শাকিব-অপুর এক হওয়ার গল্প

একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও আব্রাম। ছবি: আশরাফুল আলম
একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও আব্রাম। ছবি: আশরাফুল আলম

চিত্রনায়িকা অপু তাঁর বিয়ে, সংসার ও সন্তান বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে জানাবেন, এমনটা শোনা যাচ্ছিল কয়েকদিন ধরেই। কিন্তু বোমা ফাটানোর একটা মোক্ষম ছুঁতো যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত রংবাজ সিনেমাটাই হলো সেই ছুঁতো। এ বছরের ১০ এপ্রিল, প্রথম আলোর বিনোদন পাতায় প্রকাশিত হলো ‘রংবাজ–এ শাকিবের নায়িকা বুবলি’ খবরটি। সেটা দেখেই অপু চূড়ান্তা সিদ্ধান্ত নিলেন। সেদিন সকালে তাঁর সঙ্গে কথা বলে তেমন একটা ইঙ্গিতই পেলাম। একটা সময় বাসা থেকে বেরও হলেন অপু। তখনও কেউ আঁচ করতে পারেনি কয়েকঘন্টা পর কী ঘটতে যাচ্ছে!

সময় তখন বিকেল চারটা। হঠাৎ অপু বিশ্বাসের মুখটা দেখা গেল একটা টেলিভিশন চ্যানেলের পর্দায়। সংবাদপত্রের ওপর নাখোশ হয়ে বিয়ে ও সন্তান নিয়ে মুখ খুলতে তিনি বেছে নিলেন টেলিভিশন চ্যানেল। দীর্ঘ ১০ মাস অন্তরালে থাকার পর সেদিনই প্রথম দেশের মানুষ তাঁর দেখা পেল। কথা বলার এক পর্যায়ে অপু জানালেন, শাকিবের সঙ্গে তাঁর বিয়ে, সন্তান আর সংসার নিয়ে নানান অজানা কথা। অপু যখন টেলিভিশনে কথা বলছিলেন, তখন সবাই হন্যে হয়ে খুঁজছিল শাকিব খানকে।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হয় শাকিবের সঙ্গে। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর শাকিব খান ফোন ধরলেন। জানালেন, তিনি রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে আছেন। শরীরচর্চা করছেন আর টেলিভিশনে অপুর কথা শুনছেন।

টেলিভিশন অনুষ্ঠানে সন্তানসহ অপুর উপস্থিতিতে শাকিব ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একটা পর্যায়ে তিনি বলে ওঠেন, সন্তানের দায়িত্ব নেবেন, অপুর নয়। ত্রিশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলা সেই আলাপে শাকিব অনেক কিছু বলেন। কথায় উঠে আসে এতদিন ধরে অস্বীকার করা বিয়ে, সংসার আর সন্তানের বিষয়আশয়। শাকিবের সঙ্গে কথা বলতে বলতে টেলিভিশনে শেষ হয় অপুর সরাসরি অনুষ্ঠান। তারপরই শাকিব–অপুর সম্পর্কে বাড়তে থাকে দুরত্ব।

আর তখন থেকেই শাকিব–অপুকে একসঙ্গে টেলিভিশনের পর্দায় কিংবা পত্রিকার পাতায় উপস্থিত করার জোর চেষ্টা চলছিল। কিন্তু কারো পক্ষে তা যখন সম্ভব হচ্ছিল না। তবে আলাদাভাবে দুজন কিন্তু টেলিভিশন আর পত্র–পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছিলেন। একটা পর্যায়ে তো একে–অপরের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ করে দিলেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যখন শাকিব ও অপুকে একসঙ্গে বসে আলাপের প্রস্তাব দিওয়া হলো, তখন শুরুতে বেশ গড়িমসি করলেন তাঁরা। শাকিব বললেন, অপুর সঙ্গে কথা বলুন। অপুর সঙ্গে কথা হওয়ার পর সিদ্ধান্ত হলো, ১৪ এপ্রিল দুজন একসঙ্গে বসবেন। এবার কোথায় বসবেন তা ঠিক করার পালা। আনিসুল হকের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করা হলো প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল বসা হবে।

