আমাদের ভাষা মানে দর্শকেরই ভাষা

‘মিউজিক এন রিদম’ অনুষ্ঠানে গাইছেন অবন্তি সিঁথি
‘মিউজিক এন রিদম’ অনুষ্ঠানে গাইছেন অবন্তি সিঁথি

ইদানীং কিছু কিছু টেলিছবি ফিচার ছবির আবহে নির্মাণ করছেন নির্মাতারা, যেটি আমাদের কাছে মোটেই নিন্দনীয় মনে হয় না। বরং বলব, এর মাধ্যমে এ ধারায় কিছুটা বৈচিত্র্য এসেছে। এমনই একটি টেলিছবি প্রচারিত হলো ২৬ অক্টোবর রাত ১১টায় এটিএন বাংলায়। টেলিছবিটির নাম অফিসার। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা, আরাভ খান। অভিনয়ে আমিন খান, চাঁদনি ও ফ্লোরা।

ছবিটির গল্প সংক্ষেপে এ রকম, স্ত্রী চাঁদনির সঙ্গে পুলিশ অফিসার আমিন খানের দূরত্বের সুযোগ নিয়ে অপহরণকারী তাঁদের একমাত্র মেয়ে ফ্লোরাকে স্কুল থেকে অপহরণ করে। এরপর স্ত্রী চাঁদনির করুণ আকুতি কান্নায় অস্থির হয়ে অফিসার হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন অপহরণকারীকে। অতঃপর নানা কৌশল অবলম্বন করে তিনি খুঁজে পান অপহরণকারীকে। শেষে গোলাগুলি ও হাতাহাতির পর অফিসার তাকে পরাস্ত ও বন্দী করেন। মেয়েকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেন মায়ের কোলে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, কাহিনিটি নিতান্তই গতানুগতিক এবং নির্মাণ ফিচার ছবির ক্ষুদ্র সংস্করণ। চিত্রনায়ক আমিন খানকে অফিসার চরিত্রে নির্বাচন করায় ছবিটি আরও বেশি ফিচার ছবির আবহ তৈরি করেছে। গোয়েন্দা ছবি যেমন হওয়া উচিত, নির্মাতা সেভাবেই চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনার চেষ্টা করেছেন এবং বলা যায়, অনেকটা সফলও হয়েছেন। তবে গল্পে কোনো অভিনবত্ব ছিল না। কিছু অসংগতিও দর্শকের দৃষ্টি এড়ায়নি। যেমন ছবির শেষে গাজীপুরের পথে অপহরণকারীকে ধাওয়া করে যেভাবে সমতল থেকে বহুতল ভবনের ছাদে গিয়ে ধরা হলো, সেখানে হঠাৎ আবির্ভূত হলো অপহৃত মেয়েটি। অপহরণকারী তাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। বিষয়টি ঠিক যুক্তিযুক্ত হয়ে ওঠেনি। তবু বলব, সস্তা, গতানুগতিক ও অরুচিকর প্রেমকাহিনি দেখানোর চেয়ে গোয়েন্দা টেলিছবি অফিসার দর্শকের কাছে বেশ উপভোগ্যই হয়েছে।

২৭ অক্টোবর রাত ১০টায় শৌর্য দীপ্ত সূর্যের পরিচালনায় একুশে টিভিতে প্রচারিত হলো এ সপ্তাহের নাটক কিছু আকাশ নীল নয়। অভিনয় করেছেন শখ, নিলয়, আল মামুন প্রমুখ।
কাহিনিটি এমন—বড় ভাই, বোন ও ভাবির সঙ্গে শখ বেড়াতে এসেছেন সমুদ্রপাড়ে। সেখানে হঠাৎ নিলয়কে দেখে তিনি ভয়ে আঁতকে ওঠেন। বিষয়টি সবাইকে বিস্মিত ও কৌতূহলী করে। তারপর ভাবি কারণ উদ্‌ঘাটনের জন্য পরদিন শখকে নিলয়ের মুখোমুখি করেন। এরপর দেখা যায়, শখ ধীরে ধীরে ভীতির পরিবর্তে নিলয়ের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ছেন। মাঝে একদিন ভাই-ভাবিরা সবাই শখকে রেখে অন্যত্র বেড়াতে গেলে হোটেলকক্ষে নিলয় সারা রাত জেগে ভীত শখকে পাহারা দেন। এ নিয়ে কথা হলে শখ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি নিলয়কেই বিয়ে করবেন। তারপর ভাই-ভাবিকে নিয়ে তিনি নিলয়ের সামনে উপস্থিত হলে জানা যায় নিলয় বিবাহিত। তিনি সবার সঙ্গে স্ত্রী নওশীনকে পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর তিনি শখের জন্য শুভকামনা জানিয়ে বলেন, এখন তিনি যেকোনো ছেলেকেই ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারবেন। এর পরের দৃশ্যেই দেখা যায়, সুন্দর একটি পরিবেশে একটি অপরিচিত ছেলে শখের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, শখ সে হাত ধরেন।

