নারীরা কেন টুইটার বর্জন করছেন?

হার্ভি ওয়াইনস্টিন
হার্ভি ওয়াইনস্টিন

পুরো হলিউড সরগরম প্রভাবশালী প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে। হার্ভি ওয়াইনস্টিনের কাছে যৌন হয়রানির শিকারের কথা বলে টুইটারে টুইট করেছিলেন এক অভিনেত্রী। এরপরই তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় টুইটার। এরই প্রতিবাদে বিশ্ব জুড়ে অনেক নারী শুক্রবার একদিনের জন্য ঘোষণা দিয়ে নিজেরা টুইটার বর্জন করেন। ওই অভিনেত্রীর টুইটার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধের প্রতিবাদেই অনেকে এ কাজ করেন।

বিবিসি ও জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, হার্ভি ওয়াইনস্টিনের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা নিয়ে অভিনেত্রী রোজ ম্যাকগোয়ান টুইটারে একটি টুইট করেন। এরপরই সাময়িকভাবে তার অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয় টুইটার। এরই প্রতিবাদে বিশ্ব জুড়ে অনেক নারী শুক্রবার ঘোষণা দিয়ে একদিনের জন্য টুইটার বর্জন করেন। তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন ম্যাকগোয়ানের টুইটার অ্যাকাউন্ট সাময়িক বন্ধের প্রতিবাদ হিসেবে।

এ প্রচার প্রথম শুরু করে গুগলের সাবেক কর্মী এবং সফটওয়্যার প্রকৌশলী কেলি এলিস। তিনি টুইটারে হয়রানির শিকার হওয়ার দাবি করে টুইট করেন। তিনি আগের একটি উদাহরণ টেনে বলেন যে, তার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগের সত্ত্বেও টুইটার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুরু হয় #WomenBoycott হ্যাশট্যাগ ব্যবহার।

খুদেবার্তার সাইট টুইটার তাঁর অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেওয়ার পর অনেক নারী সংহতি জানিয়ে টুইটার ব্যবহার বন্ধ রাখেন। #WomenBoycott হ্যাশট্যাগটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক লাখ ৯০ হাজারের বেশি বার শেয়ার হয়েছে। যারা টুইটার ব্যবহার না করার ডাক দিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন বিখ্যাত অনেক তারকাও। এদের অনেকে কীভাবে টুইটারে নারী বিদ্বেষী মন্তব্য এবং হয়রানির শিকার হয়েছেন তার উল্লেখ করেছেন।

তবে অনেকে আবার বলছেন যে, এভাবে নারীদের টুইটার বর্জন করে আসলে কোনো লাভই হবে না। নারীদের বরং আরও বেশি করে টুইটারে সরব হওয়া দরকার এই প্রতিবাদ জানাতে।

টুইটার অবশ্য ম্যাকগোয়ানের অ্যাকাউন্ট বন্ধের ব্যাখ্যা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটার বলেছে, তিনি টুইটার অ্যাকাউন্টের শর্তাবলি ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে অনেকেরই অভিযোগ, হার্ভির মতো প্রভাবশালী লোকের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইট টুইটার রোজ ম্যাকগোয়ানের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিয়েছে।

অভিনেত্রী রোজ ম্যাকগোয়ানও টুইটারে হার্ভির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। ছবি: টুইটার
অভিনেত্রী রোজ ম্যাকগোয়ানও টুইটারে হার্ভির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। ছবি: টুইটার

হার্ভি হলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী সিনেমা প্রযোজকদের একজন। পাল্প ফিকশন, মালেনা, দ্য কিংস স্পিচ, শেক্সপিয়র ইন লাভ, মাই উইক উইথ মেরিলিন, গ্যাংস অব নিউইয়র্ক-এর মতো ছবিগুলোর প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিন। তিনি প্রভাবশালী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়াইনস্টিন কোম্পানির প্রধান ছিলেন। ছিলেন মিরাম্যাক্স ফিল্মসের প্রতিষ্ঠাতাও। এমন কোনো বড় হলিউড তারকা নেই, যিনি কাজ করেননি হার্ভির সঙ্গে। ৫ অক্টোবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও ১০ অক্টোবর দ্য নিউ ইয়র্কার পত্রিকা হার্ভির যৌন কেলেঙ্কারি বিষয়ে দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপে।

প্রতিবেদন দুটিতে হলিউডের প্রভাবশালী অভিনেত্রী থেকে শুরু করে উঠতি মডেল, এমনকি ওয়াইনস্টিন কোম্পানির নারী কর্মচারীরা পর্যন্ত হার্ভির যৌন নির্যাতন ও হয়রানির রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। প্রতিবেদন দুটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অভিনেত্রী মুখ খুলছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, গিনেথ প্যাল্ট্রো, অ্যাশলে জুড, কারা ডালাভিনেন, কেট বেকিনসেল, লি সিডু, হিথার গ্রাহাম। তাঁদের সবাইকে বিভিন্ন সময় অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন এই প্রযোজক। অভিনেত্রী রোজ ম্যাকগোয়ানও টুইটারে হার্ভির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন। এরই মধ্যে এই ব্যক্তির মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁকে তাঁরই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এফবিআই তদন্ত শুরু করেছে।