এদিকে এরই মধ্যে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ১৩ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়েন শাকিব খান। ল্যাবএইড হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তিও হতে হলো সেখানে। আবারও শঙ্কা, তাহলে কি তাঁরা একসঙ্গে বসতে পারবেন? বাধ্য হয়ে কথা বলতে হলো পরিচালক শামীম আহমেদ রনির সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘চিকিৎসক শাকিব ভাইকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সকালে শরীর ভালো লাগলে অবশ্যই চলে আসবেন। আমাকে তেমনটাই জানিয়েছেন।’

১৪ এপ্রিল সকালে পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানাতে শাকিব খানকে ফোন করলাম। তিনি আশ্বস্ত করলেন ঠিক সময়ে সোনারগাঁও হোটেলে চলে আসবেন। অপুও তেমনটাই বললেন। সময় ঠিক হলো বিকেল তিনটা। এদিকে দুপুর থেকে শাকিবকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। অপুকেও পাচ্ছিলাম না। বাধ্য হয়ে আবার রনিকে ফোন করলাম। তিনি বললেন, ‘শাকিব ভাই চলে আসবেন।’

বিষয়টা আনিসুল হককে জানিয়ে রাখলাম। আমি তখন গলফ গার্ডেনে পয়লা বৈশাখের একটা অনুষ্ঠানে। এরই মধ্যে শাকিব খানের সঙ্গে আবার কথা হলো। তারপর অপুর সঙ্গে কথা বলে সোনারগাঁও হোটেলের দিকে ছুটলাম। আনিস ভাইও চলে এলেন। শাকিব, অপু ও তাঁদের সন্তানকে নিয়ে বসে একান্তে আলাপের জন্য হোটেলে বসার ব্যবস্থাও করা হলো। এরই মধ্যে চলে এলেন কবির বকুল।

নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও খবর নেই শাকিব–অপুর। একজন আসবেন নিকেতন থেকে আরেকজন ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে। দেড় ঘন্টা পর শাকিব এলেন। পারনে পাঞ্জাবি–পাজামা, হাতে ব্যান্ডেজ। অপু তখনো এসে পৌঁছাননি। ফোন করতেই বললেন, ‘এফডিসির সামনে আছি।’ পাঁচ মিনিটের মধ্যে হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ায় অপুর গাড়ি। সেদিন অপু পরেছিলেন সালোয়ার–কামিজ। বৈশাখী পাঞ্জাবি আর উত্তরীয়তে ঝলমলে ছিল তাঁদের শিশুপুত্র আব্রাম।

শাকিব ও অপু সারা দেশের আলোচিত দুই তারকা। পাঁচতারকা হোটেল থেকে শুরু করে গলির মোড়ের টং দোকান—একটাই আলোচনা—শাকিব–অপু কি এক হবে না? আর তাই তো বৈশাখের বিকেলে এমনভাবে হোটেল লবিতে তাঁদের একসঙ্গে দেখতে পেয়ে সবাই অবাক। কেউ ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাচ্ছে, কেউ বা দূর থেকে বলছেন, ‘ওই দেখ দেখ, শাকিব–অপু!’

অবশেষে বৈশাখের সেই অপুর্ব সন্ধ্যায় শাকিব আর অপু-ভক্তদের দুশ্চিন্তার অবসান। প্রথম আলোর মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরের পাঠকেরা জানতে পারলেন, এই দুই তারকা একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। সন্তানকে নিয়ে কাটিয়েছেন পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যাটা। ঘন্টাখানেক আড্ডার পর শাকিব চলে যান রংবাজ সিনেমার মহরতে আর অপু নিকেতনের বাসায়। যাওয়ার আগে এমন উদ্যোগের জন্য প্রথম আলোর কাছে তাঁদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দেশের সিনেমার পর্দা ও বাস্তবের এই জুটি।

শাকিব ও অপুর এক হওয়ার খবরটি দেশ ও দেশের বাইরে তাঁদের ভক্তকূলকে দারুণ খুশি করেছিল। তার প্রমাণ মেলে তাঁদের যুগল ছবি ও ভিডিও প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশের পর। মুহুর্তেই সন্তানসহ এই দুই জনপ্রিয় তারকার স্থিরচিত্র ভাইরাল হয়ে যায়। আর ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথম আলোর ইউটিউবে ভিডিওটি দেখা হয় কয়েক লাখবার। ২৮ অক্টোবর শনিবার পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ছয় মাসে ১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড ও ৮ মিনিট ২৪ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের দুটি ভিডিও দেখা হয়েছে ৩৯ লাখ ৫৪ হাজার ৫০২ বার!