নাট্যকার ও নির্মাতাদের ইংরেজি নামপ্রীতি দুর্ভাগ্যজনক

বেস্ট কাপল টেলিছবির দৃশ্য
বেস্ট কাপল টেলিছবির দৃশ্য

আমাদের শিল্প-সাহিত্যজগতে গল্প, উপন্যাস, এমনকি মঞ্চনাটকেও কোথাও ইংরেজি নামের তেমন প্রচলন চোখে পড়ে না, অথচ টিভি নাটকে ও টেলিছবিতে নাট্যকার ও নির্মাতাদের ইংরেজি নামের প্রতি এত দুর্বলতার কারণ কী, সেটা দর্শকদের কাছে এখনো বোধগম্য নয়। কথাটি আমরা আগেও লিখেছি, আবারও লিখতে হলো। কারণটা বলছি।

বৃহস্পতিবার রাতে দুটি চ্যানেলে প্রচারিত হলো দুটি টেলিছবি বেস্ট কাপলব্রেকআপ এক্সক্লুসিভ-৩। বাংলা ছবি, বাংলা সংলাপ, বাঙালি অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং বাঙালি দর্শকের জন্য নির্মিত, তাহলে এমন নামের প্রয়োজন হলো কেন, বিষয়টি বোধের অগম্য। আমাদের এবারের আলোচনা আমরা শুরু করব এ দুটি টেলিছবি দিয়েই।

৫ অক্টোবর রাত ১১টায় মেহেদী হাসানের রচনা ও পরিচালনায় এটিএন বাংলায় প্রচারিত হলো টেলিছবি ব্রেকআপ এক্সক্লুসিভ-৩। টেলিছবিটির গল্প সংক্ষেপে এ রকম: অনেক চেষ্টা করে মৌসুমীর ভালোবাসা পান অপূর্ব। আবার ঠুনকো কারণে, অর্থাৎ মৌসুমীর বাবার এক কথায় তিনি সব ফেলে মৌসুমীর জীবন থেকে দূরে সরে যান। এদিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অপূর্বকে ছায়ার মতো আগলে রাখেন তাঁর বান্ধবী শখ। এর মাঝে মৌসুমীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। তাঁর বাচ্চা হয়। বাচ্চা বড় হয়। তারপর তিনি জানতে পারেন, তাঁর বাবার দোষেই অপূর্বর সঙ্গে তাঁর এ বিচ্ছেদ। তখন তিনি বান্ধবী শখকে অনুরোধ করেন অপূর্বর দায়িত্ব নিতে। আর এভাবেই শেষ হয়ে যায় ব্রেকআপ এক্সক্লুসিভ-৩

এককথায় বলা যায়, অনেক গোঁজামিল আর অযৌক্তিক ঘটনায় বিন্যস্ত টেলিছবিটির গল্প। এত সাধনায় যে প্রেম, অথচ বাবা কী বলল আর সঙ্গে সঙ্গে সব ফেলে চিরদিনের জন্য উধাও। এমনকি মৌসুমীর সঙ্গে একবার কথা বলারও দরকার হলো না। বিষয়টি অবাস্তব। আবার ডিজিটাল প্রযুক্তির এ যুগে মৌসুমী তাঁকে পেলেনই না, তিনি অন্যত্র বিয়ে করে মেয়ের মা হয়ে গেলেন। মেয়ে বড় হয়ে গেল। অথচ অপূর্ব, শখ—তাঁরা রয়ে গেলেন তেমনই। শখের চরিত্রটি তো মনে হয়েছে প্রথম থেকেই করুণার জন্য অপেক্ষা করে আছে এবং শেষে হলোও তাই। শেষে শখের সঙ্গে অপূর্বর মিলনটি হয়েছে খুবই গতানুগতিক ও দুর্বল। আর পাত্র-পাত্রীর কথা বললে, মৌসুমীকে শখ ও অপূর্ব—কারও সঙ্গেই মানানসই মনে হয়নি। বরং বলা যায়, শেষে সাত-আট বছরের মেয়ের মায়ের চরিত্রেই তাঁকে বেশ মানিয়েছে।

