আমদানি করা ছবি ব্যর্থ!

সবশেষ আমদানি করা ভারতীয় বাংলা ছবি পোস্তর দৃশ্য
সবশেষ আমদানি করা ভারতীয় বাংলা ছবি পোস্তর দৃশ্য

আগে বিচ্ছিন্নভাবে রপ্তানির বিপরীতে ভারতীয় হিন্দি, বাংলা ছবি এ দেশে আমদানি করা হতো। ২০১০ সালের পর নিয়মিতভাবেই ভারতীয় বাংলা ছবি আমদানি করে এখানকার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আদৌ কি সেই সব ছবি দর্শক-গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে? জানা গেছে, দু-একটি ছাড়া বেশির ভাগ ছবিই ফ্লপের তালিকায়। বিস্তারিত লিখেছেন শফিক আল মামুন 

আমদানি-রপ্তানি নীতিমালায় ভারত থেকে আমদানি করা বাংলা ছবির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের শিল্পী, কলাকুশলী, প্রযোজক-পরিচালকদের কম আন্দোলন হয়নি। কিন্তু ভারতীয় ছবির আমদানি বন্ধ করা যায়নি। তবে আমদানি করা ছবি এলেও বাংলাদেশে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে এবং হচ্ছে।
আমদানিকারকেরা বলছেন, ২০১০ সালের পর যতগুলো ছবি বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে দু-একটি ছাড়া সব ছবিই মুক্তির দুই-তিন দিনের মাথাতেই প্রেক্ষাগৃহে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
বেশ কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের হিসাব মতে, গত সাত বছরে এই নীতিমালায় ভারত থেকে ২টি হিন্দিসহ প্রায় ১৫টি বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে এখানে।
তার মধ্যে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইন উইন এন্টারপ্রাইজ হিন্দি ছবি ওয়ান্টেড, ডন ২-সহ বাংলা ছবি জোর, বদলা, সংগ্রাম, খান ব্রাদার্সের খোকা বাবু, খোকা ৪২০, বেপরোয়া, যুদ্ধশিশু, অভিমান, ইস্ট এশিয়াটিকের বেলা শেষে, আরাধনা এন্টারপ্রাইজের হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা, ওয়ান, কেলোর কীর্তি ও তিতাশ কথাচিত্রের তোমাকে চাই ইত্যাদি। খান ব্রাদার্সের ব্যানারে আমদানির অপেক্ষায় আছে বিসর্জনসহ বেশ কয়েকটি ছবি।
আমদানিকারকদের দেওয়া তথ্যমতে, জিৎ অভিনীত একমাত্র জোর ছবিটি এখানকার দর্শকেরা মোটামুটি গ্রহণ করলেও বাকি কোনো ছবিই সেভাবে দর্শক টানতে পারেনি।
সবশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর আমদানি করা কলকাতার পোস্ত ছবিটি এ দেশের বড় বড় ২৫টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। প্রথম দিন ভালো গেলেও মুক্তির দ্বিতীয় দিন থেকেই দর্শক টানতে ব্যর্থ হয় ছবিটি।
আমদানিকারকদের কেউ কেউ বলছেন, কিছু জটিলতার কারণে বাংলাদেশে ছবিগুলো আনতে সময় লাগছে। ফলে এখানে মুক্তির আগেই ভারতে ছবিগুলো পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আসার পর পাইরেটেড এই ছবি এখানকার দর্শকেরা হলে গিয়ে দেখার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে ছবিগুলো ব্যবসাসফল হচ্ছে না।
এদিকে পাইরেসি হওয়ার আগেই সঠিক সময়ে ছবিগুলো আমদানি করতে না পারার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করলেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইন উইন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার ইফতেখারুদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক কাজ সেরে ছবি আনতে মাসখানেক সময় লাগছে। তত দিনে এসব ছবির ভারতে মুক্তির বয়স হয়ে যাচ্ছে ২ থেকে ৩ মাস। এই লম্বা সময়ের ফাঁকে পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে ছবি।
ছবি আমদানির সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রযোজক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া। তিনি বলেন, যে ছবিটি আমদানি করা হচ্ছে, ভারতের মুক্তির প্রথম দিনই যদি এখানেও ছবিটি মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া করা হয়, তাহলে আমদানি করা ছবিগুলো ব্যবসাসফল হতে পারে। তা ছাড়া সম্ভব নয়।
এই সব ছবি দর্শক টানতে ব্যর্থ—এ প্রসঙ্গে ভিন্ন মত দিলেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি বলেন, ‘এই সব ছবিতে আমাদের দেশের গল্প নেই, শিল্পী নেই। তা ছাড়া ছবিগুলোতে ওই দেশের ধর্মীয় বিষয়গুলোর প্রাধান্য থাকে, তাই এ দেশীয় দর্শকদের ওই সব ছবিতে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।’
এদিকে এসব ছবির আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে ভারতের কলকাতা থেকে ছেঁটে ফিল্মস, এসকে মুভিজসহ বেশ কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও জড়িত।
বাংলাদেশের আমদানি করা ছবিগুলো ব্যবসাসফল না হওয়া প্রসঙ্গে এসকে মুভিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রযোজক অশোক ধানুকা কলকাতা থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘পাইরেসি বড় কথা নয়। ছবি ভালো হলে প্রেক্ষাগৃহে চলবে, না হলে নয়। তা কলকাতা হোক আর বাংলাদেশেই হোক।’