পৃথিবীর সবাই একদিন আমাদের লোকগান গাইবে

গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তৃতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব। রাজধানীর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই উৎসব চলবে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রথম দিন সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের লোকসংগীতশিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন এবং তিব্বতের তেনজিন চোয়েগাল ও তাঁর দল। গতকালই তাঁরা কথা বললেন প্রথম আলোর সঙ্গে।

ফকির শাহাবুদ্দিন
ফকির শাহাবুদ্দিন


দেশের বাইরে বাংলা লোকসংগীতকে কীভাবে পৌঁছে দিচ্ছেন?
২০১১ সালে আলজেরিয়ায় সুফি সম্মেলনে গিয়েছিলাম, কিছুদিন আগে ইউনিসেফের ডাকে গিয়েছিলাম ফ্রান্সের সুফি সম্মেলনে। গত ২৮ তারিখে এসেছি মিসরের কায়রো থেকে। সেখানে ৫৫টি দেশ থেকে লোকশিল্পীরা এসেছিলেন। আমরা ২৫০ জন শিল্পী এক মঞ্চে গেয়েছি। সেখানকার স্লোগান ছিল ‘মিউজিক অব পিস ইন সুফিজম’। এই জায়গাগুলোতে যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে বাংলার লোকগানকে উপস্থাপন করেছি। তারাও খুশি হয়েছে। কারণ, আমাদের গানে একধরনের জজবা আছে। অন্য দেশের গানগুলোর ঘরানা খুব বেশি নেই। আমাদের দেশের গানে যে এত উন্মাদনা, তার কারণ, আমাদের লোকগানের ঘরানা অনেক। জারি, সারি, কীর্তন, মারফতি, মুর্শিদি...।

বাইরে এসব ঘরানা তুলে ধরা সম্ভব হয়?

না। বাংলাদেশ থেকে ওই জায়গাগুলোতে আমি যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু ১০ জন শিল্পী যেতে পারলে ১০টি ঘরানাকে তুলে ধরতে পারতাম। সময় কম থাকে, তবে আমি সাধ্যমতো আমার দেশকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।

কীভাবে কাটে আপনার জীবন?

আমার সময় কাটে একতারা হাতে। একতারা হাতে জিকির করি। মানুষের সাধনা করি, মানুষের মন পাওয়ার সাধনা করি। মানবকল্যাণের সুরের চর্চা করেই দিন যায়। আমি সাধারণ মানুষ। হেঁটে চলাফেরা করি, আমার গাড়ি নেই। হাঁটলে লোকজনের সঙ্গে দেখা হয়, তাঁরা সালাম দেন। গাড়িতে চড়লে তাঁদের থেকে একটা দূরত্ব তৈরি হতো।

শাহ আবদুল করিমের সঙ্গ পাওয়া এক পরম সৌভাগ্য আপনার জন্য, তাই না?

১৯৯১ সালে শাহ আবদুল করিমের এক নম্বর শিষ্য রুহি ঠাকুরের মাধ্যমে আমি তাঁকে পাই। তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি সঙ্গে ছিলাম। এটা অবশ্যই সৌভাগ্যের।

সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন?

বাকি জীবন লোকসংগীতের সঙ্গেই কাটাতে চাই। আমার কাজ সাধনা করা, মানুষের কল্যাণ কামনা করা; করে যাচ্ছি। কেউ যদি এ জন্য আমাকে ভালোবাসে, তার মানে সে দেশকে ভালোবাসবে। আমার চাওয়া, পৃথিবীর সবাই একদিন আমাদের লোকগান গাইবে।
তিন দশকের প্রাপ্তি কতটা?
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করেছি। অনেক কিছু ছেড়ে লোকগান করি। কিছু পাওয়ার আশায় না। এখনো গান করে টাকা নিতে পারি না। পাওয়ার জন্য গান করি না, এটা আমার আলু-পটোলের ব্যবসা না। দেশীয় সংস্কৃতির জন্য জীবন উৎসর্গ করলাম। সংস্কৃতি ঠিক থাকলে মানুষ ভালো থাকবে।
সাক্ষাৎকার: রাসেল মাহমুদ