নাটকে একটি পরিপূর্ণ গল্প আছে। কিন্তু সে গল্পের নানা স্থানে নানা অসংগতির কারণে নিলয়কে নিয়ে শখের স্বপ্ন দেখাও যেমন দর্শককে কৌতূহলী করেনি, তেমনি শেষে তাঁর স্বপ্নভঙ্গও দর্শক-হৃদয়ে কোনো আঁচড় কাটেনি। সাগরপাড়ে শখ কেন নিলয়কে দেখে ভয় পেলেন, আবার পরে কেনই বা তাঁর প্রতি অনুরক্ত হলেন, নির্মাতা তাঁর যুক্তি তুলে ধরতে পারেননি। আবার তাঁদের দলে যে মেয়েটি সবচেয়ে ছোট ও ভিতু, তাকে একা রেখে ভাই-ভাবিরা অন্যত্র বেড়াতে গেলেন কীভাবে? এদিকে নিলয়ের বউ আছে, তাঁকে বেড়াতেও নিয়ে এসেছেন। তাঁকে কেন্দ্র করে এত ঘটনা ঘটছে, অথচ সেখানে কোথাও বউকে দেখানো হলো না কেন? এসবের কারণে পুরো বিষয়টিই মনে হয়েছে আরোপিত ও অযৌক্তিক।
ঘটনাটি বিশ্বাসযোগ্য ও বাস্তবসম্মত হলো কি না, এ নিয়ে নির্মাতার কোনো চেষ্টা ও সতর্কতা ছিল বলে মনে হয়নি। ফলে, নাটকে আমরা সাগরপাড়ের সুন্দর কিছু দৃশ্য দেখতে পেয়েছি, চটকদার কিছু সংলাপ শুনতে পেরেছি, মাঝেমধ্যে নাটকীয়তারও ছোঁয়া পেয়েছি, কিন্তু প্রকৃত নাটকটি খুঁজে পাইনি।

এবার আলোচনা শেষ করব সরাসরি প্রচারিত একটি গানের অনুষ্ঠান দিয়ে। ২৬ অক্টোবর রাত ১১টা ৩০ মিনিটে পারিহার উপস্থাপনায় এনটিভিতে প্রচারিত হলো সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘মিউজিক এন রিদম’। এতে শিল্পী ছিলেন অবন্তি সিঁথি।

অবন্তি রবীন্দ্রসংগীত থেকে শুরু করে সিনেমার গান, পূর্বসূরিদের জনপ্রিয় গান, লোকসংগীত এমন বিভিন্ন ধারার গান পরিবেশনের চেষ্টা করেছেন। যেমন আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের ‘ধীরে ধীরে যাও না সময়’ অথবা ‘ওই দূর, দূর-দূরান্তে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’। পাশাপাশি নিজের গান ‘নোনা জল বুকে ডাক দিয়ে যায়’ ইত্যাদি। সব গানই তিনি করেছেন ড্রামস, কিবোর্ড ও গিটারের সঙ্গে এবং করেছেন এত আন্তরিকতা ও দরদ দিয়ে, যা দর্শক-শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। যে কারণে প্রতিটি গানের শেষে এসেছে দর্শকদের উচ্ছ্বসিত টেলিফোন। এসেছে গানের অনুরোধ। দর্শক-শ্রোতা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানের সঙ্গে তাঁর শিস দিয়ে সুর তোলা, অপূর্ব! টেলিভিশনে সরাসরি গানের অনুষ্ঠানে গান নির্বাচন ও দর্শকের সামনে নিজেকে উপস্থাপন কেমন হওয়া উচিত, অবন্তি সিঁথি সে পরীক্ষায় বেশ ভালোভাবেই পাস করেছেন বলা যায়। তবে শ্রোতা হিসেবে একটি বিষয় আমাদের কাছে মনে হয়েছে, তিনি কিছুটা গলা চেপে গান করেছেন, ফলে গানের বাণী মাঝেমধ্যে অস্পষ্ট মনে হয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে তিনি সজাগ থাকবেন।

শেষে একটি কথা বলা খুব সংগত মনে করছি তা হলো, আমরা যে চোখ দিয়ে অনুষ্ঠান দেখি, তা দর্শকের চোখ; যে মন দিয়ে অনুভব করি, সেটা দর্শকের মন আর যে ভাষায় তা প্রকাশ করি, সেটা দর্শকেরই ভাষা। আমাদের এ পর্যবেক্ষণ, অনুধাবন ও ভাষা যদি কোনো শিল্পী ও নির্মাতা হৃদয় দিয়ে পাঠ করেন, তাহলে আশা করি তিনি দর্শকের হৃদয়টিই খুঁজে পাবেন। আর কেউ তা না করলে না-ও করতে পারেন, সে স্বাধীনতা তো একান্তই ব্যক্তিগত।