজ্জাককে নিয়ে যেন ভবিষ্যতে কেউ কোনো অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য না করেন। তবে সবকিছুর জন্য রাজ্জাককে ফোন করে সবার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার কথা জানিয়েছেন গুলজার। তিনি বলেন, ‘আমি রাজ্জাক সাহেবকে ফোন করে বলেছি, যা ঘটেছে তার জন্য আমি দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।’
সপ্তাহখানেকের মধ্যে পরিচালক সমিতির সবাইকে নিয়ে আবার বসবেন গুলজার। তখন নিজেদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান।
খোকন ও গাজী মাহবুবের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার সময় উপস্থিত পরিচালকের মধ্যে ছিলেন শাহ আলম কিরণ, শাহীন সুমন, সাফিউদ্দিন সাফি, সাইমন তারিক, অপূর্ব রানা ও ফাইটার আরমান প্রমুখ।