আয়লানরা মরে না

সাগরতীরে পড়ে আছে আয়লানের দেহ। কিছুক্ষণ পরেই উঠে দাঁড়াল। সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে ছোটাছুটি করল। বালুর মধ্যে বসে খেলায় মেতে উঠল। শিল্পী হারুন-অর-রশীদের আয়লান কুর্দি এমনই। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ২২তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে ‘আয়লান কুর্দি স্মরণে’ শিল্পকর্মে আয়লানকে শিল্পী রেখেছেন জীবিত।

হিংসা, বিদ্বেষ আর স্বার্থের নেশায় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে ওঠে পৃথিবী। তাতে ক্ষতির শিকার হয় সাধারণ জীবন। পরিস্থিতির নির্মম বলি হয় শিশুরা। শিশুরা আয়লানের মতো পড়ে থাকে নিথর। কিন্তু শিল্পীসত্তা তা মেনে নেয় না। তাদের শিল্পে আয়লানরা সাগরতীরে নিথর হয়ে পড়ে থাকে না। তারা ছোটাছুটি করে, খেলায় মেতে ওঠে বন্ধুর সঙ্গে। শিল্পী হারুন-অর-রশীদ শিল্পকর্ম পরিচিতিতে তাঁর অনুভূতির কথা লিখেছেন এমনভাবে, ‘আয়লানের এই বয়সে সমুদ্রতীরে কাগজের নৌকা বা বালু দিয়ে ঘর বানানোর খেলায় মত্ত থাকার কথা। কিন্তু সাগরপাড়ে তার এ কী নিদারুণ বাস্তবতার ছবি দেখলাম আমরা। সহ্য করা কঠিন।’

‘আয়লান কুর্দি স্মরণে’ শিল্পকর্ম। শিল্পী হারুন-অর-রশীদ।
‘আয়লান কুর্দি স্মরণে’ শিল্পকর্ম। শিল্পী হারুন-অর-রশীদ।

গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে এক কুর্দি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল তুরস্কে। তুরস্ক থেকে নৌকায় চেপে গ্রিস যাওয়ার চেষ্টা করার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় সে পরিবার। নৌকা ডুবে গেলে হাত ফসকেই সাগরের ঢেউয়ে তলিয়ে যায় পরিবারের দুই ছেলে—তিন বছর বয়সী আয়লান আর পাঁচ বছর বয়সী গালিব। ভূমধ্যসাগর কেড়ে নিয়েছে তাদের মা রেহানাকেও। বেঁচে ছিলেন কেবল বাবা আবদুল্লাহ কুর্দি। তুরস্কের সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকা আয়লানের ছোট নিথর দেহের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বড় ধরনের ঝাঁকুনি খায় অভিবাসী-সংকট নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ইউরোপ। ঘুম ভাঙে বিশ্ববাসীরও।

সেই আয়লান কুর্দি কি শুধু সিরিয়ার শিশু? না, সে হয়ে ওঠে বিশ্বজনীন। শিল্পী লিখলেন, ‘আমাদের যমজ দুটি ছেলে আছে, যারা আয়লানের বয়সী অর্থাৎ তিন বছর। খবরের পাতায় যখন ছবিটি দেখলাম, মনে হলো আমার একটা বাচ্চাই সাগরপাড়ে নিথর পড়ে আছে।’

এমন সব চমৎকার শিল্পকর্ম দিয়ে প্রদর্শনী চলছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায়। ২২তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে তিন শরও বেশি শিল্পীর প্রায় চার শ শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। চলবে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। দেখা যাবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। যে-কেউ চিত্রশালায় গিয়ে দেখে আসতে পারেন জীবিত আয়লনাকে।