সত্য ঘটনা নিয়ে ভূতের ছবি!

ভূতের গল্প কার না প্রিয়! ভয় পেয়ে আনন্দ পান প্রায় সবাই। লোডশেডিংয়ের সময় কিংবা বৃষ্টিভেজা নির্জন রাতে ভূতের গল্প দারুণ জমে। অনেকে গল্প শুনে নয়, ভূতের গল্পের ছবি দেখে বেশি মজা পান। ভয়ংকর কোনো দৃশ্যে অনুভব করেন একধরনের রোমাঞ্চ। ঘরের বাতি নিভিয়ে, বিছানায় কাঁথা-কম্বলের নিচে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আপনি যে ভৌতিক ছবিটি দেখছেন, তা যদি সত্য হয়! ভয়ের মাত্রা তাহলে নিশ্চয়ই অন্য মাত্রারই হবে। হলিউডে নাকি বেশ কয়েকটি ভৌতিক ছবি ‘সত্য ঘটনা’কে ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে। এমন ছবির তালিকায় চোখ বুলিয়ে একবার মিলিয়ে নিন তো, আপনার দেখা ছবিগুলোর তালিকায় এগুলো আছে কি না...

‘দ্য এক্সরসিস্ট’-এর দৃশ্য
‘দ্য এক্সরসিস্ট’-এর দৃশ্য

দ্য এক্সরসিস্ট (১৯৭৩)
‘দ্য এক্সরসিস্ট’ ছবিটি প্রথম ভৌতিক ছবি হিসেবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিল ১৯৭৪ সালে। উইলিয়াম পিটার ব্ল্যাটির লেখা উপন্যাস থেকে এই ছবির গল্প নেওয়া হয়েছে। ছবিতে যদিও একটি মেয়ের ওপর দুষ্ট আত্মা ভর করে। কিন্তু ব্ল্যাটির উপন্যাসটি ছিল একটি ছোট ছেলেকে নিয়ে। ঘটনাটা নাকি সত্য। ১৯৪৯ সালে রোল্যান্ড ডো নামের ওই ছেলেটির ওপর ‘পিশাচ’ ভর করলে তা তাড়ানোর জন্য ‘এক্সরসিজম’ বা খারাপ আত্মা তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই ঘটনার সাক্ষীদের নিয়েও বই লেখা হয়েছে।

‘চাইল্ড’স প্লে’র দৃশ্য
‘চাইল্ড’স প্লে’র দৃশ্য

চাইল্ড’স প্লে (১৯৮৮)
পুতুলের মধ্যে মৃত মানুষের আত্মা ঢুকে যাওয়ার গল্প নতুন নয়। কিন্তু এই গল্পকে পর্দায় রূপ দিয়েছে ‘চাইল্ডস প্লে’ ছবিটি। সত্য ঘটনার অবলম্বনেই এই ছবিটি তৈরি হয়। রবার্ট ইউজিন অটো নামের এক চিত্রশিল্পী ও লেখকের একটি পুতুলকে এই ছবিতে অভিশপ্ত বলা হয়। সেই পুতুল এখন আছে যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট মার্টেলো জাদুঘরে। এই পুতুলকে কেন্দ্র করে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছিল কাহিনিতে অবশ্য বেশ কিছু পরিবর্তন এনেই।

‘দ্য কনজুরিং’ ছবির দৃশ্য
‘দ্য কনজুরিং’ ছবির দৃশ্য

দ্য কনজুরিং (২০১৩), দ্য কনজুরিং-২ (২০১৬)
এড ও লরেন ওয়ারেন দম্পতি বাস্তবে অনেক ভৌতিক সমস্যার সমাধান করেছেন। তাঁদের সেই কেসগুলো নিয়ে তৈরি হওয়া ছবির মধ্যে ‘দ্য কনজুরিং’ সিরিজ অন্যতম। ‘দ্য কনজুরিং’ ছবিতে ওয়ারেন দম্পতি ভৌতিক সমস্যায় আক্রান্ত একটি পরিবারকে সাহায্য করেন। বাস্তবে ওয়ারেন দম্পতি সে ধরনেরই একটি ঘটনা সমাধান করেছিলেন ১৯৭১ সালে। ‘কনজুরিং-২’ ছবিটিও তৈরি হয়েছে ইংল্যান্ডের একটি ভৌতিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে। ওয়ারেন দম্পতি ১৯৭৭ সালে ইংল্যান্ডে গিয়ে এই ভৌতিক সমস্যাটির সমাধান করেছিলেন।

‘দ্য কনজুরিং ২’ ছবির দৃশ্য
‘দ্য কনজুরিং ২’ ছবির দৃশ্য
‘দ্য রাইট’ ছবির দৃশ্য
‘দ্য রাইট’ ছবির দৃশ্য

দ্য রাইট (২০১১)
ফাদার গ্যারি থমাস যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এক্সরসিস্টদের একজন। দুষ্ট আত্মা তাড়ানোর ব্যাপারে তাঁর অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় ‘দ্য রাইট’ ছবিটি নির্মিত হয়েছে। ছবিটি এতটাই ভয়ের যে এটি একা একা দেখা বোধহয় উচিত হবে না কারোরই।