দ্বিতীয় টেলিছবিটির নাম বেস্ট কাপল। প্রচারিত হয় মাছরাঙা টিভিতে ৫ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। পরিচালক বি ইউ শুভ। ছবির গল্প, ‘বেস্ট কাপল’ প্রতিযোগিতার ফাইনালে উন্নীত দুই দম্পতিকে নিয়ে। দুই নবদম্পতিকে নেওয়া হয়েছে একটি নির্জন রিসোর্ট। সেখানে এক দম্পতি অপূর্ব ও সারিকা। আরেক দম্পতি সুজানা ও তাঁর সহযোগী। রিসোর্টে তাঁদের হাঁটাচলা, কথা বলা, খাওয়াদাওয়া, পোশাক-আশাক সবকিছু পর্যবেক্ষণ এবং মাঝেমধ্যে দু-একটি খেলা, এই হলো প্রতিযোগিতা। একমাত্র বিচারক ও পর্যবেক্ষক মারজুক রাসেল। প্রতিযোগিতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ পায় দম্পতিদের ভেতরের ও বাইরের রূপ। তাঁরা উভয়েই বুঝতে পারেন, খেলার চেয়ে সম্পর্ক অনেক মূল্যবান। একসময় অবচেতনেই তাঁদের পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একসময় তাঁরা প্রতিযোগিতার আগ্রহই হারিয়ে ফেলেন। শেষে বিচারক দুই দলকেই যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করেন।

বিষয় হিসেবে বলা যায়, টেলিছবির গল্পটি বেশ ভালো। গল্পের মধ্য দিয়ে যে বক্তব্যটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন নাট্যকার ও নির্মাতা, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তবে মান-অভিমান পর্বটি যেন ঠিক জমে ওঠেনি। মনে হয়েছে সাজানো ও কৃত্রিম। দম্পতিদের ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে চারজনই এমন অতি অভিনয় করেছেন, কখনো কখনো তা যেন কৌতুকের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যেটি পরিহার করতে পারলে ভালো হতো।

এবার আমরা আলোচনাটি শেষ করব সরাসরি প্রচারিত একটি গানের অনুষ্ঠান দিয়ে। ৫ অক্টোবর রাত ১১টা ৩০ মিনিটে এনটিভিতে প্রচারিত হলো সরাসরি গানের অনুষ্ঠান মিউজিক অ্যান রিদম। এ অনুষ্ঠানটিরও নামকরণ করা হয়েছে ইংরেজিতে। অথচ প্রচারিত সব কটি গানই বাংলা। অনুষ্ঠানে এবারের শিল্পী ছিলেন বেলাল খান।

শিল্পী বেলাল খান আমাদের গানের জগতে এখনো খুব সুপরিচিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত নন। তাঁর কণ্ঠ সাধারণ মানের। গিটার ড্রামস ও কিবোর্ডের নিচে তাঁর কণ্ঠ যেন মাঝেমধ্যে চাপা পড়ে গেছে। তাঁর গানের উপস্থাপনাও ছিল বেশ দুর্বল, অনেকটা পাড়ার স্টেজে গান করার মতো। যেমন অনুষ্ঠানের শেষ দুটি গানের কথাই যদি বলি, ‘দোজখে যাবি রে তুই মন’ ও ‘ঘুরে ঘুরে যা রে, হাওয়ায় ভেসে যা রে’, গান দুটি পরিবেশনের সময় তিনি নিজেই গানের ফাঁকে হুইহুই করে উঠেছেন, যা খুবই বেমানান মনে হয়েছে। সার্বিক বিচারে এমন আয়োজন এনটিভির মতো চ্যানেলে দর্শক মোটেই প্রত্যাশা করে না।