‘দ্য হন্টিং ইন কানেকটিকাট’ ছবির দৃশ্য
‘দ্য হন্টিং ইন কানেকটিকাট’ ছবির দৃশ্য

দ্য হন্টিং ইন কানেকটিকাট (২০০৯), ঘোস্ট অব জর্জিয়া (২০১৩)
নতুন বাড়িতে উঠে আসা এক পরিবার যেসব ভৌতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়, তাই নিয়েই এই ছবি। বাড়ির ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলেই মূলত এই ভৌতিক ব্যাপার-স্যাপারগুলো টের পায়। পরে বাড়ির দেয়াল ভেঙে পাওয়া যায় বেশ কিছু মৃতদেহ। ১৯৮৬ সালের এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয় ‘দ্য হন্টিং ইন কানেকটিকাট’। তবে অনেকে দাবি করেন, ঘটনাটি সত্য নয়। এর সিক্যুয়েল ‘দ্য হন্টিং ইন কানেকটিকাট: ঘোস্ট অব জর্জিয়া’ তৈরি হয় ১৯৯৩ সালের একটি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। এই গল্পটিও নতুন বাড়িতে উঠে আসা একটি পরিবারকে নিয়ে।

‘দ্য হন্টিং ইন কানেকটিকাট: দ্য ঘোস্ট অব জর্জিয়া’ ছবির দৃশ্য
‘দ্য হন্টিং ইন কানেকটিকাট: দ্য ঘোস্ট অব জর্জিয়া’ ছবির দৃশ্য
‘দ্য এনটিটি’-এর দৃশ্য
‘দ্য এনটিটি’-এর দৃশ্য

দ্য এনটিটি (১৯৮২)
১৯৭৪ সালে কেরি গেনর ও বেরি টাফ নামের দুই ব্যক্তি যেখানে কাজ করতেন, সেখানে তাঁরা কিছু অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করতেন। যেমন কোনো জিনিসের হঠাৎ সরে যাওয়া। ওই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে ‘দ্য এনটিটি’।

‘দ্য এক্সরসিজম অব এমিলি রোজ’-এর দৃশ্য
‘দ্য এক্সরসিজম অব এমিলি রোজ’-এর দৃশ্য

দ্য এক্সরসিজম অব এমিলি রোজ (২০০৫)
অ্যানালিসা মিশেল নামের এক জার্মান তরুণীর ওপর ‘পিশাচ’ ভর করলে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই ‘পিশাচ’ তাড়াতে লেগে যায় প্রায় বছর খানেক। কিন্তু সেই তরুণী মারা যান ১৯৭৬ সালে, মাত্র ২৩ বছর বয়সে। তাঁর এই ঘটনার ওপর কিছুটা ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয় ‘দ্য এক্সরসিজম অব এমিলি রোজ’ ছবিটি।

‘দ্য পসেশন’ ছবির দৃশ্য
‘দ্য পসেশন’ ছবির দৃশ্য

দ্য পসেশন (২০১২)
‘ডিবুক’ বাক্স চেনেন? যে বাক্সে মদের বোতল নিরাপদে রাখা হয়। কিন্তু এক অভিশপ্ত ডিবুক বাক্সে লুকানো এক প্রেতাত্মার কাহিনি লিখেছিলেন কেভিন ম্যানিস। সেই গল্পটি থেকে তৈরি হয়েছে ‘দ্য পসেশন’ ছবিটি। কেভিন ম্যানিস নিজেই ওই বাক্সের প্রথম ব্যবহারকারী। এরপর তিনি সেটা নিলামে বিক্রি করে দেন।

‘সাইলেন্ট হাউস’-এর দৃশ্য
‘সাইলেন্ট হাউস’-এর দৃশ্য

সাইলেন্ট হাউস (২০১১)
১৯৪০ সালে উরুগুয়ের এক গ্রামে ঘটে যাওয়া এক ভৌতিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে ‘সাইলেন্ট হাউস’। উরুগুয়ের ছবি ‘লা কাসা মুদা’র রিমেক এটি। এক তরুণীর নিজের বাড়িতে আটকে যাওয়া এবং বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারার গল্প নিয়েই এই ছবি। অতিপ্রাকৃত শক্তি তাকে আটকে রাখে সেই বাড়িতে। এই ছবিতে নাকি সত্যিকারের ফুটেজও ব্যবহার করা হয়েছে।

‘অ্যানাবেল’ ছবির দৃশ্য
‘অ্যানাবেল’ ছবির দৃশ্য

অ্যানাবেল (২০১৪)
ওয়ারেন দম্পতির সমাধান করা আরেক কেস নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘অ্যানাবেল’ ছবিটি। এটির গল্পও সেই অভিশপ্ত পুতুল নিয়ে। সন্তানসম্ভবা স্ত্রী তাঁর স্বামীর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন পুতুলটি। পাশের বাড়ির অ্যানাবেল নামের একটি মেয়ের আত্মা ঢুকে পড়ে সেই পুতুলের মধ্যে! এরপর থেকেই পুতুলটি অভিশপ্ত। ঘটনাটা ১৯৬৯ সালের। পুতুলটি এখন আছে ওয়ারেন দম্পতির জাদুঘরে, একটা কাচের বাক্সে বন্দী। বলা হয়, জাদুঘরে গিয়ে যারা এই অ্যানাবেল নামের পুতুলটিকে নিয়ে উপহাস করেছে, তারা হয় দুর্ঘটনায় পড়েছে, নয়তো তাদের মৃত্যু হয়েছে মর্মান্তিকভাবে। সূত্র: স্কুপহুপ